লাখো ভক্তের অংশগ্রহণ
ধামরাইয়ে সাধক পুরুষ অমৃত ভক্তের ১৭৬তম বার্ষিক উৎসব শুরু
দীপক চন্দ্র পাল, ধামরাই : তমসাচ্ছন্ন ঘোর কলির কঠোর যন্ত্রনায় জগৎ সংসার আজ সর্বগ্রাসী ভোগবাদের কষাঘাতে নিস্পেসিত। বর্তমান পরিবেশ উত্তপ্ত ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে একেবারেই অস্থির। আর এই পতিত মানবতা উদ্ধারে মুক্তির দূত রূপে আবিভূর্ত হয়ে এসেছেন মহাবতার গৌরসুন্দরের মহা নাম ‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে’ নামসূধা বিলিেিয় পরিত্রান পাবার জন্যে ও ভ্রান্তপথ থেকে নিস্কৃতি পাবার মানসে,দেশ ও জাতির মঙ্গলার্থে মহামানব “অমৃত ভক্তের ” অনুসৃতপথ ধরে গত ১০ নভেম্ববর থেকে ১৭৬ তম উৎসবের প্রার্থনায় ব্রতী হয়েছে ভক্তরা। আগামী ১৭ নভেম্ববর শেষ হবে এই উৎসব।
অমৃতলাল ভক্তের আশ্রম ও এই বৃহৎ পুকুর পার ঘীরেই মূলতঃ সপ্তাহব্যাপী এই উৎসব। কথিত রয়েছে নানা রোগ নিরাময় ও শান্তির প্রত্যাশায় অমৃতলাল ভক্তের এই বৃহৎ পুকুরে আগত ভক্তরা স্নান কার্য় সম্পন্ন করে থাকে মুক্তি পাবার আশায়।
ঢাকার অদুরে ধামরাইয়ের বাইশাকান্দা ইউনিয়নের খাগাইল অমৃত ভক্তের পুকুর পার এখন এক তীর্থ স্থানে পরিণত হয়েছে। ১৭৬ বছর পূর্বে সাধক পূুরুষ অমৃত লাল ভক্ত মূূলতঃ ধর্মীয় চেতনায় সপ্তাহ ব্যাপী এই উৎসব ও তার মেলার গোড়া পত্তন করেছিলেন। কালের বির্বতনে আজ সকল ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে এই উৎসব হয়ে উঠেছে সার্বজনীন। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে মেলাঙ্গন হয়ে উঠেছে কোলাহল মূখর।
প্রতি বছরের মত এবারো ১০ নভেম্বর রবিবার থেকে নানা কর্মসূচি ও অধিবাস প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ধামরাইয়ের বাইশাকান্দা ইউনিয়নের খাগাইল অমৃত ভক্তের সপ্তাহ ব্যাপী এই ধর্মীয় উৎসব।
গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে এ উৎসব শুরু হলেও বুধবার অধিবাস কীত্তনের মধ্য দিয়ে এই উৎসবের মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে বলে জানান উৎসব কমিটির সাধারন সম্পাদক শ্রীভজহরি ভৌমিক।
সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবে আগত ভক্তবৃন্দের জন্য শতাধিক মন চাল-ডাল রান্নার আয়োজন করা হয়েছে বলে কমিটির পক্ষ থেকে জানান, উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে জানান আযোজক কমিটির সভাপতি নগেন্দ্র নাথ সরকার সকল শ্রেনীর মানুষ এই উৎসবকে প্রানবন্ত করতে সার্বিক সহযোতিা করে থাকেন। এই উৎসবে লাখো ভক্তের সমাগমে মিলন মেলায় পরিনত হবে বলেন ।
যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই বাইশাকান্দ ইউনিয়নের বেরশ ও খাগাইল অমৃত ভক্তের পুকুর পার মেলাঙ্গটি যেন উপজেলা সদর থেকে আজো বিচ্ছিন্ন এক জনপদ। ধামরাইয়ের ধানতারা ও কুশুরা হয়ে পযন্ত একটি সড়ক পাকা করা হচ্ছে। সে কাজও কোথাও কোথাও এখনো সম্পন্ন হয়নি। দীর্ঘ দিন ধরে এই কাজ চলছে ধীর গতিতে। তবে মেলাঙ্গনের সাথে ধানতারা সড়কটি আজো পাকা তো দূরের কথা ইট বিছানোও হয়নি। পাকাকরন অতি জরুরী। এতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ব্যাপক সুবিধা বৃদ্ধি পাবে এ দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসির পক্ষ থেকে উৎসব কমিটির সাধারন সম্পাদক গৌরপদ সরকার। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সকলের সার্বিক সহযোগিতায় এবারো শান্তিপূর্ন ভাবে এই উৎসব সম্পন্ন হবে।
এ উৎসবে প্রতি দিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১০ নভেম্বর শুক্রবার থেকে ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার পর্যন্ত গীতাপাঠ শেষে, ১৩ নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় শুভ অধিবাস, ১৩ ও ১৪ নমেম্বর“ষোল প্রহর ব্যাপী” অখন্ড তারক ব্রহ্ম হরিনাম সূধা বিতরন উৎসব।
এতে সাতক্ষীরার বাবা লোকসাথ সম্প্রদায়, খুলনা থেকে আগত নব নিত্যানন্দ সমপ্রদায় গেপালগঞ্জ থেকে আসা দীপ্তি সম্প্রদায়, মাদারীপুরের সীমা সম্প্রদায়, সিরাজ গঞ্জের পাগলনাথ সম্প্রদায়, মানিকগঞ্জের গৌরনিতাই সম্প্রদায়, খাগাইল অমৃভলাল ভক্ত সম্প্রদায় সহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আগত আটটি কীর্তনীয়া দল অংশ নিয়েছে এই ধর্মীয় উৎসবে।
১৫ নভেম্বর শুত্রবার অনুষ্ঠিত হবে এই উৎসবের প্রধান আর্কষনীয় শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দের অষ্টকালী লীলাস্মরন অনুষ্ঠান। লীলা কীর্ত্তন পরিবেশনায় রয়েছেন ফরিদপুরের অমল ব্যানাজী, বগুড়ার পূস্প দাসী, বগুড়ার উত্তম সাহা, ঢাকার ধামরাইয়ের ভজহরি ভৌমিক।
১৬ নভেম্বর শ্রীশ্রী মহাপ্রভুর ভোগ-রাগ ও ভক্তদের মাঝে প্রসাধ বিতরন এবং এ উৎসবের প্রধান আর্কষনীয় ভক্তর বিশাল পুকুরে রাধা কৃঞ্চের নৌকাবিলাস অনুষ্ঠিত হবে ভক্তকুন্ডে।
১৭ নভেম্বর সকালে অনুষ্ঠিত হবে শ্রী মদ্ভাগবত গীতাপাঠ, গীতপাঠ করবেন অধ্যাপক গুরুদাস মন্ডল মহাশাস্ত্রী। চৌদ্দমাদল অনুষ্ঠান সহ তারক ব্রহ্ম হরিনাম সুধা বিতরণ ও কুঞ্জ ভঙ্গ এবং ধর্মসভা শেষে, ভক্তকুন্ড প্রদক্ষিন, মোহনত বিদায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সপ্তাহ ব্যাপী “অমৃতভক্তের ১৬৮ তম বাৎসরিক এ উৎসব।
এই ভক্তের উৎসব মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামীন জনপদের এই মেলাঙ্গন জুড়ে বিভিন্ন ধরনের দোকান পসার, স্টল, বেদীনিদের চুড়ি, বাঁশ-বেত, মাটির তেরী তৈজষপত্র, ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী তামা-কাঁসা শিল্পের ষ্টল সহ প্লাষ্টিক, মেলামাইন, এ্যালমোনিয়ামের দোকান বসেছে। পাশাপশি মিষ্টি সহ নানা ধরনের খাবারের দোকান। মেলায় নাগর দোলার কড়কড় শব্দে শিশু-কিশোররা মেতে উঠছে গোটা সপ্তাহ জুড়ে।
মেলা ও উ্ৎসব কমিটির পক্ষ থেকে শিক্ষক ভবেশ চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করে এখানে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয় উৎসবের এ কয়েকদিন। বিগত বছর গুলিতে অত্যন্ত শান্তি পূর্নভাবে অনূষ্ঠিত হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এবারো শান্তিপূর্ণ ভাবে এই উৎসব সম্পন্ন হবে বলে তার বিশ্বাস।
(ডিসিপি/এসপি/নভেম্বর ১৩, ২০২৪)