রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুর সদর উপজেলায় বিরোধপূর্ণ জলমহাল 'ধোপাডাঙা বাওড়' ঘিরে দুই ইজাদারের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌছেছে। চলমান আইনি লড়াই ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও একপক্ষ (ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি গুরুপদ বিশ্বাস) এর বিরুদ্ধে বারবার মাছ ধরার চেষ্টার অভিযোগ, এবং আরেক পক্ষ (ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের 'রণকাইল মাঝিপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি'র সভাপতি মন্টু কুমার সরকার) এর বিরুদ্ধে মাছ ধরার অভিযোগ করে মামলা দেওয়ায়- এমন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। মাঝে মাঝেই দু'পক্ষের মধ্যে বাওড়টির সীমানায় এসব নিয়ে হট্টগোলের সৃষ্টি হচ্ছে।

সর্বশেষ গত ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার গুরপদ বিশ্বাস বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন নিয়ে গিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করলে মন্টু কুমার সরকারের লোকজন তাতে বাধা দিলে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। পরে ফরিদপুর কোতয়ালি থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত (ওসি তদন্ত) মো. জাফর ইকবালের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এমতাবস্থায় এই জলমহালটি দখল ও বাওড়ের মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে যেকোন সময় দুই পক্ষের মধ্যে বড় ধরণের মারামারি সৃষ্টি হওয়ার আশংকায় আতংকে দিন কাটাচ্ছেন বাওড় পাড়ে বসবাসরত সাধারণ বাসিন্দারা।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) এ বিষয়ে ফরিদপুর কোতয়ালি থানা পুলিশের ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. জাফর ইকবাল জানান, 'বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি। সময়মত উপস্থিত থাকায় কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যেহেতু বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে তাই আলাদতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উভয় পক্ষকে ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দিয়েছি'। তিনি আরও জানান, 'আদালত ও ডিসি স্যারের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নির্ধারণ হবে বাওড়টির লিজ কে পাবেন'।

বাওড়টির সর্বশেষ ইজাদার রণকাইল মাঝিপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি'র সভাপতি মন্টু কুমার সরকার জানান, 'আমি সকল প্রকার সরকারি নিয়ম নীতি মেনে ধোপাডাঙা বাওড় লিজ নিয়ে মাছ ছেড়েছি, আমাকে সরকার দখল বুঝিয়ে দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একটা পুঁটি মাছও ওই বাওড় থেকে ধরতে পারিনি। পূর্বের ইজারাদারের মামলা মোকদ্দমার মাধ্যমে হয়রানি শিকার হচ্ছি। নিম্ন ও জেলা জজ আদালতের রায় আমার পক্ষে আসায় এখন ওই মামলা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। এখন উচ্চ আদালত ও ফরিদপুরের ডিসি স্যারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় দিন গুনছি আমরা। এদিকে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আগের ইজারাদার মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন নিয়ে মাছ ধরতে চলে আসে। আমরা সব সময়ই ব্যাপারগুলো প্রশাসনকে জানিয়েছি, প্রশাসন এসে নিয়ন্ত্রণ করেছে। এছাড়া আমরা তাদের মুখোমুখি অবস্থান নিলে অনেক বড় সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা থাকতো। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে অপেক্ষা করছি, আশাকরি ন্যায় বিচার পাবো'।

সরকারি ইজারার শর্ত ভাঙার দায়ে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে বাতিল হওয়া ইজারদার ও ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি গুরুপদ বিশ্বাস জানান, 'আমাকে অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক বাদ দিয়ে সরকার আরেক জনকে ইজারা দিয়েছে। আমি মামলা করেছি। মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আশা করি এই মামলার রায় আমার পক্ষেই যাবে।'

উল্লেখ্য, গত ৬ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফরিদপুর সদরের চাঁদপুর ইউনিয়নের ‘ধোপাডাঙ্গা বাওড়’ নামের জলমহালটি ইজারাদার মন্টু কুমার সরকার দখল বুঝিয়ে দেন ফরিদপুর সদরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো.সম্রাট হোসেন। তার আগে উচ্ছেদ করা হয় আগের ইজাদার গুরুপদ বিশ্বাসকে। জেলা প্রশাসন ও ইজারাদার সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর সদরের চাঁদপুর ইউনিয়নের ধোপাডাঙ্গা মহল্লায় ৩৫ একর জমির একটি সরকারি বাওড় রয়েছে। বাওড়টি ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেন জেলেরা। ২০২২ সালের ৮ জুন তিন বছর মেয়াদে এ বাওরটি ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৮৯ টাকায় ইজারা নেন ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি গুরুপদ বিশ্বাস।

তবে ইজারা নেওয়ার ১৪ মাস পর ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে বাওড়টি বুঝে পান তিনি। তিন বছরের ইজারা চুক্তি অনুযায়ী প্রতিবছর ইজারার টাকা নবায়ন সাপেক্ষে এ ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের ৭ জুন। তবে মেয়াদ শেষের অন্তত ১৬ মাস আগে এবং বাওড়টি বুঝে পাওয়ার সাড়ে পাঁচ মাসের মাথায় গত ৩০ জানুয়ারি তউকালীন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার এক অফিস আদেশে ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করার অভিযোগে জলমহালের ইজারা বাতিল করে দেন। পাশাপাশি ইজারা নেওয়ার সময় জমা রাখা জামানতের সব অর্থ বাজেয়াপ্ত করেন। এরপর নতুন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাওড়টি ইজারা পান ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের 'রণকাইল মাঝিপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি'র সভাপতি মন্টু কুমার সরকার।

(আরআর/এএস/নভেম্বর ২৩, ২০২৪)