সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : জুয়া খেলায় টাকা হেরে জুয়ার আয়োজনকারী ব্যক্তিকে টাকা দিতে না পারায় দুঃখু মিয়া নামক এক ব্যক্তির কপালে নেমে আসে অনেক দুঃখ। দুঃখু মিয়ার বাড়ি কেন্দুয়া উপজেলার ৯নং নওপাড়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের কুতুবপুর গ্রামে।

অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশি ফেরদৌস মিয়া ওই জুয়া খেলার আয়োজনকারী। তার নিজের বাড়িতেই বসে জুয়ার আসর। দুঃখু মিয়াও একজন পেশাদার জুয়ারী। জুয়া খেলার টাকা দিতে না পারায় ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে দুঃখু মিয়াকে মারপিট করেন ফেরদৌস মিয়া। এঘটনার পর দুঃখু মিয়া বেশ কয়েকজন গ্রাম্য মাতাব্বরের নিকট তাকে মারপিটের ঘটনাটি নালিশ করেন। মারপিটের ঘটনাটি কেন গ্রাম্য মাতাব্বরদের কাছে নালিশ করা হল এই অপরাধে বৃহস্পতিবার রাতে আবারো দুঃখু মিয়াকে মারপিট করেন ফেরদৌস মিয়া। মারপিটের ঘটনার বিচার না পেয়ে লজ্জায় অপমানে বৃহস্পতিবার রাত অনুমান ১২ টার দিকে বাড়ির পাশে একটি গাছের ডালে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন তবে এ নিয়ে মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। খবর পেয়ে কেন্দুয়া থানা পুলিশ রাত অনুমান ২ টার দিকে দুঃখু মিয়ার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে কেন্দুয়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়। ময়না তদন্ত শেষে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে দুঃখু মিয়ার লাশ কুতুব গ্রামের নিজ বাড়িতে আনা হয়।

এ সময় দুঃখু মিয়ার দুই কন্যার আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠে। দুঃখু মিয়ার বড় কন্যা জুলেখা খাতুন বলেন আমরা দূরে থাকি। আমার বাবা জুয়া খেলে অনেক টাকা নষ্ট করেছে, এ নিয়ে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। আমি সন্ধ্যার আগে আসর সময় নওপাড়া বাজারের ব্রীজের কাছে আসলে অনেক লোকজন আমাকে বলেছেন আমার বাবাকে জুয়ার টাকার জন্য ফেরদৌস মিয়া মারপিট করেছে। আমার বাবা আত্মহত্যা করেছে না তাকে হত্যা করা হয়েছে তা খুজে বের করার জন্য দাবি জানাই। আমার বাবাকে মারপিটের ঘটনার বিচার চাই। এ দিকে প্রতিবেশি ফেরদৌস মিয়ার বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। যে ঘরে তিনি বসবাস করেন সেই ঘরে দরজায় তালা ঝুলছে। ফেরদৌস মিয়ার সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। গ্রামের লোকজন দাবি করছেন ফেরদৌস মিয়াকে শুক্রবার সারাদিন কেউ দেখেননি। এ বিয়ষে জানতে চাইলে ফেরদৌস মিয়ার ভাজিতি জামাই কুতুবপুর গ্রামের (নদীরপাড় বাসিন্দা) আব্দুল মন্নাফ বলেন, দুঃখু মিয়া একজন পেশাদার জুয়ারী। তিনি আমার সর্ম্পকে ফুফা হন। রাতে যখন শুনেছি ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে তখন গিয়ে আমার ফুফু সহ অন্যান্যদের শন্তানা দিয়েছি।

সকালে নদীরপাড় গুদারা ঘাট এলাকায় অনেকেই বলছেন দুঃখু মিয়াকে জুয়ার টাকার জন্য মারপিট করেছেন ফেরদৌস মিয়া। এঘটনা তিনি অনেকের কাছে নালিশ করেছিলেন। কিন্তু শালিসের আগেই তার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্নও উঠেছে।

নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউ.পি.সদস্য (মেম্বার) আবুল মিয়া বলেন জুয়ার টাকার জন্য দুঃখু মিয়াকে ফেরদৌস মিয়া মারপিট করেছেন। এঘটনা দুঃখু মিয়া গ্রামের মাতাব্বর মাজু, ইসলাম উদ্দিন সহ অনেকের কাছেই বিচার প্রার্থী হয়েছে। কিন্তু পরে শুনেছি বিচার হওয়ার আগেই ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। মেম্বার আবুল মিয়া আরো বলেন দুঃখু মিয়ার মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। আমরা এর সঠিক তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উদঘাটনের দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে গ্রাম্য মাতব্বর ইসলাম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগে চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ছেলে কেন্দুয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাদ্দাম হোসেন বলেন দুঃখু মিয়াকে জুয়ার টাকা ও বসত বাড়ি নিয়ে বিরোদের জের ধরে বৃহস্পতিবারে ফেরদৌস মিয়াও তার ছেলেরা মারপিট করেছেন। দুঃখু মিয়া আমার বাবা সহ অনেকের কাছেই বিচার প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতেই তার ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা ঘটনাটি নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।

দুঃখু মিয়াকে মারপিটের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও বিচার দাবি করি। একই সঙ্গে মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের দাবি জানাই। কেন্দুয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস.আই) শফিউল আলম বলেন, খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে দুঃখু মিয়ার ফাঁসিতে ঝুলে থাকা লাশ বাড়ির একটি গাছের ডাল থেকে উদ্ধার করেছি।

এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। সুরতহাল রির্পোট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাকে মারপিটের কথা কেউ বলেন নি। তবে মারপিট করলে ময়না তদন্ত রির্পোটে আসবে। রির্পোটে মারপিটের প্রমান পাওয়া গেলে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এসবিএস/এএস/নভেম্বর ১, ২০২৪)