মধুমতি নদীর মানিকহার ব্রিজে কচুরিপানার স্তুপ, ১৫ দিন ধরে গোপালগঞ্জের সাথে ৫ জেলার নৌ চলাচল বন্ধ
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : মধুমতি নদী দিয়ে গোপালগঞ্জের সাথে ৫ জেলার নৌযান চলাচল করে। এ নৌযানে খাদ্য, নির্মাণ সামগ্রী, জ¦ালানী, কৃষি পন্য সহ প্রয়োজনীয় সব পণ্য পরিবহন করা হয়। মধুমতি নদীর গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উরফি ইউনিয়নের মানিকহার ব্রিজের নীচে কচুরিপানার স্তুপ জমা হয়েছে। এ স্তুপের উপর দিয়ে কোন নৌযান চালাচল করতে পারছে না। এতে বাগেরহাট, পিরোজপুর, নড়াইল, বরিশাল ও খুলনার সাথে সরাসরি নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১৫ দিন ধরে এ অবস্থা চলছে। কচুরিপানার স্তুপ পরিস্কার করে নৌ চালাচল সচল করতে স্থানীয়রা দাবি জানিয়েছেন।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে মনিহার ব্রিজ এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, মধুমতি নদীর মধ্যে ৬ ভাগে ৩৬টি পিলারের উপর দাড়িয়ে আছে মানিকহার ব্রিজ। প্রত্যেক ভাগে ৬টি ফাঁকা ফাঁকা পিলার রয়েছে। এ পিলারের ফাঁকে ফাঁকে কুরিপানা ঢুকে স্তুপ তৈরী করেছে। ব্রিজের নিচ দিয়ে নদী জুড়ে স্তুপগুলো বিস্তৃতি লাভ করেছে। নদীর প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকায় এখন শুধু কচুরি আর কচুরি। চলাচল করতে না পেরে নদীতে নোঙ্গর করে আছে অসংখ্য নৌকা, ট্রলার ও কার্গো।
উরফি ইউপি চেয়ারম্যান মনির গাজী বলেন, জেলার প্রধান নদী মধুমতি নদী। এ নদী দিয়ে ৫ জেলায় প্রতিদিন অন্তত ২শ’ নৌকা, ট্রলার, কার্গোসহ বিভিন্ন ধরণের নৌযান চলাচল করে। ১৫ দিন আগে মানিকহার ব্রিজের নীচে পিলারের সাথে কচুরিপানার আটকে জমতে থাকে। আস্তে আস্তে কচুরিপানা স্তুপে পরিনত হয়। পুরো নদী কচুরিপানার স্তুপ দখল করে নিয়েছে। কচুরিপানার স্তুপের উপর দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারছে না। ফলে এ রুট বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পণ্য পরিবহন ও নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ব্রীজের ক্ষতি হচ্ছে। জনস্বার্থে কচুরিপানার স্তুপ অপসারণ করে নৌ চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমি দাবি জানাচ্ছি। বিষয়টি ভিডিও করে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসিন উদ্দীনকে পাঠাই। তিনি বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ব্রিজ সংলগ্ন মানিহার হাটে বসে কথা হয় বরিশালের সবজি চারা ব্যবসায়ী শাওন মোল্লার (৩৫) সাথে। তিনি বলেন, বরিশাল ও পিরোজপুর থেকে নৌকায় লাউ, কুমড়া, সিম, বেগুন ফুলকপি, বাধাকপি সহ সবজির চারা এনে গোপালগঞ্জে বিক্রি করি। এখন শীতের সবজির চারা বিক্রির পুরো মৌসুম চলছে। কিন্তু কচুরি পানার কারণে নৌকা গোপালগঞ্জ শহর ও আশপাশের গ্রামের হাট বাজারে নিতে পারছি না। এতে ব্যবসার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আমি দ্রæত এ সমস্যার সমাধান চাই।
কার্গো চালক বশির মিয়া (৪৫) বলেন, এই নদী দিয়ে আমরা ধান, চাল সহ বিভিন্ন পণ্য খুলনা ও বরিশালে পরিবহন করি। কিন্তু মানিকহার ব্রিজের নীচে কচুরিপানার স্তুপ জমেছে। ওই স্তুপের উপর দিয়ে আমরা কার্গো চালাতে পারছি না। মানিকহার ঘাটে কার্গো নোঙ্গর করে বসে আছি। এতে আমাদের জীবন-জীবিকা অচল হয়ে পড়েছে। আমাদের জীবিকা সচল রাখতে কচুরিপানা দ্রæত পরিস্কার করার দাবি জানাচ্ছি।
উরফি ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বর মিজানুর রহমান বলেন, গুচ্ছ পিলারের উপর ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে পিলারের ফাঁকে ফাঁকে কচুরি ঢুকে এ অবস্থার সৃষ্টি করে। এ কচুরির স্তুপের উপর দিয়ে এখানে ঘুরতে আসা উৎসুক জনতা চলাচল করেন। ২ বছর আগেও এ অবস্থা হয়েছিল। তখন সরকারি উদ্যোগে এটি অপসারণ করা হয়। এখন আবার একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এত নৌপথে চলাচলকারীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। আমরা এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই।
উরফি গ্রামের গাজী ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এ নদী দিয়ে আমাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য, নির্মাণ সামগ্রী কম খরচে পরিবহন করতে পারি। কিন্তু নদীতে কচুরির স্তুপ জমে আমাদের দৈনন্দিন কাজ কর্ম ব্যাহত হচ্ছে। পণ্য বাজারজাত করতে পারছি না। তাই আমি দ্রæত এ সমস্যার সমাধান করতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিাচ্ছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রিফাত জামিল বলেন, মধুমতি নদীতে এ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় ৫ জেলার সাথে নৌ চালাচল বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি আমি লিখিত ও মৌখিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কচুরি অপসারণে ৬/৭ লাখ টাকার প্রয়োজন। টাকা বরাদ্দ বা অনুমোদন পেলেই আমরা এটি শুরু করতে পারব। কাজ শুরুর ৭/৮ দিরে মধ্যে সব কচুরি অপসারণ করা সম্ভব হবে বলে জানান ওই প্রকৌশলী।
(এমএস/এএস/নভেম্বর ১৬, ২০২৪)