৭২ ঘণ্টার মধ্যে আকাশ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ২
নীহার রঞ্জন কুন্ডু, ময়মনসিংহ : ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী থানার চাঞ্চল্যকর আকাশ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যার সাথে জড়িত ২ হত্যাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেসময় ছিনতাই হওয়া অটো উদ্ধার করা হয়।
গত ২৬ নভেম্বর রাতে কোতোয়ালী থানাধীন চর সিরতা সাকিনস্থ সরকারবাড়ী টেকের মাথা কালভার্ট (ব্রীজ) সংলগ্ন পাঁকা রাস্তার পূর্ব পাশে ধানী জমিতে একজন অজ্ঞাতনামা যুবকের গলাকাটা লাশ পড়ে থাকার সংবাদ পেয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ও ময়মনসিংহ জেলার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গমন করেন। পরবর্তীতে এলাকাবাসী ও মৃতের আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে মৃতের পরিচয় সনাক্ত করা হয়। মৃত আকাশ মিয়া (২০) কোতোয়ালী থানাধীন চর হাসাদিয়া এলাকার বাসিন্দা ও পেশায় একজন অটো চালক।
অজ্ঞাতনামা হত্যাকারীরা ধারালো অস্ত্র দ্বারা ভিকটিমকে জবাই করে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে তার অটো নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধাঁরালো অস্ত্র ও ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইলটি ঘটনাস্থল হতে আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। এই ঘটনাটি চর সিরতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ সমগ্র থানা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ সফিকুল ইসলামকে দায়িত্ব দিলে গোয়েন্দা পুলিশের একটি চৌকস দল পুলিশ সুপারের নির্দেশক্রমে ও দিক-নির্দেশনায় মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, আসামী গ্রেফতার ও চোরাই অটো উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। অতপর গতকাল শুক্রবার ভোরে ঢাকা মহানগরীর খিলগাঁও গার্লস স্কুলের পিছনের বস্তি থেকে হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী মোঃ রবিন মিয়া (১৯)-কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়, এবং তার দেয়া তথ্য মতে ভোরে হত্যাকাণ্ডের মূল আসামী মোঃ মিলন (২০)-কে খিলগাঁও এলাকার অপর একটি বস্তি থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানাধীন জামিরদিয়া মাস্টারবাড়ী এলাকার জনৈক সাগর মিয়ার গ্যারেজের সামনে থেকে চোরাই অটো উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় জানায় যে, ভিকটিম আকাশ ও তারা একই গ্রামের বাসিন্দা। আসামী মিলন ঢাকায় পোশাক শিল্পের শ্রমিক এবং আসামী রবিন চালের আড়তে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। ফেইসবুকে একটি মেয়ের সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে ভিকটিম আকাশ ও আসামী মিলনের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।এই সংক্রান্তে প্রায় দুই মাস আগে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এই বিরোধের জের ধরে আসামী মিলন ও রবিন ঢাকা থেকে আকাশ কে হত্যা ও তার অটো ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে বাড়িতে আসে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আসামি মিলন ভিকটিম আকাশ কে ফোন করে তার অটো নিয়ে আসতে বলে। পরবর্তীতে ভিকটিম আকাশ সন্ধ্যায় অটো নিয়ে আসামী মিলনের কাছে আসে। আসামী মিলন ও রবিন আকাশের অটোতে কোতোয়ালী থানাধীন পরানগঞ্জ ও বোররচরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরাফেরা করতে থাকে। এক পর্যায়ে একই তারিখ রাতে ঘটিকায় অটোর পিছনের সিট থেকে আসামী মিলন ভিকটিম আকাশের গলায় ধাঁরালো অস্ত্র দিয়ে সজোরে পোঁচ দেয় এবং ভিকটিমের মৃতদেহ অটো থেকে প্রথমে রাস্তায় ও পরে আসামী রবিনের সহযোগিতায় রাস্তার পার্শ্বে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে অটো নিয়ে চলে যায়।
পুলিশ সুপার সংবাদ সন্মেলনে এ সকল তথ্য জানান। অফিসার ইনচার্জ (ডিবি) সফিকুল ইসলাম জানান, অধিকতর তদন্ত চলছে, আসামিদের বিচারের জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রেরনের জন্য প্রস্ততি চলছে।
(এনআরকে/এসপি/নভেম্বর ৩০, ২০২৪)