মাদারীপুর প্রতিনিধি : দখল আর ময়লা আবর্জনায় ভরে যাওয়া মাদারীপুর শহরের ইটেরপুল খালটি উদ্ধারে নেমেছে যুব সমাজ ও বিডি ক্লিন। মাদারীপুর জেলা প্রশাসন ও যুব উন্নয়নের আয়োজনে একদল তরুণদের সহযোগিতায় শুরু হয় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম। 

আজ শুক্রবার সকালে থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে এই পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন তরুণরা। এসময় তাদের সাথে খালটির পানি প্রবাহ টিকিয়ে রাখতে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও এগিয়ে আসেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর শহরের ইটেরপুল থেকে পাথুরিয়ারপাড় পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার একালাজুড়ে ইটেরপুল খালটি। এক সময় এই খাল দিয়ে বরিশাল যাওয়া যেত বলে, অনেকেই এই খালকে বরিশাল খাল বলেও জানে। দীর্ঘদিনে সংস্কার না হওয়ায়, দখল আর ময়লা আবর্জনায় বন্ধ হয়ে যায় খালের পানি প্রবাহ। ফলে খালটি অস্বিত্ব সংকটে পড়ে। তাছাড়া ময়লা-আবর্জনায় দুর্গন্ধে আশে-পাশের মানুষজনের জীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। পাশাপাশি মশা-মাছির উপদ্রবও বেড়ে যায়। ফলে প্রতিনিয়তই দুষণ হতে থাকে পরিবেশ। এই বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। খালটি উদ্ধারে নেয়া হয় উদ্যোগ।

এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার সকাল থেকে কুকরাইল এলাকায় এই পরিস্কারের কার্যক্রম শুরু হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন ও যুব সমাজের একদল তরুণ অংশ এই কার্যক্রমে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক বিভাগ এবং এলজিইডি’র যৌথ উদ্যোগে বরিশাল খালের দুই পাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপানাও পরিষ্কার করা হয়। সে সময়ে খালটি খননের উদ্যোগ নেয়া হলেও অদৃশ্য কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।

বিডি ক্লিন এর সদস্য মো. শাকিব হোসেন বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় খাল টিকিয়ে রাখার কোন বিকল্প নেই। এজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। জেলা প্রশাসন ও যুব উন্নয়ন অধিদফতর যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে আমরা সাধুবাদ জানিয়ে তাদের সাথে কাজ করছি। এমন কাজ করতে পেরে আমরা বিডি ক্লিন-এর সদস্যরা সবাই খুশি।

মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জয়নাল তালুকদার বলেন, অযত্ন-অবহেলা, দখল আর ময়লা-আবর্জনায় এই খালটির এখন কোন অস্বিত্ব হারাতে বসেছে। অথচ ছোটবেলায় দেখছি এই খাল দিয়ে বড় বড় নৌযান চলাচল করছে। এই খালটি পুনরায় পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হোক। তাহলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে।

মাদারীপুর মৈত্রি মিডিয়া সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক এসএম আরাফাত হাসান বলেন, খালটি দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনায় ভরে ছিলো। ফলে পানি প্রবাহ হতো না। এতে করে কৃষকরা তাদের চাষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পেতো না। এই খালটি সম্পূর্ণভাবে পরিস্কার ও দখলমুক্ত হলে সাধারণ কৃষকরা উপকৃত হবে।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তানিয়া ফেরদৌস বলেন, খালটির পানি প্রবাহ টিকিয়ে রাখতে এগিয়ে আসতে হবে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। প্রশাসনের একার পক্ষে এমন কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আশপাশের বাসিন্দাদের সচেতন হতে হবে, ময়লা আর আবর্জনা খালের ভেতর না ফেললে এর পানি প্রবাহ ঠিক থাকবে।

(এএসএ/এসপি/নভেম্বর ০৮, ২০২৪)