মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে পাওয়ার গ্রিডের ১৩২ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের টাওয়ারের নিচ থেকে যুবকের গন্ধা-পঁচা দেহাবশেষ সহ হাড়গোড় উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গত (২৬ অক্টোবর) দুপুর দেড়টার দিকে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের হারুনের টিলা (শিকারী বাড়ি) নামক এলাকার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের টাওয়ারের নিচ থেকে স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেহাবশেষটি উদ্ধার করে পুলিশ।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে উদ্ধার হওয়া দেহাবশেষটি জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা ছায়েদ মিয়ার ছেলে শাকির মিয়ার (২৭)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরের দিকে জগন্নাথপুর গ্রামের হারুনের টিলা নামক পাহাড়ি এলাকার আশপাশের বাসিন্দারা টাওয়ারের আশপাশে উদ্ভট দুর্গন্ধ পান। এর পর বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের টাওয়ারের নিচে যুবকের পচে যাওয়া দেহাবশেষের হাড়গোড় দেখতে পান পান তারা। এর পর পুলিশকে খবর দিলে দুপুর দেড়টার দিকে সদর থানা পুলিশকে সাথে নিয়ে মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজমল হোসেন এর নেতৃত্বে পুলিশ ঘচনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পঁচা, গলিত দেহাবশেষের হাড়গোড় উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

এসময় সেখান থেকে যুবকরে পড়নের সার্ট-পেন্ট ও জুতা উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী পুলিশের ধারণা জগন্নাথপুর গ্রামের ছায়েদ মিয়ার ছেলে মানষিক বিকারগ্রস্ত শাকির মিয়া উচ্চ ঝুঁকির বিদ্যুতের টাওয়ার উঠার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিচে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়। এর পর সেখানেই পড়ে থাকে মৃতদেহটি। দীর্ঘ সময় মৃতদেহটি পড়ে থাকায় বনের পশু মাংস খেয়ে ফেলায় হাড় ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট ছিলনা। তাদের ধারণা মৃতদেহটি অন্তত সাপ্তাহখানিক আগের।

এ ঘটনায় মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। মামলা নং ২৮।

রবিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজমল হোসেন জানান, টাওয়ারে উঠার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পড়ে মারা যায় শাকির। আমরা তার শরীরের হাড়গোড় সংগ্রহ করে ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে এসেছি। এগুলো ডিএনও টেস্ট করাতে ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। তিনি জানান, ২০ তারিখ থেকে তাঁর পরিবার তার কোন খোঁজ না পেয়ে ২৪ অক্টোবর তার পিতা ছায়েদ মিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

এর আগে গত ১৫ জুলাই পাওয়ার গ্রিডের ১৩২ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ওই টাওয়ারের চুড়ায় আড়াই ঘন্টা অবস্থানের পর কোন ধরনের ঝুঁকি ছাড়াই নিরাপদে নেমে এসে ও যুবক। ওই ঘটনায় তার পরিবারও মানষিক বিকারগ্রস্ত বলে জানায়। সেসময় এ ঘটনায় পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। পরে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল উপস্থিত হলে ওই যুবককে নিচ থেকে বার বার নেমে আসার আহবান জানালে কিছুক্ষণ পর সে নিজে থেকেই নেমে আসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনার একটি ভিডিও সেসময় ভাইরাল হলে রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

এলাকাবাসী জানান, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন যখন উপস্থিত হন, তখন ওই সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ ছিল। পরে বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে কিছুক্ষণের জন্য লাইনের সংযোগ বন্ধ রাখা হয়।

এদিকে পরিবার সূত্রে জানা যায়, এক সন্তানের জনক শাকির ৫ থেকে ৬ মাস ধরে মানষিক বিকারগ্রস্ত হলেও সে পেশায় মেটর-ফ্রিজ ম্যাকানিকের কাজ করে।

(একে/এসপি/অক্টোবর ২৭, ২০২৪)