শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : বাড়ি বসে অর্ডার দিলে পিৎজা, বার্গার, বিরিয়ানি সবই মেলে। কিন্তু তাই বলে মাদকেরও ‘হোম ডেলিভারি’? অনলাইন কিংবা মুঠোফোনে অর্ডার দিলে অন্যান্য পণ্যের মতোই বাসায় বা সুরক্ষিত স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয় মাদক। অভিনব কায়দায় বিকাশ,নগদ,রকেটের মতো বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে বিল পরিশোধও করা হয়। এছাড়া মাদক কেনাবেচায় তারা ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের সংকেত। যেমন গাঁজাকে সবজি, ফেনসিডিলকে ৬ ইঞ্চি,ফেঞ্চি এবং ইয়াবাকে গুটি, লেবার ও বাবা নাম ব্যবহার করা হয়।

মাদকের সহজলভ্যতার কারণে ঝিনাইদহের তরুণ সমাজ এখন নানারকম নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। অনলাইনে অর্ডার ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তারা বিল পরিশোধ করে। মাদকের ভয়াবহতা ঠেকাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে ‘শূণ্য সহনশীল নীতি’। তবু কিছুতেই যেন কূল কিনারা করা যাচ্ছে না। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে নিত্য ব্যবহারের জিনিসপত্র থেকে শুরু করে গবাদিপশু, গাড়ি, বাড়ি সবই কেনা যাচ্ছে অনলাইনে। তাই অনলাইন শপিংয়ের এ সময়ে বাদ পড়ছে না মাদকও। হোম ডেলিভারির এই সুযোগ লুফে নিচ্ছেন এ জেলার তরুণ মাদকসেবীরা। মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের অসংখ্য গ্রুপও রয়েছে ফেসবুক-টুইটার সহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে। এছাড়াও ভাইবার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে চলছে মাদক কেনাবেচা।

সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তোপের মুখে কৌশল পরিবর্তন করেছে মাদক কারবারিরা।ছোট কারবারিদের মাঝে মধ্যে গ্রেফতার করলেও মাদকের শীর্ষ কারবারিদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসন।

জানা গেছে, চোরাকারবারিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে এ জেলায় মাদক আমদানি করছে প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি। এখনও তারা নতুন প্রভাবশালীদের সাথে সক্ষমতা গড়ে তুলেছে। এই মাদক কারবারিরা এরই মধ্যে রাজনৈতিক নেতা,পুলিশ কর্মকর্তা,সরকারি আমলা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের সহায়তায় বেশ শক্তিশালী রূপ ধারণ করেছে।

স্থানীয় গোয়েন্দা সূত্রের দাবি,প্রতিদিন আনুমানিক পাঁচ হাজার ইয়াবা ও দুই হাজার পাঁচশ বোতল ফেনসিডিল বিক্রি হয় শুধু ঝিনাইদহ পৌর এলাকায়। ভারতের খুব নিকটবর্তী হওয়ায় বিকাশ পেমেন্টের মাধ্যমে অল্প সময়ের ব্যবধানে ভারতীয় আমদানি নিষিদ্ধ ফেনসিডিল,ইয়াবা,গাঁজা জেলার মহেশপুর উপজেলা ও চুয়াডাঙ্গা হয়ে খুব সহজে মাদকসেবীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে মাদক কারবারিরা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের মাদক কারবারিদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে টেকনাফ,কক্সবাজার,উখিয়া থেকে মাদকের চালান ঢুকছে ঝিনাইদহ জেলায়।

ঢাকার একটি মাদকচক্রের সঙ্গে যোগসাজশ করে কক্সবাজার থেকে ঝিনাইদহে মাদকের চালান নিয়ে আসা হয়। মাদকের শীর্ষ এই চক্রগুলোর সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য,স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি আমলাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে সূত্রটি দাবি করেছে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ৪ বস্তায় ১২০১ বোতল ফেনসিডিল,প্রাইভেটকার,নগদ টাকাসহ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হাটগোপালপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সাজ্জাদুর রহমানসহ তার দুই সহযোগীকে আটক করেছিল র‌্যাব-৬। এ অভিযানের নেতৃত্বে দিয়েছিলেন র‌্যাব-৬ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাঈম হোসেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতি আমিনুর রহমান টুকু বলেন, ‘মাদকের ভয়াল থাবা থেকে নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে স্থানীয় প্রশাসনকে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।’

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া বলেন,‘মাদকের বিরুদ্ধে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি দ্রুতই এই অভিনব কায়দার সমাধান বের করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

(এসই/এএস/অক্টোবর ১৩, ২০২৪)