রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ফরিদপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের দিগনগর সাহাপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দিরে প্রতিবেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রবেশ ঠেকাতে বাউন্ডারি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় লিটন সাহা'র বিরুদ্ধে। এ সময় লিটন সাহা ওই সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরের নাম ফলক ভেঙে ফেলেন বলেও জানায় স্থানীয় বাসিন্দারা।

রবিবার (১০ নভেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে এমন ঘনটা ঘটে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সময়ে এই সার্বজনীন ওই দূর্গা মন্দিরটি ব্যবহার করে আসছিলেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এলাকাবাসী পূজা উৎসব পালনের কথা চিন্তা করে প্রায় ৩৫ বছর আগে সাহা পাড়ার রাস্তার পাশে এই মন্দিরটির জায়গা দান করেছিলেন প্রয়াত রঞ্জিত সাহা। রঞ্জিত সাহা ওই মন্দিরের জায়গাটি দান করলেও জীবদ্দশায় তা দলিল করে দিয়ে যেতে পারেননি তিনি। রঞ্জিত সাহা যখন জমিটি দান করেছিলেন তখন ওই জমির দাম ছিল মাত্র পাঁচ হাজার টাকা শতাংশ, যা এখন তিন লাখ টাকা শতাংশ হওয়ায়, দাতার ছেলে লিটন সাহা মন্দিরটি এলাকাবাসীকে ব্যবহার করতে না দিয়ে তা ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র করছেন বলে জানান মন্দির কমিটির সহকারি কোষাধ্যক্ষ সুমন সাহা।

এদিকে, লিটন সাহা'র বাড়ীর সাথে রাস্তার দিকে মন্দিরটি থাকায় বাড়ীর বাউন্ডারি'র সাথে তিনি মন্দিরটিকে বাউন্ডারি দিয়ে ঘিরে ফেলতে গেলে স্থানীয় হিন্দুদের বাধার মুখে তা আর সম্পুর্ণ করতে পারেননি। পরে এটি নিয়ে হট্টগোলের সৃষ্টি হলে ফরিদপুর কোতয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রবিউল এর নেতৃত্বে পুলিশের আট সদস্যের একটি দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। মন্দিরটি ঘিরে লিটন সাহা ও তাঁর পরিবারের সাথে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যান্য প্রতিবেশিদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

স্থানীয় আনন্দ সাহার স্ত্রী ইতি সাহা জানান, আমরা ৩০/৩৫ বছর এই সার্বজনীন এই পূজা মন্দিরে পূজা অর্চনা করে আসছি। হঠাৎ করে লিটন সাহা ঘোষণা দিয়ে আমাদের মন্দিরে যেতে নিষেধ করে বাউন্ডারি দিয়ে দেয়; এই কাজ তিনি করতে পারেন না, যে কোন মূল্যে এই মন্দিরে আমরা পূজা অর্চনা চালিয়ে যেতে চাই। এটা একটি সার্বজনীন দুর্গা মন্দির হিসেবে স্বর্গীয় রঞ্জিত সাহা এলাকাবাসীকে দান করে গেছেন। এই মন্দির বন্ধ করতে দিবো না'। স্থানীয়ভাবে বসে দ্রুত সমাধানের দাবি জানান ইতি সাহা।

ওই মন্দিরের ক্রিয়া সম্পাদক লিংকন চক্রবর্তী, মন্দিরটি সার্বজনীন হলেও লিটন সাহা বাউন্ডারি দেওয়ার সময় এই মন্দিরটির নাম ফলক ভেঙে ফেলেছেন তিনি'। সরেজমিনে গিয়ে তার সত্যতাও মিলেছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে লিটন সাহা জানানা, এটি সার্বজনীন দূর্গা মন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকলেও এই মনৃদিরের জায়গা তো আমার বাবার। আর আমার বাড়ীতে আমি বাউন্ডারি দিবো এতে কার কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়'। কিছুক্ষণ পরে লিটন সাহা দৈনিক বাংলা ৭১ কে জানান, আসলে এই মন্দিরের জায়গা আমার বাবা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য দান করে গেছেন, কিন্তু রেজিষ্ট্রেশন করে দেননি। এখানে পূজা অর্চনা করতে বাধা দেওয়া হয়নি হবেও না, তবে অনেক রাত পর্যন্ত মন্দিরের সামনে কেরাম খেলা হয়, আমার বাড়ীতে মা বোন আছে। তাই বাউন্ডারি দিয়ে দিচ্ছি। এতে এতো চিল্লাচিল্লি'র কিছু নেই, মারামারি চিল্লাচিল্লিও কিছু নেই'।

পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. ফরহাদ হোসেন জানান, '৩০ বছরের উপরে এই সার্বজনীন পূজা মন্দিরটি স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ব্যবহার করে আসছেন। প্রয়াত রঞ্জিত সাহা রেজিষ্ট্রেশন করে দিলেও এটা সবার জন্য দান করে গেছেন সেটা আমরা সবাই জানি। তিনি বলেন, এই মন্দিরটি রাস্তার কাছে হওয়ায় বিভিন্ন দলের অনেক রাজনৈতিক নেতাবৃন্দ প্রতি বছর পরিদর্শন করতে আসেন। এই মন্দিরটি আমরা সার্বজনীন হিসেবেই দেখতে চাই। মন্দিরটি ঘিরে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা কাঙ্খিত নয় বলেও জানান ফরহাদ।

ফরিদপুর কোতয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রবিউল জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি, মন্দিরের বাউন্ডারির কাজও বন্ধ রেখেছি। ভুক্তভোগীদের থানায় অভিযোগ করতে পরামর্শ দিয়েছি। যদি দুই পক্ষকে ডেকে ও স্থানীয়ভাবে বসে এটির সমাধান করা যায়, তবে ভালো! নাহলে- অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে'।

(আরআর/এএস/নভেম্বর ১০, ২০২৪)