শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে অনলাইনে কাজ দেওয়ার নামে প্রায় ৭’শ শিক্ষার্থী ও বেকার যুবকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে আব্দুল গাফ্ফার নামের এক প্রতারক। আব্দুল গাফ্ফার সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের বেড়াদি গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে। প্রতারক আব্দুল গফ্ফারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ইতোমধ্যে তার বাড়ি ঘেরাও করে কয়েকশত ভুক্তভোগী। তারা প্রতারক গফ্ফারকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই প্রতারণার সঙ্গে আব্দুল গাফ্ফারের বড় ভাই প্রান্ত ও মা রোকসানাও জড়িত। বাড়ি থেকে পালিয়েছে প্রান্ত। বিক্ষুব্ধরা রোকসানার কাছে তার ছেলের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলছেন, আপনারা মামলা করেন, মামলায় যদি আপনারা জয়ী হন তাহলে টাকা দিয়ে দেব।

আব্দুল গাফ্ফারের প্রতারণার শিকার হয়েছেন- বেড়াদি গ্রামের আ. কুদ্দুসের ছেলে মেহেদী হাসান, জয়নদ্দিনের ছেলে আশিক, সুজা উদ্দিনের ছেলে সজল, কোলা গ্রামের শফি দেওয়ানের ছেলে রাজীব আহমেদ ও শাকিল, রিপন মিয়ার ছেলে রিমন, মিজানুরের ছেলে মিরাজ, আ. গনির ছেলে মোজাম্মেল, ছোট মান্দারবাড়িয়া গ্রামের আবু কালামের ছেলে আতিকুর, ঝিনাইদহ পৌর এলাকার কালিকাপুর গ্রামের আব্দুল্লাহ, জিহাদুল সাবরিনা আক্তার রিয়া, হরিণাকুন্ডু উপজেলার কাপাসহাটিয়া গ্রামের পান্নু জোয়ার্দ্দারের ছেলে নয়ন ইসলাম, সদর উপজেলার সাগান্না গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে জুনায়েদ আহমেদসহ অসংখ্য বেকার যুবক ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগী ডিগ্রি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘এই গাফ্ফার আগে দুবাই ছিল। দুবাই থেকে ফিরে এলাকার যুবকদের কাছে এসকে আইটি ইন্সটিটিউট নামে একটি ওয়েব সাইট ও মোবাইল অ্যাপে সবাইকে ইনভেস্ট করতে প্রলুব্ধ করে। এই ওয়েব সাইটে মেম্বার হলে প্রতিদিন ৬ ডলার ইনকাম করা যাবে। প্রাথমিক মেম্বারশিপ নিতে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা ও চেকার মেম্বারশিপ নিলে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। চেকার মেম্বারশিপ নিলে দিনে ১২ ডলার ইনকাম হবে। প্রাথমিক মেম্বারশিপ থেকে রেফার করে ৫ জনকে মেম্বার বানালে সে চেকার মেম্বারশিপ অর্জন করবে। এছাড়া রেগুলার কাজ করলে প্রমোশন ব্যাজ অর্জন করবে আর বাড়তে থাকবে ইনকাম। এই প্রলোভনে পড়ে হলিধানী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার সাত শতাধিক মানুষ এই ওয়েব সাইটের মেম্বারশিপ নেয়। কেউ কেউ ৭ থেকে ৮ মাস আগে মেম্বার হয়ে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা উইথড্র করতে পেরেছে।’

জুনায়েদ আহমেদ বলেন, ‘গত দুই মাসে এই এলাকা থেকে ঝড়ের মতো মেম্বারশিপ কেনা হয়েছে। লোভে পড়ে কৃষক, গৃহিণী, ভ্যান চালক, বেকার, শিক্ষার্থী সবাই মেম্বারশিপ কিনেছে। কখনো ব্যাংক একাউন্টে, কখনো নগদ টাকা, কখনো মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে টাকা নিয়েছে গাফ্ফার। কয়েকদিন ধরে মেম্বাররা ইনকামের টাকা উইথড্রের জন্য চাপ দিলে গা ঢাকা দেয় গাফ্ফার। আমাদের কাছে টাকা নেওয়ার সব প্রমাণ রয়েছে।’

সজল নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘এই ঘটনায় আমরা পুলিশে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। স্থানীয় ক্যাম্পও তারা ম্যানেজ করেছে। গত রবিবার তারা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ জানালেও কোনো পুলিশ সদস্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে ঢাকায় সম্পদ গড়ে তুলেছে গাফ্ফার।’

জানা গেছে,২০২২ সালে নেইমাচিফ থেকে এসকে আইটি ডটকম নামের একটি ডোমেইন কেনা হয়। অনলাইনে ইনকামের লোভ দেখিয়ে এই ওয়েবসাইটে ৪ হাজার ৪ শতের বেশি মেম্বারশিপ বিক্রি করা হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ২ হাজারের বেশি বাংলাদেশি। ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দেওয়া আছে দুবাই।

গাফ্ফারের মা রোকসানা জানিয়েছেন, ‘তার ছেলে বউ নিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়িতে থাকেন। তার সঙ্গে তার ছেলের যোগাযোগ আছে। আইনের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের টাকা পাওনা হলে টাকা তারা দিয়ে দেবে।’

এদিকে অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ডাকবাংলা ব্রাঞ্চের ২০৫০০০৩০২০১৫২১২০২ হিসাব নাম্বারে বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগীরা টাকা জমা দিয়েছে। যেই একাউন্টটি আব্দুল গাফ্ফারের নামে।

অভিযোগকারীদের অভিযোগ মতে আব্দুল গাফ্ফার প্রায় ১০ কোটির বেশি টাকা প্রতারণা করেছে। তারা কোথায় গেলে সমাধান পাবেন সেটি ভেবেই কূল পাচ্ছে না। যেকোনো সময় হয়তো ওয়েবসাইটটিও ডাউন হয়ে যেতে পারে। ভুক্তভোগীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত এই প্রতারককে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গাফ্ফারের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস্) মুহাম্মদ মহিদুর রহমান বলেন, ‘এই বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তারপর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

(এসআই/এসপি/অক্টোবর ৩১, ২০২৪)