ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


সাধারণত কোনো পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়াকেই বলা হয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কোনো পণ্যের মূল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকলে সাধারণ মানুষের জীবনধারণ কষ্টের হয়ে যায়। তাই এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। বাংলাদেশের একটি নিয়মিত সংবাদের মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অন্যতম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন সংবাদপত্র খুললেই চোখের সামনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সংবাদ পরিলক্ষিত হয়। এটি যেন বাংলাদেশের মত দুর্বল অর্থনীতির দেশে এক বিশাল বড় সমস্যা—যা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করছে নিজেদের স্বার্থে। দ্রব্যমূল্য একবার বেড়ে গেলে তা আর নিয়ন্ত্রণে আসে না। এটা নিয়ে সরকারি বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংস্থা কাজ করলেও কিছু সীমাবদ্ধতার জন্য কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম

বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ১০০-১২০ টাকা, করলা ৮০-১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৮০-১০০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, মুলা ৬০-৮০ টাকা, লতি ১০০ টাকা, কহি ১০০ টাকা, ধুন্দুল ৯০-১০০ টাকা ও পটোল ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৩০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, গাজর ১৩০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, টমেটো ১৮০ টাকা, শিম ২৫০-২৮০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়।এছাড়া প্রতি কেজি ধনেপাতা ১২০-১৮০ টাকা ও চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। আর প্রতি পিস ফুলকপি ৭০-৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৮০-১০০ টাকা এবং লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা।

দামে পিছিয়ে নেই শাকের বাজারও। লালশাকের আঁটি ৩০ টাকা, পাটশাক ২০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ২৫ টাকা, ডাঁটাশাক ২৫ টাকা, কলমিশাক ১৫-২০ টাকা ও পালংশাক ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচেরও। গত সপ্তাহে কমতির দিকে থাকা কাঁচা মরিচ চলতি সপ্তাহে দাম বেড়ে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত। আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৬০-২৮০ টাকা দরে।ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে কমেছে মরিচের সরবরাহ। এতে চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ ঊর্ধ্বমুখী দামে নাজেহাল সাধারণ ভোক্তারা। তারা জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা। এতে বাজার অস্থির করে ভোক্তার পকেট কাটার সুযোগ পাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। একের পর পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। আজ ডিমের দাম বাড়ে তো কাল সবজির। এখন আবার বাড়ছে শাকের দাম।

বাজারে কোনো শৃঙ্খলা নেই। যে যার মতো পারছে লুটে নিচ্ছে।এদিকে বাজারে মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৭০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা ও নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।বাজারে বেড়ে গেছে আদা-রসুনের দামও। প্রতি কেজিতে ৫-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি দেশি রসুন ২৪০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২৬০ টাকা ও মানভেদে আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৮০ টাকায়।সুখবর নেই আলু-পেঁয়াজের বাজারেও। কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। আর পেঁয়াজ নতুন করে না বাড়লেও বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। খুচরায় প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়।এছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ যথাক্রমে ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১২-১১৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯২-৯৬ টাকায়।ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষের দিকে। তাই বাজার চড়েছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ ও প্রতিকার

১. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো অসাধু ব্যবসায়ী, সিন্ডিকেট, কালোবাজারি, দুর্নীতি ইত্যাদি শক্ত হাতে দমন করা। প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কঠোর হাতে সব সমাধান করা উচিত।

২. মোবাইল কোডের সাহায্যে বাজারে অনিয়ম স্থিতিশীল রাখতে হবে। এবং অনিয়ম রুখতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৩. কৃষিপ্রধান দেশে কৃষিপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষিকর্মকর্তা সহ সরকারের সসহযোগিতার মনোভাব স্থাপন করা।

৪. কৃষিপণ্য সঠিক বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মধ্যসত্বভোগী দালালদের দূরীকরণ।

৫. টিসিবির পণ্য যেন দরিদ্ররা পায় সেদিকে প্রশাসনের কড়া নজর রাখতে হবে।

৬. সর্বপরি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে কাজ করতে সরকারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

পরিশেষে বলতে চাই, বাজার যেন কারো নিয়ন্ত্রণে নেই। ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। দিন দিন অসহায় হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। তাই নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান। আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে। তাই বাজারগুলোতে সরকারের প্রশাসন দ্বারা অনিয়ম রুখতে পারলেই বাজারদাম স্থিতিশীল হতে বাধ্য। পাশাপাশি জনগণ ও সরকারের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব পোষণের মাধ্যমে এই ঘাতক ব্যধি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে আমি মনে করি। তাই বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা পরিপন্থি কর্মকাণ্ড বন্ধে আইনের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।