উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের জন্য বিভিন্ন পক্ষ থেকে দাবি উঠলেও দেশের বেশিরভাগ মানুষ বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো এই দলটিকে রাজনীতি করতে দেওয়ার পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার (ভিওএ) বাংলা বিভাগের এক জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

এক মাসেরও বেশি আগে অক্টোবরের ১৩ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার সম্পাদকীয় নির্দেশনা অনুযায়ী গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড এই জরিপ চালায়। জরিপের ফল কয়েকটি পর্বে প্রকাশ করছে ভিওএ বাংলা।

আজ বুধবার জরিপের দ্বিতীয় পর্বের ফল প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। অন্যদিকে ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছে।

এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরদাতাদের মধ্যে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ বলেছেন, তারা এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। আর ২ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে, তাদের মধ্যে পুরুষদের সংখ্যাই বেশি। জরিপে অংশগ্রহণকারী পুরুষদের ৬১ দশমিক ৮ শতাংশই মনে করে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া উচিত। নারী উত্তরদাতাদের মধ্যে এই হার ৫২ দশমিক ২ শতাংশ।

আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়ার পক্ষে মত দেওয়া উত্তরদাতাদের মধ্যে শহর ও গ্রামের বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় সমান। শহরের ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং গ্রামের ৫৭ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা মনে করেন আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া উচিত।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া দলটির সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনও সেখানেই অবস্থান করছেন। সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন আওয়ামী লীগের প্রথম সারির প্রায় সব নেতাই। এর মধ্যে গত সাড়ে তিন মাসে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন, অনেকে আবার দেশ ছেড়েছেন বলে খবর মিলছে।

আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় গত ৮ আগস্ট। দায়িত্ব গ্রহণের আড়াই মাস পর গত ২৩ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতীম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করার দাবি উঠলেও ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, রাজনৈতিক দলের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত তারা নিতে চাননি।

এ ছাড়া টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া আরেক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের বিচার হওয়ার পরই আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে।

এমন প্রেক্ষাপটে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের করা জরিপে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়ার পক্ষেই মত দিয়েছে বেশিরভাগ মানুষ।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বয়স বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়ার পক্ষে মত দেওয়া উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের সংখ্যাই বেশি। এই বয়সী উত্তরদাতাদের ৬০ দশমিক ৩ শতাংশই আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া পক্ষে। আর ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী উত্তরদাতাদের মধ্যে এই হার ৫৩ দশমিক ৯ শতাংশ।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে যারা মত দিয়েছেন, তাদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি। ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী উত্তরদাতাদের ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা চান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হোক। ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সী উত্তরদাতাদের মধ্যে এই হার ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২৭, ২০২৪)