পশুরহাটে ‘খাস আদায়ের’ নামে রাজস্ব লুটপাট
তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : পরানপুর পশুর হাট জেলার সর্ববৃহৎ পশুর হাট। এ হাটে ৫ শ’ থেকে ১ হাজার পশু ক্রয় বিক্রয় হয়। হাটটি গত দু’ বছর ইজারা দেওয়া হয়নি। দু’ বছর ধরে সরকারি ভাবে খাস কালেকশন করা হচ্ছে। খাস কালেকশনে হাটে কত পশু ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে তা উল্লেখ করা হয় না। গোজামিল দিয়ে খাস কালেকশনে আদায়ের কম টাকা ইউএনও অফিসে জমা দেওয়া হয়। এভাবেই গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল ইউনিয়নের পরানপুর পশুর হাটের খাস কালেকশনের টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। এতে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে হাটে উপস্থিত থেকে তার লোক দিয়ে খাস আদায়ের বিধান রয়েছে। কিন্তু সরকারি নিয়ম ভেঙ্গে খাস আদায় করা হচ্ছে পুরোনো ইজারাদার ও তার লোকজন দিয়ে। খাস আদায়ের নামমাত্র টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হচ্ছে। সিংহভাগ টাকা পকেটে ভরছে ইজারাদার সিন্ডিকেট।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে পরানপুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, ইজারা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বুলবুল, জুন্নু মিনা, মো. আলী মোল্যা ও তাদের লোকজন খাস কালেকশন করছেন। সেখানে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও তাঁর লোকজন কাউকে দেখাযায় নি। তবে হাটের মধ্যে একটি চায়ের দোকানের সামনে ভূমি কর্মকর্তা নাজমুল হাসানকে চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেছে।
গরুর ব্যাপারী ফরিদ শেখ (৫৭), রত্তন মোল্লা (৫৫) বলেন, সপ্তাহের প্রতি বুধবার পরাণপুরে পশুর হাট বসে। প্রতি হাটেকম পক্ষে ৫শ’ থেকে ১ হাজার গরু-ছাগল ক্রয়-বিক্রয় হয়। প্রতি পশু (গরু) ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে ৩ শ’ টাকা হারে খাস আদায় করা হয়। প্রতিহাটে ৩ লাখ টাকার বেশি খাস আদায় হয় বলে আমাদের বিশ^াস। এ বছর হাটের সরকারি ইজারা মূল্য ছিল ১ কোটি ৬৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।
পরানপুর বাজারের ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন বলেন, গত ১৪৩০ ও চলতি ১৪৩১ বাংলা সনে হাটটি ইজারা না নিয়ে কৌশলে খাস আদায় করছেন সাবেক ইজারাদার চক্র । তারা দরপত্র অনুযায়ী ইজারা না নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে ‘খাস আদায়ের’ নামে সরকারের রাজস্ব খাতের টাকা লুট পাট করছে। এছাড়া আদায়কৃত টাকার একটি অংশ প্রতিহাটে স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্য, স্থানীয় মোড়লদের পকেটে যাচ্ছে।
হাটে খাস আদায়কারী বুলবুল মিনা বলেন, ‘মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে আমরা খাস কালেকশন করছি। ইউএনও অফিসকে হাট প্রতি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে হাটে খাস কালেকশন করছি। প্রতি হাটে তহশিলদারের মাধ্যমে এ টাকা আমরা ইউএনও অফিসে জমা দেই। ’তার ভাষ্য মতে, এ পর্যন্ত ১৪৩১ সালে ৩৩ টি হাটে খাস কালেকশন হয়েছে। এতে ৫২ লাখ ৮০ হাজার টাকা আদায় হওয়ার কথা।
তবে ইউএনও অফিস থেকে তথ্য না দেওয়ায় সেখানে রাজস্ব খাতে কত টাকা জমা হয়েছে তা জানাযায় নি। তাই সরকারি কোষাগারে কত টাকা জমা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সর্বশেষ ১৪২৯ সালে হাটটি ২ কোটি ২৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছিল বলে কাশিয়ানী ইউএনও অফিস থেকে জানা গেছে।
এদিকে, খাস আদায়ের দায়িত্বে থাকা তারাইল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নাজমুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সপ্তাহে হাট থেকে ১ লাখ ১২ হাজার ৩২৫ টাকা খাস আদায় হয়েছে। শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে বাকি ১ লাখ ৭ হাজার টাকা ইউএনও অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে কত গুলো পশু ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। সরকারি নিয়ম মেনে শ্রমিক দিয়ে খাস আদায় করা হচ্ছে বলে দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।
খাস আদায় কমিটির সভাপতি ইউএনও ফারজানা জান্নাতের কাছে খাস আদায়ের তথ্য চাইলে তিনি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি শুনেছি একটি হাটে খাস আদায় করা হয়। তবে আমি নতুন এসেছি, বিষয়টি একটু জেনে-বুঝে নিই। তারপর বিস্তারিত তথ্য দিতে পারব।’
(টিবি/এসপি/নভেম্বর ৩০, ২০২৪)