ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : দুর্যোগ কাটিয়ে আগাম শিম চাষিরা আশার আলো দেখছেন। দফায় দফায় অতিবৃষ্টিতে আগাম শিমের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে। এতে ৯১০ হেক্টর আগাম শিমের অধিকাংশ জমি পানিতে ডুবে যাওয়ায় পোকার আক্রমণে গাছের গোড়া পচন ধরে পাতা শুকিয়ে হলুদ যায়। ঝরে যায় শিম গাছের ফুল। ডুবে থাকা শিমতে থেকে পানি নিষ্কাশনের পর চাষিরা কীটনাশক ও সার ব্যবহার এবং পরিচর্যা করায় অধিকাংশ শিম গাছ প্রাণ পেয়েছে। তিন সপ্তাহ ধরে শিমের ফলন শুরু হয়েছে। চাষিরা তে থেকে শিম সংগ্রহ ও বাজারজাত করছেন। ফলে অতিবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্থ শিম চাষিদের স্বস্তি ফিরেছে। শিমের দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা আশার আলো দেখছেন।

জানা যায়, শিম শীতকালীন সবজি হলেও বেশি লাভের আশায় ৮ বছর ধরে আগাম জাতের রূপবান ও অটোজাতের শিম চাষ শুরু হয়। শীতের আগেই শিম বাজারে ওঠায় দাম বেশি পান। জ্যৈষ্ঠের শেষ ও আষাঢ়ের শুরুতে আগাম শিমের আবাদ শুরু হয়। ভাদ্র মাসের শুরুতেই ফলন শুরু হয়। এবারে শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসজুড়ে দফায় দফায় অতিবৃষ্টির কারণে অধিকাংশ শিমক্ষেত পানিতে ডুবে যায়। এতে ফলন বিপর্যয় হয়। নির্ধারিত সময়ে ফলন না হওয়ায় চাষিরা হয় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলা শিম চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। আগাম ৯১০ হেক্টরসহ এবারে ১৪০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। বর্ষণের কারণে শিমচাষিসহ যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, তাদের উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নে প্রায় ২০ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে শিম চাষ হয়। শিমগ্রাম হিসেবে পরিচিত রামনাথপুর, শেখপাড়া, ফরিদপুর, গোয়ালবাথান ও বাঘহাছলা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, শিমক্ষেতের পানি নিষ্কাশনের পর পরিচর্যা শুরু হয়েছে। সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে মৃতপ্রায় শিম গাছ অনেকটা সবল হয়ে উঠেছে। গাছে গাছে ফুটেছে ফুল। থোকায় থোকায় শিম ধরছে। চাষিরা প্রতিদিনই শিম সংগ্রহ করে বিক্রি করছন। দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

বাঘহাছলা গ্রামের বাসিদ প্রামানিক বলেন, বর্ষার কারণে ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় এতদিন শিমের ফলন হয়নি। শিমের বাজারদর কিছুটা কমেছে তবুও পাইকারি ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। জলাবদ্ধতা না হলে এতদিন শিম চাষের খরচ উঠে লাভ হতো।

রামনাথপুর গ্রামের মজনু শেখ বলেন, এবারে শিম আবাদের পর নানা দুর্যোগ পোহাতে হয়েছে। আল্লাহর রহমতে এখন ফলন শুরু হয়েছে। কয়েকদফা ১৩০-১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। শিমের বাজারদর না কমলে চাষিরা ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবে।

মুলাডুলি কাঁচামালের আড়তদার আলম ট্রেডার্সের সুজন শেখ বলেন, আগাম জাতের শিম আড়তে উঠছে। প্রবল বর্ষণে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখন আগাম শিমের পূর্ণ মৌসুম। প্রতিদিন আড়ত থেকে কমপে ৩০-৩৫ ট্রাক শিম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেত। এখন শিম ও ঢ্যাঁড়শ মিলে ২০-২৫ ট্রাক যাচ্ছে। আশাকরি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বেচা-কেনা জমজমাট হবে। আড়তে শিম ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় শিমসহ আগাম জাতের সবজির ক্ষতি হয়েছে। এখন নতুন উদ্যমে আবার চাষাবাদ শুরু হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করছেন। যারা জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের রবি প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। এতে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

(এসকেকে/এসপি/নভেম্বর ১১, ২০২৪)