ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীতে চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৬৬৩ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারনে অধিকাংশ ধান তলিয়ে যায়। পানি নেমে যাওয়ার পর দৃশ্যমান হয়েছে ধান। কৃষাণ-কৃষাণিরা অকান্ত পরিশ্রম করে সঠিক পরিচর্যা করায় মাঠের সবুজ প্রকৃতিতে ধরেছে সোনালী রং। কিন্তু কৃষকের স্বপ্নের সোনাঝরা ধানে আঘাত হেনেছে সর্বনাশা ইঁদুর। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী এ অঞ্চলের প্রায় ১৫ থেকে ২০ ভাগ কেটে ফসল নষ্ট করছে ইঁদুর। এই হিসেবে ঈশ্বরদীতে আমনের মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪-৫ হাজার মেট্রিকটন ধান মাঠেই নষ্ট হচ্ছে।

ঈশ্বরদী কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদী উপজেলায় মোট ৩ হাজার ৬৬৩ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। চাষ হওয়া জমি থেকে আমনের সংগৃহীত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭ হাজার ৮৩৯ মেট্টিক টন। যদি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ইঁদুর নষ্ট করে তাহলে লক্ষ্যমাত্রার ৪,১৭৬ থেকে ৫,৫৬৭ মেট্রিকটন ধান ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ইঁদুর দ্বারা ১৫ থেকে ২০ ভাগ ফসল কেটে নষ্ট করার হিসেব দেশের সব ফসলের উপর গড়ে নির্ণয় করেছে কৃষি বিভাগ। এখানে ইঁদুর দ্বারা আমন ধান ক্ষতি এতটা নাও হতে পারে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।

ঈশ্বরদীর আমন ধান চাষের প্রধান এলাকাগুলো বিশেষ করে, মুলাডুলি, পতিরাজপুর, বাঘহাছলা, অরণকোলা মাঠ ঘুরে এবং কৃষকদের সাথে কথা বলে ধানের জমি থেকে ইঁদুরের আক্রমন ও তাড়ানোর নানা কৌশল প্রয়োগের বিষয়ে জানা গেছে।

আমন চাষী মিনহাজ উদ্দিন বলেন, আমি সাড়ে সাত বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেলেও ইঁদুর থেকে রক্ষার উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। আমার একাধিক জমির প্রায় অর্ধেক ধান ইঁদুর কেটে সাবার করেছে। ধান কাটার উপযোগী না হওয়ায় কাটতে পারছি না।

কৃষক হাসেম আলী বলেন, গ্যাস ট্যাবলেট, বিষ ট্যাবলেট দিয়েও ইঁদুরের কবল থেকে ধান গুলো রক্ষা করতে পারছিনা। যে-যা বলছে পাাগলের মত তাই করছি, তবুও ইঁদুর থেকে রেহাই হচ্ছে না। জানিনা চার বিঘা জমি থেকে কতটুকু ধান বাড়িতে নিয়ে যেতে পারব।

জমিতে ইঁদুরের গর্তে কলার গাছ পুতে দেওয়া রওশন বলেন, বিষ দিয়েও কোন সুফল পাইনি। ইঁদুরের কাছে আমরা হেরে যাচ্ছি। কষ্টের ধান কতটুকু ঘরে নিতে পারব সেটাই এখন বড় দুঃশ্চিন্তা।

ইঁদুরের উপর রাগ করে আধাপাকা ধান কর্তন কারী কৃষক মুনতাজ বাবু বলেন, কৃষি বিপনি থেকে নানা প্রকার ইঁদুর মারা বিষ প্রয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপায়ও অবলম্বন করেছি। তবুও রক্ষা করতে পারিনি। ইঁদুর তাড়াতে জমিতে কলা পাতা, পলিথিনও দিয়েছি। আমার প্রায় অর্ধেক ধান কেটে শেষ করেছে ইঁদুর। তাই আধাপাকা ধান কেটে নিচ্ছি। ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, এখানে ইঁদুরের অত্যাচারটা তুলনামূলক ভাবে একটু বেশী। আমরা ইঁদুর নিধনের জন্য কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়েছি। ইঁদুর মারার জন্য কৃষকদের পুরুষ্কৃত করা হয়। ইঁদুর মারার জন্য বিষ ট্যাবলেট, বিষ টোপসহ নানা উপকরণ ও পরামর্শ প্রদান করা হয়। জাতীয়ভাবেই ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ফসল কেটে নষ্ট করছে ইঁদুর। আমন ধান এবং শীত কালীন গমে ইঁদুর সবচে বেশী ভয়াবহতা দেখায়। এখানে আমন ধানে এতোটা ক্ষতি নাও হতে পারে। তবে ইঁদুরের হাত থেকে ফসল বাঁচাতে ইঁদুর মারার বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।

(এসকেকে/এসপি/নভেম্বর ১২, ২০২৪)