মধুমতি নদীর কচুরিপানার স্তুপ অপসারণ
২১ দিন পর ৫ জেলার সাথে গোপালগঞ্জের নৌ চলাচল সচল
তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : অবশেষে মধুমতির নদীর ৫০০ মিটার এলাকার কচুরিপানা অপসারণ করেছে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। দীর্ঘ ২১ দিন পর ওই রুটে আজ মঙ্গলবার থেকে নৌ চলাচল সচল হয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উরফি ইউনিয়নের মানিকহার ব্রিজের নীচে মধুমতি নদীতে কচুরিপানার স্তুপ এতটাই পুরু হয়েছিল যে, তার উপর দিয়ে লোকজন পায়ে হেটেই নদী পার হতে পারতো। এ কারনে গত ২০ দিন ধরে গোপালগঞ্জের সাথে বাগেরহাট, পিরোজপুর, নড়াইল, বরিশাল ও খুলনা জেলার সাথে সরাসরি নৌ-চলাচল বন্ধ ছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে “মধুমতীতে কচুরিপানার স্তুপ, ৫ জেলার নৌ চলাচল বন্ধ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর বিষয়টি জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সদর উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। নড়েচড়ে বসেন প্রশাসন। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ১৭ নভেম্বর কচুরিপানার স্তুপ অপসারণের কাজ শুরু করে। ৯ দিন ধরে কাজ করার পর গতকাল বুধবার (২৫ নভেম্বর) নদী থেকে কচুরিপানার স্তুপ অপসারণ সম্পন্ন হয়।
মানিকহার গ্রামের বাসিন্দা ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, মানিকহার সেতুর ৫টি গুচ্ছ পিলারের মধুমতি নদীর মধ্যে। এক গুচ্ছে ৬ টি ফাঁকা ফাঁকা পিলার রয়েছে। পিলারের ফাঁকে ফাঁকে কচুরিপানা আটকে নদীর ৫০০ মিটার এলাকা জুড়ে কচুরিপানার স্তুপ বিস্তৃতি লাভ করে। এ কচুরির স্তুপের উপর দিয়ে এখানে ঘুরতে আসা উৎসুক জনতা চলাচল করেছেন। দুই বছর আগেও একবার এই অবস্থা হয়েছিল। সে সময়েও সরকারি উদ্যোগে এটি অপসারণ করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ব্যবসায়ী শওকত খাঁ বলেন, মধুমতি নদীর মানিকহার ব্রিজ থেকে ৫০০ মিটার পযর্ন্ত কচুরীপানার স্তুপ জমেছিল।বিষয়টি জানার পর প্রশাসন মধুমতি নদী থেকে কচুরিপানা অপসারন করেছে। এতে মধুমতি নদী দিয়ে নৌ চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
স্থানীয় যুবক জাহিদুল খান বলেন, মধুমতি নদী থেকে কচুরিপানা অপসারণ করায় আগের মত সরাসরি নৌ চলাচল করতে পারছে। এতে নৌকায় করে উরফি হাটে আসা লোকজন উপকৃত হচ্ছেন। এখন আর ২৫ কিলোমিটার ঘুরে নড়াইল জেলার যোগানিয়া হয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে না।
উরফি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির গাজী বলেন, এ জেলার প্রধান নদী মধুমতি। এ নদী দিয়ে প্রতিদিন ৬ জেলার অন্তত ২০০ নৌযান চলাচল করে। ২০ দিন আগে মানিকহার সেতুর পিলারে কচুরিপানা জমতে থাকে। আস্তে আস্তে তা বিশাল স্তূপে পরিণত হয়। এক পর্যায়ে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেতুর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিরও অশঙ্কা করা হচ্ছিল।ইতিমধ্যে মধুমতি নদীর কচুরিপানা অপসারন করা হয়েছে। এখন মধুমতি নদী দিয়ে নির্বিঘ্নে নৌ চলাচল করতে পারছে। এ জন্য জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়নবোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস.এম রেফাত জামিল বলেন, ২০ দিন এ পথে নৌকা, ট্রলার, কার্গোসহ অন্য নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে গোপালগঞ্জের সঙ্গে খুলনা, বরিশাল, নড়াইল, বাগেরহাট ও পিরোজপুরের নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এ নদী ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনাকারীদের ক্ষতি হয়েছে। গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রচার হবার পর আমি লিখিত ও মৌখিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে মানিকহার সেতু এলাকার কচুরিপানার স্তুপ পরিষ্কার করে দিয়েছি। এতে নদীতে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। দূর-দুরান্তে নদী পথে পণ্য পরিবহন ও ব্যবসা পরিচলনার প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে।
(টিবি/এসপি/নভেম্বর ২৬, ২০২৪)