সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বিয়ের দাবিতে ৩ দিন যাবত প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকা অবস্থান নিয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পৌর শহরের চণ্ডিবের উত্তর কান্দাপাড়া এলাকার শাহজাহান মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। প্রেমিক শাহজাহান মিয়ার ছেলে নাদিম মিয়া (২৬)। প্রেমিকা আফরিন বেগম (১৮) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শহরের মাইচপাড়া এলাকার আলমগীর মিয়ার মেয়ে। 

ঘটনার সত্যতা জানতে রোববার সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাড়িতে উৎসুক জনতার ভীড় জমেছে। গত ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়ে আফরিন বেগম ভৈরবে তার প্রেমিকের বাড়িতে চাচার ঘরে অবস্থান নেই। আজ রবিবার পর্যন্ত ৩ দিন যাবত ওই বাড়িতে রয়েছে। কেউ ছেলের পক্ষ নিয়ে কথা বললেন, কেউবা আবার মেয়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন। আবার অনেকেই নিরুপেক্ষভাবে সমাধানের কথা বলছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নাদিম একজন ভালো ছেলে। তবে মেয়ের সাথে সে প্রেম করতেই পারে। কিন্তু আজকে একটি বিয়ের দাবি নিয়ে নাদিমের বাড়িতে অবস্থান নেয়াটা একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। এদিকে নাদিম একমাস আগে বাবার সাথে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে।

প্রেমিকা আফরিন বেগম জানান, আমার যখন ১১ বছর তখন থেকে নাদিমের সাথে আমার সম্পর্ক। মুঠোফোনে তার সাথে আমার যোগাযোগ ছিলো। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। সে কখনো কখনো ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়ে আমার সাথে দেখা করতো। আবার আমিও অনেক সময় ভৈরবে এসে ঘুরে যেতাম। আমি ভৈরবে ঘুরতে আসলে নাদিম আমাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে সরলতার সুযোগ নিয়ে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতো। তার সাথে অভিমান হলেই সে আমাকে মোবাইলে ব্লক দিতো, আমিও তাকে ব্লক দিতাম। এভাবে আমাদের সম্পর্ক গভীরতা বাড়ে। আজকে ১৫ দিন যাবত নাদিমের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। নাদিমকে আমি বিয়ের কথা বললে সে বলে বিয়ে করবে, কিন্তু গোপন রাখতে হবে। আবার বলে যে তুকে বিয়ে করবো না। ২০২২ সালে ৪ নভেম্বর আমার এক জায়গায় বিয়ে হয়। আমি ৩ দিন পর ফেরা যাত্রায় বাড়িতে এলে নাদিম আমাকে শ্বশুর বাড়ি যেতে নিষেধ করে। তখন আমি তার নিষেধ ও অভিমান বুঝে ওই সংসার ত্যাগ করি। এখন আমাকে সে বিয়ে করতে রাজি হয় না। ১৫ দিন যাবত তার সাথে যোগাযোগ না থাকায় আমি তার বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছি। ৩ দিন যাবত আমি এ বাড়িতে অবস্থান করছি। এখনো আমার বিষয়ে তারা কোন সিদ্ধান্ত নেইনি। আমার বাবা মা এসে এখানে রেখে গেছে। তারা আমাকে আর ফিরিয়ে নিবে না। এখন আমাকে নাদিম বিয়ে না করলে আত্মহত্যা ছাড়া আমার কোন উপায় নেই।

এ বিষয়ে নাদিমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করতে চাইলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অপরদিকে প্রেমিকার বাবা আলমগীর মিয়ার মুঠোফোনটিতে কল দিতে তার ফোনটিও বন্ধ দেখায়।

এ বিষয়ে নাদিমের বাবা শাহজাহান মিয়া বলেন, আমি একমাস আগে আমার ছেলেকে গালমন্দ করাতে সে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করে খাই। ছেলে বেকার বলে গালমন্দ করেছিলাম। এখন তার সাথে ১ মাস ধরে আমার কোন যোগাযোগ নেই। তার মায়ের সাথে ২ দিন আগে শেষ কথা হয়। সে তার মাকে বলে মা আমি ভুল করেছি। আমার বন্ধুরা আমাকে ব্ল্যাক মেইল করে ফাসিয়ে দিয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি আত্মহত্যা করবো। এই বলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ করে দেয়। ২ দিন যাবত তার সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারছি না। এখন আমার ছেলেকে ফিরে পেলে আমি কি করবো সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম। তাই আমি মেয়েকেও কোন আশ্বাস দিতে পারছি না। আমার ছেলের নিখোঁজের বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।

এ বিষয়ে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ বলেন, প্রেম সম্পর্কিত কোন ঘটনা আমার জানা নেই। এ প্রতিনিধির মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এসএস/এসপি/অক্টোবর ২০, ২০২৪)