একে আজাদ, রাজবাড়ী : জাহাঙ্গীর হোসেন, স্বপ্ন ছিল হবেন ইঞ্জিনিয়ার। ধরবেন সংসারের হাল। কিন্তু হঠাৎ-ই বাবা মারা যাওয়ায় থেমে যায় পড়ালেখা। ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে ছোটেন প্রবাসে। ২০০৭ সালে যান মালদ্বীপ। কিন্তু সেখানে ঠিকমতো কাজ করতে না পেরে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফেরেন। দেশে এসে ২০১১ সালে ৬ লক্ষ টাকা খরচ করে যেতে চান ইউরোপের দেশে। কিন্তু বিধি বাম, দালাল ইউরোপের কথা বলে নিয়ে যায় ভারত। পরে ভারতের বিভিন্ন শহরে কাজ করতে থাকেন জাহাঙ্গীর। তারপর চেন্নাইয়ের একটি মুরগী খামারে কাজ শুরু করেন। কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। তার কাজে খুশি হয়ে খামারের মালিক তাকে একজোড়া মুরগি উপহার দেন। ২০১৭ সালে সেই উপহারের একজোড়া সহ মোট চার জোরা মুরগি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ছোট পরিসরে বিনিয়োগ ছাড়াই শুরু করেন খামার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। কয়েক বছরেই তিনি তার খামারে সংগ্রহ করেছেন প্রায় ৭০ জাতের ৩ শতাধিক দেশি-বিদেশি মুরগি। জাহাঙ্গীরের বাড়ি রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে।

বর্তমানে তার খামারে সুলতান, হোয়াইট ফেসড ব্লাক, ব্রাহমা, আসিল, সার বাইট, ফিনিক্স, সুমাত্রা, ইয়োকোহামা সহ বিশ্বের নামি-দামি জাতের বিভিন্ন মুরগি রয়েছে। তবে এসব মুরগির দাম সাধারণ মুরগির মতো নয়। ২০ হাজার টাকা জোড়া থেকে শুরু করে এসব মুরগি বিক্রি হচ্ছে এক লাখ টাকায়। মুরগির ডিম থেকে নিজেই হ্যাচারিং করে বাচ্চা উৎপাদন করছেন তিনি। আর এক দিনের বাচ্চাও বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা জোড়া হিসেবে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের শৌখিন ক্রেতারাও তার খামার থেকে এসব মুরগি কিনছেন। একসময়ের দিশেহারা জাহাঙ্গীর এখন স্বপ্ন দেখছেন শতশত প্রজাতির মুরগির জাত সংগ্রহ করে লালন পালন করার।

জাহাঙ্গীর হোসেন অললাইনের মাধ্যমেই এসব মুরগি বিক্রি করেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। দেশ ছেড়ে তার খামারের মুরগী বাইরের দেশেও চলে যাচ্ছে। জাহাঙ্গীর হোসেন শতশত জাতের বিদেশি মুরগি সংগ্রহ করতে চান। সরকারি সহয়তা পেলে বিশ্বের সর্বাধিক জাতের মুরগি সংগ্রহ করে গিনেস বুকে নাম লেখাতে চায় জাহাঙ্গীর হোসেন।

স্থানীয় যুবক রাকিব বলেন, ‘আমি আগে কখনো এত জাতের বিদেশি মুরগি একসাথে দেখিনি। জাহাঙ্গীরের খামারে একসাথে এত জাতের বিদেশি মুরগী দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। আমরা চাই আরো বিভিন্ন জাতের বিদেশি মুরগী সংগ্রহ করুক তার খামারে।’

স্থানীয় আরেক এক যুবক সবুজ মিয়া বলেন, ‘বিভিন্ন জাতের বিদেশি মুরগি পালন করে সফল হওয়া যায় কিভাবে তাই দেখতে ও খামারী জাহাঙ্গীরের থেকে পরামর্শ নেওয়ার জন্য আসছি।’

খামারী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বিনিয়োগ ছাড়াই উপহারের মুরগি দিয়ে আমার খামার শুরু। সেই মুরগীর ডিম থেকে বাচ্চা, সেগুলো বিক্রি করে আস্তে আস্তে আমি নানা প্রজাতির মুরগী সংগ্রহ করি। বর্তমানে আমার খামারে ৭০ জাতের প্রায় ৩ শতাধিক মুরগি আছে। খামারে প্রতিমাসে ২৫/৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। খরচ বাদ দিয়ে আমার ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা প্রতি মাসে লাভ হয়।’

কালুখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম রতন বলেন, ‘মুলত শখের বসে বিদেশি মুরগি পালন করে আজ সফল খামারী জাহাঙ্গীর হোসেন। এখন বাণিজ্যিক খামার করেছেন তিনি। নিজেই তার খামারে মুরগির ডিম হ্যাচিং করে বাচ্চা বিক্রি করেন। আমরা তার খামার পরিদর্শন করেছি। সর্বদা তাকে নানা ধরনের পরামর্শ ও খামারে মুরগির সমস্যায় সেবা দিচ্ছি। জাহাঙ্গীরের খামারে একজোড়া মুরগি ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। যদিও এই মুরগিগুলো মাংসের জন্য নয়, শখের বসে পালন করা হয় এই মুরগিগুলো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসে জাহাঙ্গীরের খামারে মুরগির বাচ্চা নিতে। দিন দিন প্রসার বাড়ছে জাহাঙ্গীরের খামারে। জাহাঙ্গীর হোসেনের থেকে পরামর্শ ও তার খামার থেকে বাচ্চা নিয়ে এখন অনেকেই সফল খামারি হয়েছেন।’

(একে/এসপি/নভেম্বর ১৩, ২০২৪)