রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুর জেলা বিএনপি'র সদস্য সচিব একে কিবরিয়া স্বপন বলেছেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ হবে একটি বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।’ সম্প্রতি উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের সাথে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

ফরিদপুর চকবাজার মার্কেটের বণিক সমিতি'র কার্যালয়ে বসে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের সাথে একান্ত আলাপকালে সমসাময়িক রাজনীতি ও তাঁর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে রেকর্ডেড বক্তব্য প্রদান করেন আশির দশকে ছাত্রদলের হয়ে এরশাদ পতন আন্দোলনে অন্যতম ভুমিকা রাখা সাবেক এই ছাত্রনেতা।

বিএনপি নেতা কিবরিয়া স্বপন তাঁর বক্তব্যে জানান, 'আমি এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেশি যে বাংলাদেশে কোন জাতি ধর্ম বর্ণ গোত্রের কোন ভেদাভেদ থাকবে। সকল রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনগুলোর মধ্যে খুব বেশি দুরত্ব থাকবেনা, সবার মধ্যে একটি আন্তরিক সম্পর্ক থাকবে। ধনী-গরিব থাকলে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ও হিংসা বিদ্বেষ থাকবে না। সমাজে 'দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন' এমন মনোভাব বিরাজ করবে সবার মধ্যে। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতিকে প্রায় শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে হবে এবং শতভাগ জবাবদিহিতামূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেখানে প্রত্যেকে তার কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে'।

এক প্রশ্নের জবাবে এই গুণী নেতা জানান, 'বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একটি দল। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে বিশ্বাস করেন, তাদেরকে সাথে নিয়ে বিএনপি আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে'।

তিনি আরও বলেন, 'বিএনপি কখনোই কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধদের পক্ষে নয়। রাজনৈতিক কর্মীদের দোষ ত্রুটি থাকতে পারে তার দায় ব্যক্তির, কোন সংগঠনের নয়'।

তিনি বলেন, 'আমাদের প্রিয় নেতা দেশনায়ক তারেক রহমান ইতিমধ্যে আমাদের দলের অবস্থান পরিস্কার করেছেন। আমরা কোন রাজনৈতিক সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা সমর্থন করিনা। এমনকি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সেটা করার অধিকার নিয়েও প্রশ্ন আছে অনেকেরই। সর্বোপরি সব দলকে সাথে নিয়েই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় গণতন্ত্র বিশ্বাসী বিএনপি'।

তিনি বলেন, 'এই দেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক সংগঠনের রাজনীতি করার অধিকার আছে। সবাই স্বাধীনভাবে দল করবে, জনগণ বিচার করে সিদ্ধান্ত নিবেন কোন দলকে তারা গ্রহণ করবেব, কোন দলকে করবেন না'।

ফরিদপুরের বিএনপি'র বর্তমান রাজনীতির অবস্থা সম্পর্কে জেলা সদস্য সচিব একে কিবরিয়া স্বপন উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, দেখুন ফরিদপুর সব সময়ই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির এক চারণভূমি হিসেবে খ্যাত। এখানে বিএনপি'র সমর্থন যে কোন দলের থেকে বেশি আছে'।

ফরিদপুরে বিএনপির অতীত ইতিহাস স্বরণ করিয়ে দিয়ে তিনি আরও জানান, 'অতীতে ফরিদপুরে যতোগুলো নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে ও সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরেছে, ওইসব নির্বাচনের বেশিরভাগ আসনেই বিএনপি জয়লাভ করেছে'।

ফরিদপুরে বিএনপি'র রাজনীতিতে ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত ওই নেতা আরও জানান, আমাদের ভূল ত্রুতি গুলোকে অভারকাম করে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলে, এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে, আগামী সংসদ নির্বাচনে এই জেলার বেশিরভাগ আসনেই বিএনপি'র প্রার্থীরা জয়লাভ করবে, এতে কোন সন্দেহ নাই'।

প্রায় সারাটি জীবন দলের পক্ষে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই সংগ্রাম করা রাজপথের এই লড়াকু সৈনিক ও জেলা বিএনপি'র পোড়খাওয়া, ত্যাগী ও সৎ রাজনীতিবিদ কিবরিয়া স্বপন উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানিয়েছেন, 'দলের পক্ষে মানুষের জন্য রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করেছি, এবার গণ মানুষের জন্য নিজ হাতে কিছু করার সুযোগ চাই'।

কিবরিয়া স্বপন স্পষ্ট করে জানান, 'আপনাকে দেয়া এই সাক্ষাতকারের মাধ্যমে ফরিদপুরবাসীকে জানাতে চাই, আমি এবার ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচন করতে ইচ্ছুক। সেইভাবে ইতিমধ্যে আমি মানসিক প্রস্তুতি ও সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। সেই লক্ষ্যেই দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমি আমার দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে জেলার স্থানীয় তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরকেও অভিহিত করেছি। আপনি জানেন, এর আগেও আমি দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলাম, কিন্তু দল আমাকে তখন বিবেচনা করেনি। দল যাকে দিয়েছিলো তার জন্য কাজ করেছি'। নিজ দল বিএনপি'র প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে এই ত্যাগী রাজনীতিবিদ আরও বলেন, 'আশা করছি দল আমাকে আমার রাজনৈতিক ত্যাগ ও শ্রম বিবেচনা করে এবার নিশ্চয়ই আমাকেই দলীয় মনোনয়ন দিবেন। আর দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো, গণ মানুষের পাশে থেকে সরাসরি সেবা করার সুযোগ পাবো'।

উল্লেখ করা যেতে পারে, বিএনপি নেতা একে কিবরিয়া স্বপন ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সদস্য হিসেবে যোগদান করে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে সরাসরি সক্রিয় হোন। ১৯৮৭ সালে তিনি জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক, ১৯৯১ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৯৯৪ সালে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর ছাত্রদল ছেড়ে জেলা যুবদলের রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন কিবরিয়া স্বপন। ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ফরিদপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এবং ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ফরিদপুর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বিএনপি'র এই ত্যাগী, পরিশ্রমী ও পরিক্ষিত নেতা।

তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির হাতে অসংখ্য জুলুম, অত্যাচার ও নিপিড়ন সহ্য করেও জাতীয়তাবাদী রাজনীতি থেকে এক মুহুর্তের জন্যও পিছু হটেননি। নিপিড়ন, অত্যাচার সহ্য করেছেন, সব সময় ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোভলীয় প্রস্তাব। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান ও দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনায় সবসময় রাজনীতির মাঠে ছিলেন আপোষহীন, অটল ও অবিচলন। আগের হিসেব বাদ দিলেও শুধু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই পাঁচবার জেলে গিয়ে মোট ১৩ মাস কারাগারে কাটিয়েছেন এই নেতা। অগুনিত মামলা, এবং সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ রাজপথে অসংখ্যবার হামলার শিকার হয়ে নিজের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে বিএনপিকে আকড়ে ধরে। এরপর, যুবদল ছেড়ে বিএনপি'র মূল দলের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার প্রায় পাঁচ বছর পরে, ২০২২ সালের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর ফরিদপুর জেলা সম্মেলনে- একে কিবরিয়া স্বপনকে ফরিদপুর জেলা বিএনপি'র সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেয় দলটি। তখন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তাঁকে দেওয়া দলের অর্পিত দায়িত্ব অত্যন্ত সফলতার সাথে নিরলসভাবে পালন করে চলেছেন রাজনীতিবিদ একে কিবরিয়া স্বপন।

রাজনীতিবিদ হিসেবে দল মত নির্বিশেষে ফরিদপুরের স্থানীয় সকল জনগণের মধ্যে জেলা বিএনপি'র সদস্য সচিব একে কিবরিয়া স্বপনের একটি সুনাম রয়েছে। মুলতঃ এই সুনামটি তাঁর চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য, শিষ্টাচার, সততা, জনস্বার্থে আপোষহীন মনেভাব ও অতিশয় মানবিক গুণাবলির কারণে সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকের ধারণা।

(আরআর/এসপি/নভেম্বর ১২, ২০২৪)