শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : ২০০৭ সালের কথা। প্রত্যন্ত পল্লীর একটি গ্রামে হঠাৎ-ই ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করে। স্থায়ী কোন বাসা না করায় পাখিগুলো যায়-আসে। এরপর কেটে যায় কয়েক বছর। ২০১৩ সালে স্থায়ীভাবে বাসা বেঁধে বসবাস শুরু করে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি। ১০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে পাখির অভয়ারণ্য। যা রক্ষার্থে স্থানীয়ভাবে পাহারাদারের ব্যবস্থাও করা হয়। তখন থেকেই আশুরহাট গ্রামটি লোকমুখে ‘পাখি গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকে। যা বর্তমানে সকলের মুখে মুখে ছড়িয়েছে।

গ্রামটির অবস্থান ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নে। ২০১৩ সালেই তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন এই এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করেন। প্রতিবছরের মতো গ্রামের মধ্যপাড়ার আব্দুর রাজ্জাক ও গোপাল চন্দ্র বিশ্বাসের পুকুর পাড়ে শিমুল, জাম ও মেহগনী গাছের ডালে ডালে বাসা বাঁধে হাজার হাজার পাখি। উপযুক্ত আবহাওয়া, পরিমিত খাবারের জোগান থাকায় পাখিগুলো এখানেই জায়গা করে নেয়। তাই শীতকাল এলেই দূর-দূরান্ত থেকে আসতে শুরু করে অতিথি পাখি। শিমুল গাছে থাকা পাখিগুলো সব সময় গাছেই অবস্থান করে। আষাঢ় থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এসব পাখি এখানেই অবস্থান করে। এসময় তারা বাসায় ডিম দিতে শুরু করে। মা ও বাবা পাখি পালাক্রমে ডিমে তা দেওয়ার জন্য ঠিকমতো আহারও করে না। এরপর বাচ্চা ফুটলে আহারের সন্ধানে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এখানে শামুকখোল, পানকৌড়ি, বক, সারস, ঘুঘু, শালিক, টিয়ে সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়।

অভয়ারণ্য তৈরির শুরু থেকেই নানারকম হুমকির মুখে পড়তে হয় অতিথি পাখিদের। রাতের আধারে পাখি নিধন, নিরাপত্তা ও আশ্রয়স্থল চরম সংকটে পড়ে। বর্তমানে নতুন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কেটে ফেলা হচ্ছে পাখির অভয়ারণ্যের গাছ। গাছ কেটে ফেলার কারণে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন অতিথি পাখি আসা বন্ধ হয়ে যাবে। সেই সাথে পাখিশূন্য হয়ে পড়বে উপজেলার একমাত্র এই পাখি অভয়ারণ্য। প্রতিবছরের মত উপজেলা প্রশাসন ‘অতিথি পাখি’ রক্ষার নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও এত বছরেও পাখিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে তোলো সম্ভব হয়নি। যেন প্রতিশ্রুতিতেই সিমাবদ্ধ রয়েছে ‘অতিথি পাখি’রক্ষা।

এলাকাবাসী দাবি করছেন, ‘পাখি অভয়ারণ্যের মধ্যে থাকা গাছ কাটা ও পাখি শিকার যেন না করা হয়।’ অন্যদিকে জমি মালিকদের ভাষ্য, ‘নিজের জমির গাছ নিজে কাটা দোষের নয়।’

স্থানীয় বাসিন্দা সফর আলী জানান, ‘বেশ কয়েকজন জমির মালিক মাঝে মধ্যেই গাছ কাটেন। এভাবে গাছ কাটার ফলে পাখিদের আবাসন সংকটে পাখি শূন্য হয়ে পড়বে। কোনো পাখি শিকারি যাতে পাখি শিকার করতে না পারে তাই আমরা সারারাত পাহারা দিয়ে থাকি।’

উপজেলা বন কর্মকর্তা মোখলেচুর রহমান বলেন, ‘গাছ কাটার কথা আমি শুনেছি, এভাবে গাছ কাটলে পাখির অভয়ারণ্য হুমকির মধ্যে পড়বে। এলাকা পাখি শূন্য হয়ে পড়বে। আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা দাস বলেন, ‘এটি ঝিনাইদহ জেলার একমাত্র পাখিগ্রাম। এ কারণে অবশ্যই পাখিদের আবাসস্থল সু-নিশ্চিত করতে এবং পাখি অভয়ারণ্য যাতে হুমকির মধ্যে না পড়ে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা গাছ কাটছে আমরা তাদেরকে নিরুৎসাহিত করছি। ইতোমধ্যে পাখি রক্ষায় গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

(এসআই/এসপি/অক্টোবর ০৯, ২০২৪)