‘মন্দিরে রাজনীতির চর্চা কল্যাণ বয়ে আনে না’
স্টাফ রিপোর্টার : মসজিদ কিংবা মন্দিরে রাজনীতির চর্চা কল্যাণ বয়ে আনে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
গয়েশ্বর রায় বলেন, ধর্ম একটা জীবন ব্যবস্থা। এর মধ্য দিয়ে মানুষ মানুষকে ভালোবাসতে শেখে। জন্মসূত্রে কোনো মানুষ ছোট না, আবার বড়ও না। আমরা মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ করতে চাই না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমাদের বাংলাদেশ, আমাদের ঐতিহ্য- এটা আমাদের অর্জন, এটা আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। একই সাথে আমাদের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে; বাইরে থেকে কেউ এসে সেটা করবে না। কোনো ভিনদেশি আমার-আপনার অধিকার আদায় করে দেবে না। নিজের অধিকার নিজেদেরই প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ভারত আমাদের জন্যে কিছু করবে না, করেও না।
তিনি বলেন, মানুষ হিসেবে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। সম্প্রদায়ের প্রতি সম্প্রদায়ের টান থাকতে হবে। আমাদের সম্প্রদায়ের নেতারা সেটা রাখেন না। ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের ১৬ বছরে রাজপথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা আমাকে হামলা করে রক্তাক্ত করেছে, আমার বাড়িতে হামলা হয়েছে, আমার পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে- কিন্তু দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের এত সংগঠন, এসব সংগঠনের নেতারা নিন্দা বা প্রতিবাদ অথবা সহানুভূতি-সমবেদনা জানিয়ে কোনো বিবৃতি দেননি। কারণ, আমি বিএনপির রাজনীতি করি। এই মানসিকতা থেকে আগে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
মন্দিরে বসে রাজনীতির চর্চা না করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নীতি-নির্ধারক বলেন, ধর্ম যেমন রয়েছে, যার যার রাজনীতিও তেমন আছে। তবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নয়। মসজিদ-মন্দিরে রাজনীতির চর্চা মঙ্গল বয়ে আনে না। সুতরাং মন্দির কিংবা মন্দির প্রাঙ্গণে রাজনীতি চর্চা কাম্য নয়।
তিনি বলেন, এখনো মিডিয়া সত্য কথা বলতে পারে না। যেই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলন হয়েছে, তেমনটা এখনও লক্ষ করা যাচ্ছে না।
গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’-মানুষের এই ভোটের অধিকারের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য আমরা দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই-সংগ্রাম করছি। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের বিদায়ের পর দেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা, এই সরকার দ্রুততম সময়ে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে, যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি পার্লামেন্ট গঠিত হবে। নির্বাচিত সেই সরকার যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমরা লড়াইটা করছি, সেই লড়াইয়ের সুফল প্রতিটি মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দেবে।
মতবিনিময় শেষে গয়েশ্বর রায় পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন এবং আগত পূণ্যার্থীদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি এর আগে ঢাকেশ্বরী পূজামণ্ডপে পৌঁছালে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পালসহ নেতারা স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত দেবসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন। এ সময় পূজা উদযাপন পরিষদের বাসুদেব ধর, সন্তোষ শর্মা, মহানগর পূজা কমিটির তাপস চন্দ্র পাল, জিয়া মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মো. ফয়েজ উল্যাহ ইকবালসহ পূজা পরিষদ ও পূজা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত বুধবার দুর্গাপূজার ষষ্ঠীতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজামণ্ডপে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
(ওএস/এএস/অক্টোবর ১২, ২০২৪)