শাহ্ আলম শাহী, বিশেষ প্রতিবেদক : নওগাঁয় সংবাদ প্রকাশের জেরে মাল্টিমিডিয়া নিউজপোর্টাল বার্তা২৪.কম-এর নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম (২৫) আবারো সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সাংবাদিক কমিউনিটি-বিএসসি।

দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করেছেন,বিএসসি'র নেতৃবৃন্দ। বিএসসি'র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নওগাঁর সাংবাদিক শহিদুল ইসলামের উপর অন্যায়ভাবে আক্রমণকারী এক দুর্বৃত্তকে আটক করেছে পুলিশ। শহিদুলের ব্যাপারে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কমিউনিটি-বিএসসি'র প্রধান উপদেষ্টা সাইদুর রহমান রিমন ভাই।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সদর উপজেলার চাকলা বাজার এলাকায় নাহিদ হোসেন নামে এক যুবকের নেতৃত্বে প্রকাশ্য ১৫-২০ জন এ হামলা চালায় । নাহিদ নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের গোলামের ছেলে ও তার সহযোগি পলাশ এবং তার বাবা উকিল মিয়া হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা, নাহিদের আরো সহযোগীদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।

আহত অবস্থায় শহিদুলকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয়রা। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।

আহত সাংবাদিক শহিদুল বার্তা২৪.কম এর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন।

এর আগে গত ১৬ অক্টোবর দুপুরে পার্শ্ববর্তী গোবিন্দপুর গ্রামে এক নব মুসলিম পরিবারকে অবরুদ্ধ রাখা সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে গেলে প্রথম দফায় হামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি। পরে হামলাকারীদের অপকর্ম তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন। এর জেরেই দ্বিতীয় দফায় তার ওপর আবারো সংঘবদ্ধ হামলা চালানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হামলার শিকার সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম বলেন, গত ১৬ অক্টোবর প্রথম দফা হামলার শিকার হয়ে নাহিদ সহ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দিয়েছিলাম। এরপরই হামলাকারীরা আত্মগোপনে চলে যায়। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে হুমকি দিয়ে আসছিলো আত্মগোপনে থাকা নাহিদ বাহিনীর সদস্যরা। এরই জেরে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে চাকলা বাজারে চারিদিক থেকে আমাকে ঘেরাও করে নাহিদ ও তার সঙ্গে থাকা ক্যাডার বাহিনীর ১৫-২০ সদস্য। এরপরই পকেট থেকে ছুরিসহ দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র বের করে আক্রমন চালায় তারা। নাহিদ মূলত অন-লাইনে জুয়ার এজেন্ট দেয় ও অবৈধভাবে ডলার লেনদেন করে যুবসমাজকে ধ্বংস করছে প্রতিনিয়ত। নাহিদ সহ তার অন্যান্য বাহিনীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।

নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, গত ১৬ অক্টোবর প্রথম দফায় হামলার ঘটনাটি জানা মাত্রই তাৎক্ষণিক থানা পুলিশের একটি টিম পাঠিয়ে সাংবাদিক শহিদুলকে সেখান থেকে উদ্ধার করে আনা হয়েছিলো। এরপর থেকেই ঘটনাটি খতিয়ে দেখছিলো পুলিশ। এরই মধ্যে দ্বিতীয় দফায় আবারো তিনি হামলার শিকার হয়েছেন বলে জেনেছি। এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।

সহকর্মী বাংলাদেশ সাংবাদিক কমিউনিটির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নওগাঁর সাংবাদিক শহিদুল ইসলামের উপর অন্যায়ভাবে আক্রমণকারী এক দুর্বৃত্তকে আটক করেছে পুলিশ। শহিদুলের ব্যাপারে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কমিউনিটি (বিএসসি)’র প্রধান উপদেষ্টা সাইদুর রহমান রিমন ভাই। তিনি বলেন,

‘নওগাঁর সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম আমার সন্তানতুল্য, ভাই, ছাত্র, কর্মী, ভক্ত, সবকিছু। ছিল দৈনিক দেশবাংলার সঙ্গে। এখন বার্তা২৪ এর জেলা প্রতিনিধি। আগাগোড়া সততায় মোড়া শহীদুল বরাবরই আপোষহীন। তার অনুসন্ধানে সত্যতা মিললে সে প্রতিবেদন বন্ধের সাধ্য নেই কারোর।

ঠিক শহিদুলের আদলে অভিন্ন নীতি, আদর্শ, অদম্য সাহস আর সত্য প্রকাশের আপোসহীন চরিত্র নিয়ে গড়ে ওঠেছে কিশোরগঞ্জ কটিয়াদীর নাঈম, সিরাজগঞ্জের চয়ন, মধুপুরের এডওয়ার্ড মাংসাং, বরগুনার নিয়াজ, কাপাসিয়ার মাহবুর, নেত্রকোনার সাগর, মানিকগঞ্জের সাইফুল, সাভারের কামরুজ্জামান, উল্লাপাড়ার সেলিম, ভোলার ইয়ামিন, খুলনা কয়রার আবিরসহ বিশ/বাইশ জনের গ্রুপ। তাদের ইচ্ছাশক্তি আর মেধার জোরেই একেকজন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সিঁড়িতে পৌঁছে গেছে। সেখানে আমার কোনো অবদান আছে বলে আমি মনে করি না। তবে কঠোর আদব-শৃংখলা রক্ষাসহ টিমবদ্ধ কাজের প্রক্রিয়া তারা আমার কাছ থেকেই রপ্ত করেছে।

তারা প্রত্যেকেই যথেষ্ট শ্রদ্ধা, ভালোবাসার মাধ্যমে সেটুকুর কৃতজ্ঞতা প্রকাশে মোটেও ভুল করতো না। তারুণ্যদীপ্ত এ টিমের সদস্যরা একত্রিত হলেই উচ্ছ্বাস আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠতো। গেল ১৮-১৯ অক্টোবর ঢাকার দোহারের মৈনট ঘাটে আয়োজিত সাংবাদিকদের মিলনমেলাতেও দারুণ আনন্দে ছিল শহীদুল। দূর্বৃত্তদের বেপরোয়া হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায়ও সে ডাক্তারকে পটিয়ে রিলিজ অর্ডার বাগিয়ে নেয়। পরক্ষণেই হাসপাতাল ছেড়ে সোজা স্টেশনে এবং ট্রেনে চেপে ঢাকা পৌঁছেছিল। আহত শহীদুল অসুস্থ অবস্থাতেই নওগাঁ ফিরে। মওকা পেয়ে বর্বর দুর্বৃত্তরা আবার ঝাপিয়ে পড়ে তার উপর। চেষ্টা চালায় তার জীবননাশের।

একপর্যায়ে লোকজন মৃতপ্রায় শহিদুলকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠায়। তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। প্রাণোচ্ছল শহিদুলের নীরব নিথর দেহখানা পড়ে আছে হাসপাতাল শয্যায়। কয়েক ঘণ্টা পর পর জ্ঞান ফিরলেও কয়েক মিনিটেই আবার সম্বিত হারিয়ে ফেলছে সে।

সাংবাদিক নির্যাতন বিরোধী সংগঠন বিএসসি’র নেতৃবৃন্দ ঢাকা থেকেই নওগাঁর পুলিশ প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।

(এসএএস/এএস/অক্টোবর ২৩, ২০২৪)