ভৈরবে তৈরি হচ্ছে ভেজাল গুড়, অভিযোগ পেয়েও নীরব প্রশাসন
সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : ভৈরবে বিষাক্ত ও ভারতীয় অবৈধ অপরিশোধিত পচা চিনির সাথে ফিটকারী, হাইড্রোজ ও রং মিশিয়ে তৈরি করছেন ভেজাল গুড়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে কারখানাটি। ৪ নভেম্বর সোমবার রাত ৯টায় স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পৌর শহরের রাণীর বাজার শাহী মসজিদের সামনে মিশুক ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ভেজাল গুড় তৈরি কারখানা দেখতে পায় এলাকাবাসী।
কারখানার মালিক সিন্দু বাবু। পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তার ছেলে শিমুল পোদ্দার। খবর পেয়ে কারখানায় গিয়ে সাংবাদিকরা দেখতে পান ভারতীয় অবৈধ অপরিশোধিত পঁচা চিনি দিয়ে তৈরি করছে গুড়। সাথেই রয়েছে ফিটকারী, হাইড্রোজ ও রং। সত্যতা দেখে এসময় কয়েকজন সাংবাদিক উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করলে তারা ঘটনাস্থলে আসতে রাজি হয়নি। প্রশাসনের গড়িমসি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অদৃশ্য কারণে প্রশাসনের অনুপস্থিতির রহস্যের সৃষ্টি করে।
এদিকে স্থানীয়দের দাবি, ভৈরব শহরের একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ শাহী মসজিদ। পাশেই ভেজাল গুড় তৈরির কারখানা। এখানে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। নিয়মিত কারখানায় তৈরি হয় ভেজাল মসলা। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ ও এক যুবলীগ নেতার শেল্টারে দীর্ঘদিন যাবত ভেজাল গুড় তৈরি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেন। যুবলীগ নেতার ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রহিমা বেগম জানান, কারখানার পাশেই আমি পরিবার নিয়ে তিনতলা বিল্ডিংয়ে থাকি। কারখানার কালো ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছি আমরা। পঁচা বাসি গন্ধে বমি পর্যন্ত হয়। আবাসিক এলাকায় কারখানা কীভাবে চালায়। এসময় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে ইয়াসিন মিয়া নামের এক হোটেল মালিক বলেন, আমরা ভয়ে কথা বলি না। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় তারা দীর্ঘদিন যাবত ভেজাল গুড় তৈরি করে আসছে।
এ বিষয়ে কারখানার মালিক শিমুল পোদ্দার বলেন, চিনি দিয়েই আমি গুড় তৈরি করি। ইন্ডিয়া থেকে চিনি আসে। সারা বাংলাদেশেই চিনি দিয়ে গুড় তৈরি হয়। তাই আমিও তৈরি করি। আখের অনেক দাম আবার তা সারা বছর পাওয়া যায় না। তাই চিনিতেই ভরসা।
সে আরো জানায়, প্রতিদিন ১০০ পাটা গুড় বানাতে পারেন। প্রতি পাটা গুড় বিক্রি হয় ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। ভৈরবে এক প্রভাবশালী নেতাকে নিয়মিত গুড় বানিয়ে দিতেন তার প্রতিষ্ঠানে বিক্রির জন্য এবং নিজেও বিক্রি করতেন।
এ বিষয়ে পৌরসভার স্যানেটারি ইন্সপেক্টর নাসিমা বেগম বলেন, আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে কারখানায় এসেছি। এই কারখানাকে এর আগেও জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ভেজাল গুড়ের কারখানার বিষয়ে আমি নবাগত উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিনকে অবহিত করেছি। বর্তমানে কারখানাটি তালাবদ্ধ করে চাবি নিয়ে এসেছি। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ভেজাল জিনিস পত্র দিয়ে তৈরি করছে গুড়। এই গুড় স্বাস্থ্য সম্মত নয়।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহম্মদ বলেন, ভেজাল সব খাবারই মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। চিনি, ফিটকারী, হাইড্রোজ ও রং ব্যবহার করে তৈরি গুড় খেলে মানবদেহের অনেক ক্ষতি হবে। প্রতিটি উপাদানই ক্ষতিকারক। এই ভেজাল গুড় মানুষের পেটে বেশি সমস্যা হবে। এতে করে লিভার নষ্ট হতে পারে। ধীরে ধীরে মানবদেহে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিবে।
(এসএস/এএস/নভেম্বর ০৫, ২০২৪)