নতুন প্রজন্মের হাত ধরে চীনের সিনেমায় বিপ্লব
বিনোদন ডেস্ক : চীনের চলচ্চিত্র শিল্পে নতুন প্রজন্মের নির্মাতারা তাদের ব্যক্তিগত ও আধুনিক গল্পের মাধ্যমে পরিবর্তন আনছেন। এরই মধ্যে জিয়াং শিয়াওশুয়ান-এর প্রথম ছবি ‘টু কিল এ মঙ্গোলিয়ান হর্স’ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। তরুণ নির্মাতারা সমাজের বর্তমান পরিবর্তন, ব্যক্তিগত সংগ্রাম এবং প্রজন্মগত সংঘর্ষের মতো বিষয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন।
চীনের অ্যানি সাং, ঝাং শুয়ু এবং কিউ ইয়াংসহ আরও অনেক নির্মাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে খ্যাতি অর্জন করেছেন। সাং, যিনি সম্প্রতি বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, চীনা চলচ্চিত্র শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পৌঁছেছে। সেখানে তরুণ নির্মাতাদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
চীনের চলচ্চিত্র শিল্পে নতুন একটি তরুণ প্রজন্ম সাড়া ফেলছে, যারা দেশটির আধুনিক জীবনের ওপর ব্যক্তিগত ও নতুন ধরনের গল্প নিয়ে কাজ করছেন। গুয়ান হু, যিনি চীনের ষষ্ঠ প্রজন্মের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে একজন, সম্প্রতি তার ছবি ‘ব্ল্যাক ডগ’-এর জন্য কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পুরস্কৃত হয়েছেন। চীনের ষষ্ঠ প্রজন্মের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য এটি।
এখন দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এক নতুন প্রজন্মের নির্মাতারা, যারা তাদের নিজস্ব ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চলচ্চিত্র তৈরি করছেন। এর মধ্যে জিয়াং শিয়াওশুয়ান অন্যতম, যার প্রথম চলচ্চিত্র ‘টু কিল এ মঙ্গোলিয়ান হর্স’ ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হয়। ছবিটি মঙ্গোলিয়ার এক তরুণ ঘোড়াওয়ালার গল্প, যিনি আধুনিক জীবন এবং ঐতিহ্যগত জীবনের মধ্যে দ্বিধায় পড়েন। এই কাজের জন্য তিনি ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অথরস আন্ডার ৪০ অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। তিনি এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রীন অ্যাওয়ার্ডসে সেরা পরিচালক এবং সেরা চলচ্চিত্রের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
অ্যানি সাং, একজন বেইজিংভিত্তিক প্রযোজক, নতুন তরুণ নির্মাতাদের মধ্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ মুখ। তিনি বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং তার কাজের জন্য মোস্ট প্রমিজিং ফিল্মমেকার অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। তিনি ‘ফ্রাঙ্কেনফিশ বাই দ্য রিভার’ চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে।
আরেক তরুণ নির্মাতা ঝাং শুয়ু তার প্রথম ছবি ‘ফিশবোন’ নিয়ে সফলতা অর্জন করেছেন। এটি শাংহাই ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হয় এবং বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রশংসিত হয়। ছবিটি একটি তরুণীকে কেন্দ্র করে, যিনি কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পর জীবনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ঝাং মনে করেন, চীনা দর্শকরা এখন এমন গল্পে আগ্রহী যা তাদের বর্তমান জীবন এবং সমাজের পরিবর্তনকে তুলে ধরে।
তবে এমন সৃজনশীল ও ব্যক্তিগত গল্পের চলচ্চিত্রগুলো চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে কতটা সফল হবে, তা নিয়ে কিছু সংশয় রয়েছে। কিউ ইয়াং, যিনি তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘সাম রেইন মাস্ট ফল’ নিয়ে বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পুরস্কৃত হয়েছেন। তিনি জানান, তারা এখনও নিশ্চিত নন, তাদের চলচ্চিত্রগুলো চীনের বাজারে বড় সাফল্য পাবে কিনা। তবুও তারা আশাবাদী।
জিয়াং শিয়াওশুয়ান বলেন, ‘আমি আশা করি নতুন প্রজন্ম চলচ্চিত্রের বর্তমান দৃশ্যপটকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে এবং সাহসী, উন্মুক্ত এবং অভিযোজনের জন্য প্রস্তুত থাকবে।’
চীনের চলচ্চিত্র শিল্পে তরুণ নির্মাতাদের এই নতুন জোয়ার তাদের সাহসী ও আধুনিক গল্পের মাধ্যমে চীনা চলচ্চিত্রের ভবিষ্যতকে নতুনভাবে গড়ে তোলার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
(ওএস/এএস/নভেম্বর ০৭, ২০২৪)