শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : যেন খাল কেটে কুমির আনা হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে খাল খননের ফলে দু’পাড়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। বাসিন্দাদের গাছপালা,বসতঘর ও টয়লেট ভেঙে চলে গেছে খালগর্ভে। অপরদিকে এলজিইডি সড়কেও বেহাল অবস্থা। কোন কোন স্থানে সড়কের অর্ধেক নেমে গেছে খালে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার মকিমপুরের বাগমারা খালপাড়ের অর্ধ-শতাধিক পরিবার। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের খননে অনিয়ম আর খাল পাড়ের মাটি বিক্রি করায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

বসতভিটা ভেঙে খালে চলে যাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন মকিমপুর গ্রামের কৃষক আলম মন্ডল। স্ত্রী-সন্তান ও মাকে নিয়ে মাত্র ১শতক জমিতে মহাসড়কের পাশে খালপাড়ে বসবাস করতেন আলম। গত কয়েকদিন আগে ভাঙন শুরু হলে তার বসতভিটা খালে চলে যায়। মকিমপুর গ্রামের বাগমারা খালপাড়ের অর্ধশত পরিবার আছে ভাঙ্গন ঝুঁকিতে। খালের দু’পাশের বাসিন্দাদের গাছপালা,বসতঘর ও টয়লেট ভেঙে গেছে। অপরদিকে খালপাড়ে থাকা এলজিইডি সড়কেরও বেহাল অবস্থা। কোন কোন স্থানে সড়কের অর্ধেক নেমে গেছে খালে।

স্থানীয়রা জানায়, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এই খালটি খনন করে ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ১৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার এই খালটি খননে ব্যয় হয়েছিল ২কোটি ৩৩ লাখ টাকা। খালটি খনন করার সময় স্থানীয়রা তাদের বাড়িঘর রক্ষার্থে বাধা দিলেও বাড়িঘরের কোনো ক্ষতি হবে না বলে জানান ঠিকাদার। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি দিয়েও ঠিকাদার ভেকু দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে খাল খনন করায় পাড় ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে ওই এলাকার কয়েকটি বাড়িঘর, গাছপালা, টয়লেট ও এলজিইডি সড়ক ভেঙে খালগর্ভে চলে গেছে।

ভূক্তভোগীরা জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে স্থানীয় প্রভাবশালীরা যুক্ত থাকায় কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে ভেকু দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে খাল খনন করেছে। ভয়ে কেউ আটকাতে পারেননি। আর যারা বাধা দিয়েছিলেন তারা নানা হুমকি-ধমকীর শিকার হয়েছিলেন।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ জহুরা খাতুন বলেন, ‘খননের পর থেকেই খালের পাড় ভাঙতে শুরু করে। ভাঙতে ভাঙতে এখন বসতবাড়িটুকও ভেঙে গেছে। রাতে ঘুমিয়ে থাকার সময় হঠাৎ বিকট শব্দ হয়ে বাড়ির একাংশ খালে ভেঙে পড়ে যায়। এখন অন্য কোথায় যাওয়ার জায়গা নেই। দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে অন্য কোথাও জমি কিনে বাড়ি করারও সামর্থ্য নেই।’

খালপাড়ের বাসিন্দা সিতা রাণী বলেন, ‘খালে পাড় ভাঙনের ফলে প্রথমে টয়লেট ভেঙে যায়। পরে লোন করে আবার টয়লেট বানানো হয়েছে। কিন্তু সেটাও যেকোন সময় ভেঙে যাবে। খাল খননের সময় ঠিকাদারদের বাধা দিলেও তারা শোনেনি। খালের পাড় না বাধলে এখানে আর বসবাস করা যাবে না। যেকোন সময় ঘরবাড়ি খালে ভেঙে পড়বে।’

স্থানীয় আব্দুল খালেক বলেন, ‘খাল খননের সময় আমরা বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালীরা হুমকি-ধমকী দেয়। পরে জীবনের ভয়ে আর বাধা দিতে পারিনি। এখন খালপাড়ের বাড়িঘর, গাছপালা, রাস্তা সবই ভেঙে গেছে। এমন চলতে থাকলে আবাদী জমিও খালগর্ভে চলে যাবে। তখন না খেয়ে মরা লাগবে।’

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, ‘চলতি বছর অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অতিদ্রুতই সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থানেওয়া হবে।’

(এসআই/এসপি/অক্টোবর ২৭, ২০২৪)