স্টাফ রিপোর্টার : যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য দূতাবাসে গিয়ে বায়োমেট্রিক ডেটা দিয়ে এসেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডেএম জাহিদ হোসেন আজ বুধবার এ কথা জানান। 

তিনি বলেন, ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যেতে হতে পারে। সেজন্য আজকে উনি বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে আমেরিকান দূতাবাসে গিয়েছিলেন।

গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে বেলা ২টা ২০ মিনিটে গাড়িতে করে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাকে স্বাগত জানান।

এজেডএম জাহিদ হোসেন ছাড়াও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার এবং চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক মোহাম্মদ মামুন এ সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন।

৭৯ বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, কিডনি, ডায়াবেটিসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। গত চার বছরে বেশ কয়েক দফা তাকে দীর্ঘদিন এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

সেখানকার চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে উন্নত দেশের মাল্টি ডিসিপ্লানারি সেন্টারে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার পরামর্শ দেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া প্রথমে লন্ডন এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় তার।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। ওই বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন খালেদা। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।

এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছিল শেখ হাসিনার সরকার। প্রতিবারই তাকে দুটি শর্ত দেওয়া হচ্ছিল। তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।

তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের তরফ থেকে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হলেও ওই শর্তের যুক্তি দিয়ে বার বার তা প্রত্যাখ্যান করে শেখ হাসিনার সরকার।

গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন।

এরপর গত ৩০ অক্টোবর এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথমে তিনি লন্ডনে যাবেন ছেলে তারেক রহমানের কাছে। বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে।

পরে লন্ডন থেকে অন্য একটি দেশে নিয়ে তাকে কোনো একটি মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হবে। সেই দেশ যে যুক্তরাষ্ট্র, সেই তথ্য প্রকাশ করা হল বুধবার।

জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে দুই-একটি মেডিকেল সেন্টারে এই অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে কবে নাগাদ বিএনপি চেয়ারপারসন বিদেশ যাবেন, সে বিষয়ে কোনো দিন তারিখ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২৭, ২০২৪)