শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে বাড়তে শুরু করেছে শীতের তীব্রতা। দিনের বেলা গরম ও সন্ধ্যার পর থেকে শীতের আবহ জেলা জুড়ে। ফলে ঠাণ্ডা-জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার মতো রোগের সংক্রমণ বেড়েছে। জেলা সদর হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ইনডোর-আউটডোরে প্রতিদিন বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা।

সরেজমিন দেখা যায়, ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে নিউমোনিয়া ও ঠাণ্ডা-জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তি আছে সব মিলিয়ে ১১০ জন। গত ১ নভেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৫০ জন শিশু। এর মধ্যে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।

সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ রাজিয়া সুলতানা জানান, শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের ঠাণ্ডা-সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্তের প্রবণতা বেড়েছে। প্রতিদিন আউটডোরে অসংখ্য শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। যাদের অবস্থা গুরুত্বর, তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে শিশু ওয়ার্ডে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৪০ জন ও ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৬০ জন শিশু ভর্তি হয়েছে।

সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে ১৫ জন। শীতজনিত কারণে শিশুদের ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত মাসে শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত সমস্যার হার বেশি ছিল। এ মাসে সেটা কমে এসেছে। আমরা নিয়মিত চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে নিয়মিত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর বিকল্প নেই। বাড়ির বাইরে গেলে শিশুকে মাস্ক পরাতে হবে। এ ছাড়া শিশুর আশেপাশে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশুকে কোলে নেয়ার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে দুই হাত ভালো মতো ধুঁয়ে নিতে হবে।

এদিকে জেলা সদরের ২৫ শয্যা শিশু হাসপাতালেও দেখা গেছে ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত শিশু রোগীদের ভিড়। চিকিৎসকরা বলছেন, ঠান্ডাজনিত সংক্রমণে আক্রান্ত রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। শীতের কারণে শিশুরা ডায়রিয়া আক্রান্ত হলেও এবার ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী কম।

শিশু হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শামসুন্নাহার জানান, শিশু হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ রোগী চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকে। ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত শিশু হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছে ৭২ জন শিশু। এদের অধিকাংশই ঠাণ্ডা-জ্বর ও সর্দি-কাশিতে ভুগছে।

শিশু হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আলী হাসান ফরিদ (জামিল) বলেন, শীতজনিত রোগ থেকে শিশুর সুরক্ষায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। শিশুর পোশাক, শোবার ঘর ও খাবার খাওয়ার পাত্রগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।

তিনি বলেন, প্রতিদিন আউটডোরে রোগী বেশি আসে। শিশুর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে আমরা হাসপাতালে ভর্তি করে থাকি। হাসপাতাল থেকে শিশুদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

(এসই/এএস/নভেম্বর ১৭, ২০২৪)