শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি এরপর ভ্যাপসা গরমের কারণে ঝিনাইদহে মাঠে মাঠে কৃষকের ধানক্ষেতে খোল পচা রোগ দেখা দিয়েছে। মাঠের পর মাঠ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ধান গাছের পাতা মারা যাচ্ছে। অনেক কৃষকের গোটা জমিতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। বিআর-৫১ জাতের ধান ক্ষেতে এই রোগ বেশি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

কৃষকরা বলছেন, এই রোগের কারণে তাদের ক্ষেতের ধানগাছ ক্রমেই শুকিয়ে আসছে। আগামীতে রোগাক্রান্ত ধান গাছে শিষ বের হবে না। ফলে ধানের উৎপাদন কমে যাবে। এখনই এই রোগ প্রতিরোধ করা না গেলে তারা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরা। আর কৃষি বিভাগ বলছেন,ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে এ রোগ অনেকটা প্রতিরোধ করা যায়। তারা কৃষকদের সেভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় উপসী জাতের ধান চাষ হয়েছে ৯৬ হাজার ৩০৮ হেক্টর, আর হাইব্রিড ধান চাষ হয়েছে ৮ হাজার ১৮০ হেক্টর। মোট ১ লাখ ৪ হাজার ৪৮৮ হেক্টরে জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এ থেকে ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৪০৯ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবার কথা।

কৃষি বিভাগ এই লক্ষ্যমাত্রা নিলেও গত ২ সপ্তাহের বৃষ্টিতে ১১০ হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ৬শ’ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে। এর পর দেখা দিয়েছে খোল পচা রোগ। এই রোগেও ফলন আরো অনেকটা কম হবে বলে কৃষকরা আশঙ্কা করেছেন।

সরেজমিনে একাধিক উপজেলার মাঠ ঘুরে ধান ক্ষেত্রে পাতা পচা রোগ দেখা গেছে। ধান গাছে থোড় (শিষ) হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে গাছের পাতা মারা যাচ্ছে। কোনো কোনো জমিতে গোটা ফসলে আক্রান্ত হয়েছে। এই পচন রোগ ধান গাছের নিচ থেকে শুরু হচ্ছে। যা ক্রমন্বয়ে উপরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই রোগে আক্রান্ত ধান গাছের নিচের অংশ খয়েরি রং ধারণ করছে, যা আস্তে আস্তে গোটা গাছে ছড়িয়ে পড়ছে। এক পর্যায়ে ধান গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার চাপালী গ্রামের কৃষক রাকিব খন্দকার জানান,‘তার ৭ বিঘা জমিতে ৫১ জাতের ধান চাষ করেছেন। প্রায় সব জমিতে এই রোগ দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির পর অল্প সময়ের মধ্যে গোটা জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমে গাছের নিচের অংশ থেকে পচন দেখা দেয়, যা ইতোমধ্যে উপরের দিকেও চলে এসেছে।

তিনি বলেন, সার-ওষধ, জমি তৈরিতে চাষ, ধানের জমির আগাছা পরিষ্কার, কাটা পরিষ্কার, লেবার খরচসহ এক বিঘায় তার ২২ হাজার থেকে ২৩ হাজার খরচ হয়েছে। এই এক বিঘায় তিনি ১৮ থেকে ২০ মণ ধান পাবেন, যা বিক্রি করে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা পাবেন। এখন যে অবস্থা তাতে ফলন অনেক কমে যাবে। এতে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ছত্রাকনাশক ওষুধ দিয়েছেন, কিন্তু কোনো কাজে আসছে না।’

সদর উপজেলার বিষয়খালী মাঠে কথা হয় কৃষক ফজলুর রহমানের সাথে,তিনি জানান,‘বিআর- ৫১ জাতের ধান তিনি প্রায় ৩ বিঘা চাষ করেছেন। গোটা জমির তার এই পচন রোগে আক্রান্ত। ক্ষেতের আইলে গেলে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এবার জমিতে ধান গাছ ভালো হয়েছিল। এখন থোড় (শিষ) বের হওয়ার সময়। সেই সময় বৃষ্টির কারণে এই পচন রোগ দেখা দিয়েছে। যা মাঠের পর মাঠ ছড়িয়ে পড়ছে। ’

শৈলকূপা উপজেলার ভাটই গ্রামের কৃষক আক্তার হোসেন জানান,‘দ্রুত এই পচন রোগ ঠেকাতে না পারলে কৃষক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অনেক কৃষক ধারদেনা করে চাষ করেন, তারা কিভাবে তাদের ঋণ পরিশোধ করবেন। তিনি নিজেও দোকান থেকে সার-ঔষধ বাকিতে নিয়ে দুই বিঘায় চাষ করেছেন। তার জমির ধানও পচন রোগে আক্রান্ত। ভালো ফলন না পেলে কিভাবে দোকান বাকি পরিশোধ করবেন তা নিয়ে চিন্তিত এই কৃষক।’

কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান,‘বৃষ্টির পর এই রোগ দেখা দিয়েছে। তবে সেটা ব্যাপক নয়। তারা কৃষকদের আক্রান্ত জমিতে ছত্রাকনাশক ওষধ স্প্রে করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে পচন অনেকটা ঠেকানো সম্ভব বলে জানান।’

আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভাগের উপপরিচালক ষষ্ঠি চন্দ্র রায় জানান,‘কৃষকের ধান ক্ষেতে খোলপচা রোগ এখনও তেমন একটা দেখা দিয়েছে বলে তাদের কাছে তথ্য নেই। তবে বৃষ্টির পর খরা হলে এই রোগ দেখা দিয়ে থাকে। তিনি কোন এলাকায় এই রোগ দেখা দিয়েছে তার বিষয়ে তথ্য নিয়ে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান। তিনি বলেন, এই রোগে আক্রান্ত ক্ষেতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।’

(এসই/এএস/অক্টোবর ১৫, ২০২৪)