রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি : কথায় আছে মাটির মূল্য সোনার চেয়ে কম নয়। পাহাড়ে ভূমি জটিলতার সুযোগ নিয়ে দলিল পত্রের হেরফের করে সোনার মূল্যে এ মাটি বা জমি দখলের হিড়িক দীর্ঘদিনের পুরনো। এমনই এক অবৈধ দখলে রাখা স্কুল, মসজিদ-মাদ্রাসা ও বাজারের জায়গা-জমি প্রভাব খাটিয়ে নিজ নামিও করছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে বাজার চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুলের জায়গা দখল করে বাজারের নামে দাবি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা বেলাল ও তার সহযোগীরা। বেলাল পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলাধীন ভাসান্যাদম ইউনিয়নের পরিবার সূত্রে চাইল্যাতলী বাজার চৌধুরী।

অভিযুক্তরা বিভিন্ন বাহানায় স্থানীয় চাইল্যাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫০ শতক, চাইল্যাতলী জামে মসজিদের ৪০ শতক, পার্শ্ববর্তী মাদ্রাসার ৩ শতক ও বাজারের বরাদ্দকৃত জমির একাংশ চাইল্যাতলী বাজার সংলগ্ন হওয়ায় প্রতিষ্ঠান গুলোর জায়গার অনেকাংশ বাজার ফান্ডের জমি বলে দাবি করছেন বেলাল ও তার সহযোগীরা। একই পন্থায় অবৈধ ভাবে বাজারের প্লট বিক্রি করছেন অভিযুক্তরা। তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেই এলাকার সাধারণ মানুষ হয়রানি হচ্ছে হামলা-মামলার এ অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সবশেষ রক্ষা না পেয়ে প্রভাবশালী নেতাদের হাত থেকে জায়গা দখলমুক্ত করতে শনিবার চাইল্যাতলী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে মানববন্ধন করেন চাইল্যাতলীবাসী।

ভূমিখেকো বাজার চৌধুরী বেলাল স্থানীয় শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সভাপতি। তার সহযোগী ভাসান্যাদম ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন অর্থের যোগান দাতা। আরেক সহযোগী দক্ষিণ মারিশ্যাচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলী হোসেন মাষ্টার থেকে হয়রানি মূলক মামলা হামলা ও স্কুল-মসজিদের জায়গা দখল মুক্ত করতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ মানববন্ধনে একত্রিত হয়েছেন সচেতন নাগরিক।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দ্রুত ভূমিদস্যু বেলাল কর্তৃক সাধারণ মানুষকে দেওয়া হয়রানিমুলক মামলা প্রত্যাহার সহ মসজিদ-মাদ্রাসার এবং স্কুলের জায়গা ফেরত দিতে হবে। অন্যথায় বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তুলবে এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা রহমত আলী বলেন, বেলাল, ইসমাইল ও আলী হোসেনরা শুধু ভূমি দস্যুই নয়, নিয়মিত চাঁদাবাজও বটে। তাদের দমন করার এখনই উপযুক্ত সময়।

জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সরদার ওয়াসিম বলেন, অসাধু বাজার চৌধুরী বেলাল ও তার সহযোগিরা একত্রিত হয়ে প্রথমে মসজিদ এবং স্কুলের জায়গা গুলো কৌশলে বাজারের নামে নেয়। তার পর সেগুলো চাঁদা নিয়ে দখল শর্তে প্লট বরাদ্দ দিয়ে থাকেন।

তরুণ সমাজের পক্ষে সরদার টিপু সুলতান বলেন, আমরা আমাদের মসজিদ এবং স্কুলের জায়গা নিয়ে কোনো ধরনের চক্রান্ত মেনে নিবো না। অনতিবিলম্বে এসব জায়গা দখলমুক্ত করতে হবে।

চাইল্যাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. ফয়েজুল ইসলাম জানান, ১৯৮০ সন থেকে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত। একই সাথে মসজিদ-মাদ্রাসাও। দীর্ঘদিন ধরে সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে চললেও কিছুদিন ধরে শুনছি এসব প্রতিষ্ঠানের কিছু কিছু জায়গা নাকি বাজার চৌধুরী বেলালের নামে। প্রশ্ন হলো ধর্মীয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমি কিভাবে ব্যক্তিগত সম্পদ হয়? তার এই মিথ্যাচার ও হামলা মামলার বিচার দাবি করছে সর্বস্তরের জনগণ।

চাইল্যাতলী প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্র জানা গেছে, বাজার সংলগ্ন বিদ্যালয়ের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে এডিএম কোর্টে মামলায় পরাজিত হয়ে আবারো সিভিল কোর্টে মসজিদ ও স্কুলকে কেন্দ্র করে মামলা করেন বেলাল। তার দায়ের করা মিথ্যা মামলা বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে। ফলে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের বরাদ্ধপ্রাপ্ত প্রায় ১০ লাখ টাকা ফেরৎ চলে যায়।

এদিকে সকলে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে দাবি রাখেন, বেলালকে দ্রুত বাজার চৌধুরীর দায়িত্ব থেকে অপসারণ করে স্কুল ও মসজিদের দখলকৃত জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া। একই সাথে তার বিরুদ্ধে দেশে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

(আরএম/এএস/নভেম্বর ১৭, ২০২৪)