চাটমোহর প্রতিনিধি : আগের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে দুই মাসের মাথায় আবারও পাবনার চাটমোহরে মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এবার মহানবী (সাঃ) কে নিয়ে কটুক্তি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করেছে স্থানীয় কিছু বিক্ষুব্ধ মানুষ।

রবিবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর ভাঙচুরের অভিযোগে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। পরে স্থানীয় জনতা পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে।

খবর পেয়ে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একপর্যায়ে আটককৃতদের ছেড়ে দিলে ঘেরাও কর্মসূচি তুলে নিয়ে ফিরে যায় এলাকাবাসী।

চাটমোহর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক প্রবীর কুমার দত্ত চৈতন্য সমকালকে জানান, উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের কালা সাহার ছেলে প্রশান্ত কুমার সাহা (২৫) গত শনিবার (০৯ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মহানবী (সাঃ) কে নিয়ে কটুক্তি করে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি ঢাকায় থাকেন বলে জানা গেছে।

এতে ওই এলাকার মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওইদিন বিকেলে ও রাতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে হিন্দু সম্প্রদায় ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না খোলার হুশিয়ারী দেয়। এতে রোববার (১০ নভেম্বর) সারাদিন এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে।

এক পর্যায় প্রশাসনের হস্থক্ষেপে পরিস্ত্রিতি শান্ত হয়। ব্যবসায়ীদের দোকান খোলার অনুমতিও দেয়া হয়। এরমধ্যে রোববার রাত ৮টার দিকে বেশকিছু মানুষ একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বল্লভপুর এলাকার সার্বজনিন মহাদেব মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাংচুর করে। এতে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়দের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পরে। পরে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পনিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

এদিকে ভাঙচুরের ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করে হান্ডিয়াল পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকে।

খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেদুয়ানুল হালিম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদি হাসান শাকিল, সহকারি পুলিশ সুপার হাবিবুল ইসলাম, থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

পরে বিক্ষুব্ধ জনতাকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে তারা। সেইসাথে আটক তিনজনকে ছেড়ে দেয়া হয়। তখন বিক্ষুব্ধ জনতা ঘেরাও কর্মসূচি তুলে নিয়ে ফিরে যায়।

এ বিষয়ে চাটমোহর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার হাবিবুল ইসলাম সমকালকে জানান, ঘটনার পরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হলেও তারা জড়িত না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই মন্দির এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেদুয়ানুল হালিম সমকালকে বলেন, মন্দির কর্তৃপক্ষকে থানায় মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু মিছিল থেকেই মন্দিরে হামলা হয়েছে, তাই আমাদের সন্দেহভাজন আসামী তারা মিছিলেই থাকবে। মিছিলের ভিডিও ফুটেজে চেহারা দেখে আমরা যাদের সনাক্ত করতে পারবো, তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।

উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল পশ্চিমপাড়া ভদ্রা কালীমাতা মন্দিরে তিনটি প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। সেই ঘটনায় মামলা হলেও আজও ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।

(এসএইচ/এসপি/নভেম্বর ১১, ২০২৪)