রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ফরিদপুরে বিএডিসি মার্কেটিং বিভাগের বাকিতে বিক্রি করা সরিষা বীজের টাকা তুলতে ডিলারের হারভেস্টার বা ধান কাটার আধুনিক মেশিন জব্দ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএডিসি মার্কেটিং বিভাগের স্টোর কিপার তুষার আহমেদ পলাশ ওই হারভেস্টার মেশিনটি জব্দ করেন। এদিকে হারভেস্টার মেশিনটি উদ্ধারে ৯৯৯ কল করে পুলিশের সহায়তা চাইলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিএডিসির কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সমাধানের পরামর্শ দেন।

জানা যায়, বিএডিসি ডাল ও তেল বীজ অফিসে আমন ধান কাটার জন্য মৌখিক চুক্তিতে ১০ দিনের জন্য হারভেস্টার মেশিনটি ভাড়া দেন টিপু সুলতান। তিনি বিএডিসির তালিকাভুক্ত ডিলার ও চাষী। মার্কেটিং বিভাগ থেকে তিনি সরকারী বীজ ক্রয় করে থাকেন।

আজ বৃহস্পতিবার কাজ শেষ করে হারভেস্টার মেশিনটি বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও মেশিনটি জব্দ করে বিএডিসি মার্কেটিং বিভাগের স্টোর কিপার তুষার আহমেদ পলাশ। এ ঘটনায় মেশিনটির চালক বিপ্লব মোল্লা ৯৯৯ কল করলে ঘটনাস্থলে পুলিশকে খবর দেন।

অভিযোগকারী ডিলার টিপু সুলতান বলেন, 'বিএডিসি কর্তৃপক্ষ কোন টাকা পাবে না। আমি ৩ বছর আগে ১৮ টন সরিষা বীজ ক্রয় করি। তখন ৫ টনের টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি থাকে ১৩ টনের টাকা। এর মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। আরো ৭ লক্ষ টাকা আমার কাছে বাকি থেকে যায়'।

তিনি বলেন, 'তাদের পাওনা বাকি ৭ লক্ষ টাকা আমি স্টোর কিপার তুষার আহমেদ পলাশ ও তার সহযোগী বিএডিসির ডিলার মো. জিন্নার কাছে আমার একটি জমি বিক্রি করে ৭ লক্ষ টাকা পরিশোধ করি এবং জমির মূল্য হিসেবে জিন্নার কাছ থেকে আরো ৩ লক্ষ টাকা নেই। আমার ২০ লক্ষ টাকা জমির দাম তারা ১০ লক্ষ টাকা দেয়'।

তিনি আরো বলেন, বিএডিসি মার্কেটিং বিভাগের স্টোর কিপার তুষার এ টাকা অস্বীকার করে আমার কাছে ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দাবী করে। আমি দিতে না চাইলে আমার হারভেস্টার মেশিনটি জব্দ করে এবং তার চালককে হুমকি প্রদান করে'।

চালক বিপ্লব মোল্লা জানান, 'আমার কাছ থেকে তুষার আহমেদ পলাশ জোর করে চাবি নিয়ে যায়'।

হারভেস্টার মেশিনটি ভাড়া নিয়েছিলেন বিএডিসি ডাল ও তেল বীজ অফিস। এ অফিসের উপ-সহকারি পরিচালক মো. রাশেদ খান বলেন, 'আমার অফিস থেকে হারভেস্টার মেশিনটি মার্কেটিং অফিসে কিভাবে গেল তা আমার জানা নেই। তবে খবর পেয়ে পুলিশ আসলে আমি জানতে পারি। অর্থ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পারেছি'। তিনি আরো জানান, 'আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশের উপস্থিতিতে আমাদের অফিসারবৃন্দসহ সকল পক্ষ নিয়ে বিএডিসি (বীজ প্রসেসিং) জয়েন্ট ডিরেক্টর একরামুল হক স্যারের রুমে বসে মিমাংসা করার পরামর্শ দেওয়া হয়'।

বিএডিসি মার্কেটিং বিভাগের স্টোর কিপার তুষার আহমেদ পলাশ বলেন, 'ডিলার টিপু সুলতান আমার অফিস থেকে ৩/৪ বছর আগে বাকিতে ১৮ টন সরিষা বীজ ক্রয় করেন। সেই বীজের আংশিক মূল্য পরিশোধের পর তার কাছে আরো ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাওনা আছে। পলাশ আরো বলেন, টিপু সুলতানের কাছে পাওনা টাকা নিয়ে কোতয়ালী থানায় মামলা দেওয়া হয়। সেখানে সে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান। পরে ফরিদপুর পৌরসভার কাউন্সিলর রাজিব মন্ডলও এ নিয়ে একবার সালিশ করে দেন, তবুও তিনি টাকা দিচ্ছেন না। এজন্য আমার অফিসের ডিডি স্যারের নির্দেশে তার মেশিনটি জব্দ করে রাখা হয়েছে। তিনি টাকা পরিশোধ করে মেশিন নিয়ে যাবেন'।

বিএডিসি মার্কেটিং বিভাগের উপ-পরিচালক সায়েদ কামরুল হক বলেন, 'আমরা বিষয়টি নিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে সমাধানের জন্য বসেছিলাম। আজ সমাধান হয়নি। একটু সময় দরকার। আশা করছি আগামী রবিবার আবার বসে সমাধান করা যাবে।

বিএডিসি প্রসেসিং এর জয়েন্ট ডিরেক্টর একরামুল হক বলেন, 'অফিস অনেকদিন ধরে তার কাছ থেকে পাওনা টাকা তুলতে পারছিলোনা। তাই তার সম্পদ আটকে রেখে টাকা তুলতে একটি পথ বের করা হয়েছে মাত্র'। বাকিতে বিএডিসির বীজ বিক্রির নিয়ম আছে কি না তা জানতে চাইলে একরামুল হক বলেন, 'অফিস চালাতে এবং ডিলার-চাষীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে অনেক সময় আনঅফিশিয়াল কিছু কাজ করতে হয়'।

৯৯৯ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া ফরিদপুর কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলী আহমেদ বলেন, 'টিপু সুলতানের কাছে অফিস বীজ বিক্রয়ের কিছু টাকা পাবে। টিপু সুলতান হারভেস্টার মেশিনটি ফিরিয়ে নিতে টাকা পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন। বিএডিসির অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সামনেই কথা হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি মীমাংসার পথে। তাই এ বিষয়ে আপাতত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের কোন কিছু নেই। আশা করছি আগামী রবি সোমবারের মধ্যে এটির সমাধান হয়ে যাবে।

(আরআর/এসপি/অক্টোবর ২৪, ২০২৪)