আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : স্ত্রীকে নিয়ে বেশ সুখেই ছিলেন পয়ত্রিশোর্ধ যুবক শাকিল হোসেন। সংসারে ছিলোনা কোন অভাব। কিন্তু একটি দূর্ঘটনা শাকিলের জীবনকে এলোমেলো করে দিয়ে গেছে। স্ত্রী চলে গেছে পরকীয়া প্রেমিকের হাত ধরে। আর দূর্ঘটনায় হারিয়েছেন দুই হাত। জীবনযুদ্ধে হেরে গিয়ে এক সময়ের কঠোর পরিশ্রমী যুবক শাকিলের জীবন চলে এখন ভিক্ষা করে। সোমবার রাতে বরিশালের গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় শাকিলের।

শাকিল জানান, তার জন্ম ঢাকার তেজগাও এলাকার শাহিনবাগে। স্থায়ী নিবাস গাজীপুরের পুবাইলে। বাবা সেলিম হোসেন কাষ্টমসে ছোট একটি চাকুরী করতেন। ছয় বছর বয়সে মা হারানো শাকিলের বাবা ২০০৩ সালে মারা যান। এরপর বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে মানিকগঞ্জে বসবাস শুরু করেন। সেখানে বড় গাড়ি মেরামতের একটি গেরেজে কাজ করতেন। ২০১৯ সালে কাজ করার সময় বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনায় মারাত্মক ভাবে আহত হন। চিকিৎসায় জীবন বাচলেও কেটে ফেলতে হয় দুই হাত। দুই পা ও বক্ষ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। হাসপাতালে ভর্তির ১৮ দিন পর স্ত্রী তাকে হাসপাতালের বেডে রেখেই পালিয়ে যায় পরকীয়া প্রেমিকের হাত ধরে।

শাকিল আরও বলেন, দেড় মাস পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর একমাত্র ভাই সোহানের বাসায় ঠাই মেলে। সেখানে আড়াই বছর বিছানায় কাটাতে হয়। এই সময়ে ছোট ভাই তাকে দেখাশুনা করতো। যে কোম্পানীতে কাজ করতাম সেই কোম্পানী চিকিৎসার খরচ দেয়নি। আমার চিকিৎসা করাতে গিয়ে ছোট ভাইও নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাই বিবেকের তাড়নায় ভাইয়ের কাছ থেকে চলে আসি। নেমে পরি জীবনযুদ্ধে। বিভিন্ন জায়গায় সাহায্যের হাত পেতেও ব্যর্থ হয়েছি। বর্তমানে কোটালীপাড়া বেইলি ব্রীজ এলাকার একটি ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাস করে বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করে চলছে আমার জীবন সংগ্রাম। সমাজের বিত্তবানরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে আসলে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

(টিবি/এসপি/অক্টোবর ২৩, ২০২৪)