গোপাল নাথ বাবুল


গত ১০ অক্টোবরের সন্ধ্যায় এক অকল্পনীয়, অপ্রত্যাশিত ও নিন্দনীয় ঘটনা ঘটে গেছে। যা কোনোদিন কারও ভাবনায়ও ছিল না। শত শত বছর ধরে হয়ে আসা শারদীয় দুর্গোৎসবে অন্তত বাংলাদেশে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে মনে পড়ে না। পাকিস্তান আমলেও দুর্গাপূজায় এরকম ঘটনা ঘটানোর সাহস কেউ করেনি। বলা যায়, চট্টগ্রামের বিপ্লবী ও হিন্দুদের তীর্থক্ষেত্র রহমতগঞ্জের যাত্রা মোহন সেন (জেএমসেন) হলের শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমীর সন্ধ্যা ৭ টার দিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে হঠাৎ পূজো মন্ডপ পরিদর্শনের নামে জামাত-বিএনপি’র একদল লোক গিয়ে উপস্থিত হন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, পরিদর্শনকারীদের মধ্যে জামায়াত ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগর আমীর শাহজাহান চৌধুরী ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক ডা. শাহাদাৎ হোসেনও ছিলেন।
পরিদর্শনকারীদের মধ্যে ৬ জন শিবির কর্মী দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করার কথা বলে এক প্রকার জোর করেই মঞ্চে ওঠে ২টি ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেন। তারা ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম/বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’ এই গানটির মাধ্যমে সুকৌশলে জেএমসেন হলের প্রায় ৫/৬ হাজার হিন্দু দর্শককে ইসলামের দাওয়াত দেন। সংগীত পরিবেশন করা ৬ জনই ছিল মাদ্রাসার শিক্ষক এবং তারা শিবিরের সাথে সংযুক্ত ‘চট্টগ্রাম কালচারাল অ্যাকাডেমি’ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে এই ঘটনা নিয়ে হইচই পড়ে গেলে তারা পূজো কমিটির জয়েন সেক্রেটারী সজল দত্তের ঘাড়ের ওপর পা্ দু’টো তুলে দিয়ে তাকে বলির পাঁঠা বানিয়ে বলেন, পুজো কমিটির সজল দত্তের আমন্ত্রণে তারা ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেছেন। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, তাদের কেউ আমন্ত্রণ জানাননি। তারা নিজেরাই নিজেদের আমন্ত্রণ নিয়ে জেএমসেন হল পূজা মন্ডপে পরিদর্শনে এসে এমন নিন্দনীয় ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

ভিডিও’তে দেখলাম, তারা যখন ইসলামি সংগীত পরিবেশন করছিলেন, তখন দর্শকরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসেছিলেন। কেউ কেউ ওঠে চলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কোনো হিন্দুর মুখ থেকে কোনো কথাও বের হয়নি, কোনো প্রতিবাদও হয়নি। সবাই যদি চিৎকার করে ওঠতো তাহলে তারা এমন ঘটনা ঘটাতে সাহস পেতো না। আর এজন্য যদি বিপরীত দিক থেকে হামলা হতো তাহলে সারাবিশ্ব কেঁপে ওঠতো। ভিডিও’তে দর্শকদের চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, তারা তখন ওঠে চলেও যেতে পারছিলেন না, আবার বসে বসে সংগীতের নামে বিরক্তিকর কিছু শুনতেও পারছিলেন না। অনেকে রীতিমত অপমান বোধ করছিলেন। কিন্তু কিছুই বলতে পারছিলেন না বা বলার সাহস পাচ্ছিলেন না। কারণ, বাংলাদেশে বাঙালি হিন্দুদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে অনেক আগেই। তাছাড়া বাঙালি হিন্দুরা বাজনা ছাড়া কোনো সংগীত শুনতে অভ্যস্ত নন। শিবিরের এমন কর্মকান্ডের ব্যাপারে এক মিডিয়া কর্মী প্রশ্ন করলে ঢাকায় পূজো মন্ডপ ঘুরতে আসা বিশিষ্ট লেখক আরিফ রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রাম পূজো মন্ডপে বিপ্লবী ইসলামি সঙ্গীত গাইয়া ছাত্রশিবির প্রমাণ করলো যে, ছাগলকে যতই হরলিকস্ খাওয়ান, তার কাছে শুধু ল্যাদাই পাবেন, এই শয়তানদের চিহ্নিত করে পাছার চামড়া তুলে ফেলা উচিত”।

সেদিনের সন্ধ্যাবেলার উক্ত ঘটনাটি ছিল মূলত অনেকদিন ধরে চলমান সবকিছু ইসলামীকরণ করার ষড়যন্ত্রের অংশ। আমরা জানি, দুর্গাপূজোর মাসখানেক আগে থেকেই বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন পূজো না করতে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন। কেউ বলছিলেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের দুর্গাপূজো করতে দেব না। কেউ ১৬ দফা দাবি দিয়ে হিন্দুরা পূজোতে কি করতে পারবে, কি করতে পারবে না, বাজনা কতটুকু করা যাবে, কতটুকু করা যাবে না, দুর্গাপূজো দেখে মসজিদে গেলে নামাজ হবে কি হবে না, শারদীয় দুর্গোৎসবকে সর্বজনীন বলা যাবে কি যাবে না, তাও জানিয়ে দিয়েছিল ইসলামী সংগঠনগুলো। আবার ওয়াজ মাহফিলে বসে কেউ কেউ হুংকার দিচ্ছিলেন, বাংলাদেশ ত্যাগ করে সকল হিন্দুরা যেন ভারতে চলে যায়। দেশে বুড়ো মানুষের দাঁতের মতো নড়েবড়ে সরকার থাকলে যা হয় আর কি!
তবে এক্ষেত্রে আমি শিবিরের সদস্যদের মোটেই দোষ দেব না।

মহাসপ্তমীর সন্ধ্যার নিকৃষ্ট ঘটনাটির জন্য সব দোষ কিন্তু পূজো কমিটির মেরুদন্ডহীন, বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী, ভীরু, হাঁটুকাঁপা হিন্দু নেতাদের। বুঝলাম, ইসলামি সংগীত পরিবেশনকারী দলটি দেশাত্মবোধক গান করার নামে মঞ্চে ওঠে ইসলামি গান গাওয়া শুরু করে দিলেন। তখন আয়োজকরা কোথায় ছিলেন? তারা কেন কথার বরখেলাপ করার কারণে তাদের মঞ্চ থেকে নামিয়ে দিলেন না? কেন ইসলামি সংগীত পরিবেশন করার সময় পিছনের স্কীনে থাকা দেবী দুর্গা ও মহিষাসুরের ছবি মুছে দেয়া হল? স্কীনের ছবি মোছা মানে পূর্ব প্রস্তুতি ছিল পূজো কমিটির নেতাদের। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব। এটা কী ইসলামি সঙ্গীত পরিবেশন করার স্থান ছিল? নেতাদের মাথায় কী একবারও আসেনি যে, ইসলামি সঙ্গীত হিন্দুদের দুর্গাপূজোর আসল মাহাত্ম্যকে মাটি করে দিচ্ছিল? এজন্য সভাপতি মহোদয় আশীষ ভট্টাচার্য বীরবিক্রমে জয়েন সেক্রেটারি সজল দত্তকে একেবারে বহিস্কার করে দিয়েছেন। কেন ভাই, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন বহিস্কার হবেন না কেন? তারাও তো সমদোষে দোষী।

জামাত-শিবির সমর্থকরা বলছেন, এটা তো একটি সম্প্রীতির গান ছিল! এতে হিন্দুদের এমন কি আর ক্ষতি হলো? হ্যাঁ ভাই, এতে হিন্দুদের কেমন ক্ষতি হয়েছে, সেটা আপনারা বুঝবেন না বা বোঝার চেষ্টাও করবেন না। কারণ আপনাদের মাথায় তখন কাজ করেছে অন্যকিছু। আপনারা সম্প্রীতির সঙ্গীত পরিবেশন করার মতো কি আর জায়গা পাননি? আপনাদের কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অথবা মাহফিলে কী হিন্দুদের ৫টা মিনিট সময় দিবেন হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রীতির গান পরিবেশন করতে? উত্তর হবে, একদম না। খবরদার বলছি, এমন কথা আর যেন মুখ দিয়ে বের না হয়। এমন কুকথা বলার সাহস পেলে কোথায় মালাউনের বাচ্চা? সত্যিই তো, মালাউনের বাচ্চারা এমন কর্ম করার কথা কোনোদিন ভুলেও চিন্তা করে না।

তবে এসব ঘটনায় হিন্দু নেতাদের কী উদারতার মহাসাগর বলা যাবে নাকি বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী, মেরুদন্ডহীন বলা যাবে? উদারতার কারণে হোক অথবা মেরুদন্ডহীনতার কারণেই হোক, বর্তমানে হিন্দুরা বিলুপ্তির পথে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, পশ্চিমবঙ্গেও বাঙালি হিন্দুদের একই অবস্থা। নারায়ণগঞ্জের যে জ্যোতি বসু নিজের বাপের জমিদারি বিলিয়ে দিয়ে মা-বোনের ইজ্জত ও নিজের প্রাণ বাঁচাতে এক কাপড়ে স্বর্গসম মাতৃভূমি ত্যাগ করে পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে আশ্রিত হয়েছিলেন, সে জ্যোতি বাবু পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ১৯৭৯ সালের জানুয়ারির শেষের দিকে ক্ষমতার লোভে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের তাড়া খেয়ে যাওয়া সুন্দরবনের মরিচঝাঁপি দ্বীপের শত শত হতদরিদ্র, বুকের হাড় বের হয়ে যাওয়া হিন্দু শরণার্থীদের হত্যা করে তাদের রক্ত দিয়ে নিজের হাত লাল করতেও পিছপা হননি। শুধু জ্যোতি বাবু কেন, দুই বাংলার সকল বামপন্থী হিন্দু নেতারা নিজেদের হিন্দু ভাবতেই লজ্জা পান!

ভারতের সিপিআইএম-এর সিনিয়র নেতা, কলকাতা হাইকোর্ট ও ভারতের সুপ্রীম কোর্টের জাদরেল আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য নিজেকে কমিউনিস্ট পরিচয় দিতে কলকাতার বিখ্যাত ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে গো-মাংস ভক্ষণ করেছিলেন। আচ্ছা, বিকাশ বাবুকে কী পার্টি থেকে এমন কোনো শর্ত দিয়েছিলেন যে, কমিউনিস্ট পরিচয় দিতে এবং অসম্প্রদায়িক ভারতের পরিচয় তুলে ধরতে গো-মাংস ভক্ষণ করতে হবে! উত্তর হলো, একদম না। ওনি নিজেই এমন কাজটি করে নিজের দলেই বিপুলভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন। এরপরও পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী হিন্দুরা নেচে নেচে বিকাশ বাবুদের মুঠো ভরে ভোট দিয়ে নির্বাচনে জয়যুক্ত করেন। অথচ পাশে দাঁড়িয়ে আরেক সিপিআইএম-এর সিনিয়র নেতা মোহাম্মদ সেলিম সাহেব মিটি মিটি হাসছিলেন। তিনি কিন্তু চেতনাহীন বিকাশ বাবুর মতো কমিউনিস্ট পরিচয় দিতে কোনো অখাদ্য ভক্ষণ করেননি। হয়তো তিনি ভাবছিলেন, বিকাশ বাবু যে এতই বোকা, তা তিনি কোনোদিন ভাবতেই পারেননি।

তার মানে ব্রাহ্মণ বিকাশ বাবুদের মেরুদন্ড খুবই নড়েবড়ে আর সেলিম সাহেবরা খুবই সেয়ানা পাবলিক। বিকাশ বাবুরা নিজের ধর্মকে পাছার তলায় দেন আর সেলিম সাহেবরা কমিউনিস্ট রাজনীতি করলেও নিজের ধর্মকে সবার উর্ধ্বে স্থান দেন। আর ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তপসিলি সম্প্রদায়ের নেতা যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের ভূমিকার কথা আশা করি অনেকেই জানেন। মুসলিমলীগ নেতারা যখন দাদা ডেকে বুকে-পিঠে আদর করে হাত বুলিয়ে দেন, তখন তিনি একেবারে বরফের মতো গলে গিয়ে তার দলবল নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে ভোট আদায় করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তার পুরস্কার স্বরূপ তাঁকে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আইন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করেছিলেন। তারপর কী হয়েছিল কে জানে! একদিন মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে তাঁর সমর্থকদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে চুপিসারে পলায়ন করে ভারতে আশ্রয় নেন। এই বামাতিরা নিজ ধর্মকে হেলাফেলা করলেও হিন্দুদের কোনো অনুভূতি হয়না। কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র মা কালীকে নাকি মদ আর মাংস দিয়ে পূজো দেন। সে কথা তিনি আবার জনসমক্ষে গর্ব করে বলেন। যাদবপুরের সাংসদ সায়নি ঘোষ তো বাচ্চা না হওয়ার জন্য একবার শিবলিঙ্গে কনডম পরিয়ে দিয়েছিলেন। তারপরও চেতনাহীন হিন্দুরা তাদের দু’জনকেই মুঠো মুঠো ভোট দিয়ে ভারতের লোকসভার সাংসদ বানিযেছেন। এখনো কলকাতার বিভিন্ন পূজো মন্ডপে সম্প্রীতির উদাহরণ দেখাতে গিয়ে হিন্দুরা দুর্গা প্রতিমার সামনে মসজিদের ঈমাম সাহেবকে দিয়ে আযান দেন।

এসব ভীরু ও হাটুকাঁপা হিন্দুরা নিজেদের ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন ও বিকিয়ে দিয়ে তারপর আসেন হিন্দুদের নেতা সাজতে। এমনিতেই গলাবাজি করে মাঠ কাঁপিয়ে ফেলেন। কিন্তু যখন কোনো হিন্দু বিপদে পড়েন, তখন এদের দেখা যায় না। বেশি সমালোচিত হলে বড়জোর একটা বিবৃতি দিয়ে দায়িত্ব সারেন। চট্টগ্রামের মতো জায়গায় এতবড় ঘটনা ঘটে গেল, হিন্দু নেতারা আন্তরিক ও সচেতন হলে বিশ্ব কাঁপিয়ে দিতে পারতেন। অথচ বড় বড় হিন্দু নেতারা সবাই চুপ। আবার নন্দলালের মতো বলেন, কোনো এ্যাকশন নিলে সারাদেশের পূজোমন্ডপে এর প্রভাব পড়বে। সুতরাং চুপ থাকো।

এখন জানতে ইচ্ছে করছে, পান থেকে চুন খসে গেলে মানবতা গেলরে গেল বলে চিৎকার করে দুনিয়া ফাটিয়ে ফেলা সেই সুশীল বাবুরা কোথায়? তারা এখন মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে কেন? কই গেলেন দেবপ্রিয় বাবু, গয়েশ্বর বাবু, আমাদের বটগাছের লাহান হিন্দু নেতা গোবিন্দ বাবু? কই গেলেন আমার পাশ্ববর্তী গ্রামের বলে যাকে নিয়ে আমরা অহংকার করি, সুপ্রীম কোর্টের জাদরেল আইনজীবী সুব্রত বাবু? কই গেলেন আওয়ামীলীগের সুশান্ত দাশগুপ্ত বাবু? ওহো থুক্কু, আওয়ামীলীগ তো এখন আর ক্ষমতায় নেই। ক্ষমতায় না থাকলেও অন্তত আড়াল থেকে প্রতিবাদ তো করা যেত! আমাদের পাশ্ববর্তী সাতকানিয়া থানা-সহ চট্টগ্রামের গর্ব, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন ভাই কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চট্টগ্রামের ঘটনার জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাই ওনাকে ধন্যবাদ। আর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকতেও সুশান্ত বাবুরা কোনোদিন হিন্দু নির্যাতনে কোনো প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে মনে করতে পারছি না। মহাসপ্তমীর সন্ধ্যায় উক্ত ঘটনাটি ঘটার পর কোটি কোটি মুসলমান বন্ধুরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনার জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তার মানে কোটি কোটি অসম্প্রদায়িক মুসলমান ভাই-বোনরা আমাদের সাথে আছেন। তারপরও কেন হিন্দু নেতারা ভীরুতার পরিচয় দেন? সাহসিকতার সাথে নেতার মতো নেতাগিরি করতে না পারলে নাটক করা বাদ দেন। ঘটনার পর আমি চট্টগ্রাম মহানগরের এক হিন্দু নেতাকে ফোন করে জানতে চেয়েছি, এমন একটি নিন্দনীয় ঘটনার জন্য কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন? ওনি বললেন, নারে ভাই, তেমন কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নেব না। কারণ, কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সারা বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়বে। তবে প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে। নেতার দায়িত্ব শেষ, বেশ বেশ।

চিন্তা করুন, নেতার কথা! সারাদেশে কী আর প্রভাব পড়বে? সারাদেশের পূজামন্ডপের সকল দুর্গা প্রতিমাগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে দেবে, এই তো! আচ্ছা ভাই, কখন হিন্দুদের প্রতিমা ভাংচুর করছে না দেশবিরোধীরা? সারাবছরেই তো হিন্দুদের প্রতিমা ভাংচুর করেই যাচ্ছে। এরজন্য কী কোনো সরকার কাউকে কোনোদিন বিচারের আওতায় এনেছে? মূর্তি ভাঙ্গার পর প্রশাসন প্রথমে তাকে বা তাদের পাগল সাজিয়ে দেয়। তারপর সমালোচনা বেড়ে গেলে ২/১ জনকে লোক দেখানো গ্রেফতার করে জামাই আদরে কিছুদিন জেলে রেখে তারপর নামকাওয়াস্তে শাস্তি দিয়ে বিচারক মহোদয়রা ছেড়ে দেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন, যা বাবা, এমন দুষ্টমি আর করিস্ না। আর সারাদেশে যদি প্রতিমা ভাঙতো, তাহলে সারাবিশ্ব গর্জে ওঠতো। বাংলাদেশের প্রকৃত সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির কথা সারাবিশ্ব জানতো। সংখ্যালঘুরা কত সুন্দর ও ভালো অবস্থানে আছে, তাও জানত। চিৎকার করে বলা ‘বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ’ বাক্যটি যে একটি ডাহা মিথ্যে, তাও আরেকবার বিশ্বের কাছে প্রমাণিত হতো। এই হলো আমাদের তড়িৎ সিদ্ধান্ত না নিতে পারা নেতাদের অবস্থা। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিলুপ্তির কারণ এসব নেতারা। তাই মেরুদন্ড বিকিয়ে দেয়া এসব হিন্দু নেতাদের অনুরোধ করবো, আপনাদের মেরুদন্ড বড় তেরা-ভেরা হয়ে গেছে। আপনারা আগে মেরুদন্ডের চিকিৎসা করে মেরুদন্ড সোজা করুন। তারপর উপযুক্ত হলে হিন্দুদের নেতা সাজতে আসুন। তা নাহলে খুব বেশিদিন নেই, বাংলাদেশ হিন্দুশূন্য হতে।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।