স্টাফ রিপোর্টার : আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইসকনকে জঙ্গি সংগঠন তকমা দিয়ে বাংলাদেশে তাদের নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। আজ শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জুমার নামাজের পর আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি জানায় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটি।

সমাবেশে চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে তার খুনিদের শাস্তিরও দাবি জানানো হয়।

হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর শাখা এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল থেকেই মসজিদ এলাকা ঘিরে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায় পুলিশকে।

সমাবেশে ইসকনকে ব্যবহার করে ভারত এই দেশকে বিপথগামী করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী। তিনি বলেন, ইসকন হিন্দুদের কোনও সংগঠন নয়। এটি একটি জঙ্গি সংগঠন, তারা সন্ত্রাসী ও উগ্র। দেশকে বিপথগামী করার ভারতের এই অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভের ডাক দেন সনাতনী সাধু চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) মুখপাত্র ছিলেন তিনি।

সেই বিক্ষোভের সময় জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয় তার বিরুদ্ধে। তাতে তার ভক্তদের বিক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে। প্রায় এক মাস পর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফেরার পথে গ্রেপ্তার করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে।

তাকে কারাগারে পাঠানো হলে ঢাকায় বিক্ষোভে নামে হিন্দু সম্প্রদায়। বিক্ষোভ হয় চট্টগ্রামেও, একসময় যা গড়ায় সংঘর্ষে। সেই সংঘর্ষের পর আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। তারপর থেকে বিভিন্ন মহলে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি ওঠে।

ইসকনকে নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকারের মধ্যে কোনও আলোচনা হয়নি বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা বলেন, পলাতক শেখ হাসিনা ও ওবয়াদুল কদের ভারতে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার যড়যন্ত্র করছে। তারা ইসকনকে ব্যবহার করে আইনজীবী আলিফকে হত্যা করেছে। অবিলম্বে এই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী সংগঠনকে বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, ইসকন শুধু আইনজীবী আলিফকে হত্যা করেনি, চট্টগ্রামে মসজিদও ভাংচুর করেছে তারা। এরপর মুসলমানরা আর ঘরে বসে থাকতে পারে না।

আওয়ামী লীগ দেশ ছেড়ে পালালেও বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মাওলানা আফসার মাহমুদ।

তিনি বলেন, “সেই ষড়যন্ত্রের অন্যতম অংশ ইসকন। ইসকনের সন্ত্রাসীরা আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।”

আলিফ হত্যা ও ইসকনকে কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করে ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা আদনান বলেন, আপনারা এমন কিছু করবেন না যাতে তৌহিদি জনতা জেগে ওঠে। তারা জাগলে পালানোর পথ পাবেন না। আমরা কখনোই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে নই। কিন্তু আমাদের ভাইকে কেউ হত্যা করলে ঘরে বসে থাকব না।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, শেখ হাসিনাই ইসকনকে মাঠে নামিয়েছে। ইসকনের মাধ্যমে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ইসকনের বিরুদ্ধে বলা মানে হিন্দুদের বিরুদ্ধে বলা না। আমরা হিন্দুদের নিরপত্তা দেব, কিন্তু দেশে ইসকনের ঠাঁই হবে না। ইসকনকে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করে ছাড়ব।

আওয়ামী লীগ টাকা খরচ করে দেশে দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী।

তিনি বলেন, একজন মুসলিম আইনজীবীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ইসকন চাইছে আমরা যেন আইন হাতে তুলে নিই। কিন্তু তা হবে না। আমরা সরকারের কাছে এর বিচার চাই।

হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নগ্ন হস্তক্ষেপ করে ভারত। বাংলাদেশ বিষয় তাদের নীতি পরিবর্তন করতে হবে। না হলে ২০ কোটি মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে। ইসকনকে নিষিদ্ধের মধ্যে দিয়ে ভারত ও আওয়ামী লীগকে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে যে তাদের চক্রান্ত আমরা বরদাস্ত করব না।

কোনও প্রকার উসকানিতে সহিংস আন্দোলনের পথে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণকে রিমান্ডে নিয়ে শেখ হাসিনা তাকে কত টাকা দিয়েছে, ভারত তাকে কোন মন্ত্র দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে, এসব বের করতে হবে। এসব দাবি পূরণে সরকার কিংবা আদালত গড়িমসি করলে হেফাজতে ইসলাম বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২৯, ২০২৪)