স্টাফ রিপোর্টার : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, ‘দেশের চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য রক্ষায় বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উদারনীতিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। ফলে বাংলাদেশের জন্য ভারত, পাকিস্তান বা চীন কোনো ইস্যু না। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবাইকে আমরা সংযুক্ত করতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে যে সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়, এখন দেশ হিসেবেও (পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে) সিন্ডিকেট হলে সমস্যা। অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক নয়।’

বুধবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবির উদ্যোগে আলুসহ অন্য পণ্য বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক কোনো টানাপোড়েন আছে কি না, বাণিজ্য উপদেষ্টার কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো টানাপোড়েন নেই। ভারত থেকে নিয়মিত চাল, আলু, ডিমসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকের বাজারে নিত্যপণ্যের যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে, সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে তা অনেকটা সমাধান করা সম্ভব। আমরা সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করতে রাতদিন কাজ করছি। পণ্যের উৎপাদন, আমদানি ও মজুতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করছি। বিশেষ করে আগামী রমজান মাসকে সামনে রেখে পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিতে কাজ করছি। পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই যথেষ্ট সংবেদনশীল আছেন। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও তাদের তদারকি কার্যক্রম বাড়িয়েছে।’

মূল্যস্ফীতি কমাতে কিছু তাৎক্ষণিক ও কিছু দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘দাম বেড়ে যাওয়ার পরে আমরা টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে আলু বিক্রি শুরু করেছি। পাশাপাশি আলু আমদানির অনুমোদনও দেওয়া আছে। এগুলো তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ। অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সহযোগিতায় খেজুর, চিনি, সয়বিন তেল, ডিমসহ আরও কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমানো হয়েছে। এতে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হবে। এটা মেনে নিয়েই শুধু পণ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা আনার জন্য এসব শুল্ক কমানো হয়েছে।’

সেখ বশিরউদ্দিন বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্টের বিষয়ে আমরা অবগত। তবে দাম কমানোর বিষয়ে আমাদের পরিপূর্ণ চেষ্টা রয়েছে। এতদিনের পদক্ষেপের ফলে এরই মধ্যে কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি আসতে শুরু করেছে। বাজারে পণ্যের সরবরাহ আরও বাড়ানো গেলে দ্রুত সময়ে দ্রব্যমূলে স্থিতিশীলতা আসবে বলে আশা করছি।’

বাজারে সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হবেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘যে সিন্ডিকেটের কথা বলা হচ্ছে তাতে মুষ্টিমেয় লোকজন যুক্ত থাকতে পারে। এক্ষেত্রে উত্তর একটাই, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধা দূর করে আরও অধিক সংখ্যক লোককে এ ধরনের (নিত্যপণ্য) ব্যবসায় যুক্ত করা। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যেও বলবো, আপনারা আরও বেশি সংখ্যায় এসব ব্যবসায় যুক্ত হন এবং আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা তৈরি করুন।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় নিম্ন আয়ের এক কোটি উপকারভোগী কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য অর্থাৎ ভোজ্যতেল ও মসুর ডাল বিক্রি চলছে। পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তাদের কাছে ঢাকা মহানগরে ৫০ ও চট্টগ্রাম মহানগরে ২০ স্থানে ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য— তেল, ডাল ও খাদ্য অধিদপ্তরের সরবরাহ করা চাল বিক্রি করা হচ্ছে। এই কার্যক্রমের সঙ্গে আজ বুধবার থেকে ঢাকায় আলু বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি।

এর ফলে টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ২ লিটার ভোজ্যতেল, ২ কেজি মসুর ডাল, ৫ কেজি চাল ও ৩ কেজি আলু কিনতে পারবেন। প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ১০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০, চাল ৩০ টাকা ও আলু ৪০ টাকায় কিনতে পারবেন ক্রেতারা।

(ওএস/এএস/নভেম্বর ২১, ২০২৪)