সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিবছর শুরু হয় ব্যতিক্রম ঢাকের হাট। হাটজুড়ে চোখে পড়বে অন্য রকম বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতা। বাদক বা যন্ত্রীরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নেচে-গেয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছেন। সবখানে উৎসবের রঙ। এটি দেশের একমাত্র বাধ্যযন্ত্রের হাট। শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী এ ঢাকের হাট। বাঙালির উৎসবে বাদ্যযন্ত্রের জুড়ি নেই। ঢাক-ঢোল ছাড়া দুর্গোৎসব ভাবাই যায় না। বাদ্যের তালে তালে মণ্ডপে মণ্ডপে নাচ-গান-আরতি আর দেবী বন্দনা দুর্গাপূজার প্রধান অনুষঙ্গ। তাই বাহারি রঙ আর আকারের ঢাক-ঢোল, বাঁশি, কাশি, খোলসহ অসংখ্য বাদ্যযন্ত্রের পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা।

প্রযুক্তির এ যুগে কিছুটা ছোট হয়ে এসেছে এ ঢাক ঢোলের হাটটি। তাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা না থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বাধ্যযন্ত্রীদের পড়তে হচ্ছে কিছুটা বিড়ম্বনায়। অনেকেই মুঠোফোনে বায়না করছি বাদ্যযন্ত্রীদের।

বাদ্যযন্ত্রসহ যন্ত্রীরা এসেছেন ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে। প্রায় ৫শত বছরের পুরোনো দেশের একমাত্র বাদ্যযন্ত্রের এ হাট সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের দিচ্ছে বাড়তি আনন্দ। দিন দিন দুর্গোৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এ হাট। মজার বিষয় হচ্ছে, এ হাটে কোনো বাদ্যযন্ত্র বিক্রি হয় না। বিক্রি হন যন্ত্রীরা। যন্ত্রীসহ পছন্দের বাদ্যটি ভাড়া হয় এ হাটে। পূজা শুরুর আগে দরদাম ঠিক করে বায়নার টাকা দিয়ে বাদ্যযন্ত্রসহ যন্ত্রীদের সঙ্গে করে নিয়ে যান পূজার আয়োজকরা।

জনশ্রুতি আছে ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে রাজা নবরঙ্গ রায় চৌধুরী কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার চারিপাড়ায় তার রাজপ্রাসাদে প্রথম দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। রাজবাড়ির পূজায় ঢাক, ঢোল, বাঁশিসহ অন্যান্য যন্ত্রসহ অংশ নিতে খবর পাঠানো হয় বিক্রমপুর পরগনায় যন্ত্রীদের কাছে। সেসময় বিক্রমপুর থেকে আসা যন্ত্রীরা পূজার দুইদিন আগে কটিয়াদী-মঠখোলা সড়কের পাশে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে যাত্রাঘাট নামক স্থানে এসে জমায়েত হতেন। সেই থেকে প্রতিবছর এখানে বসে বাদ্য ও বাদকের হাট। পরে এ হাট স্থানান্তর করা হয় কটিয়াদীর পুরাতন বাজারের মাছ মহাল এলাকায়।

দুর্গাপূজা শুরুর আগের ৩ দিন এ হাট বসে। সোমবার বিকেলে শুরু হওয়া ঢাকের হাট শেষ হবে বুধবার দিন বিকালে।

হাতের নাগালে পছন্দের বাদ্যসহ যন্ত্রী পেয়ে খুশি ক্রেতারাও। একেকজন ঢাকী ১২ থেকে ১৫ হাজার, বাঁশিবাদক ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছেন। আর ছোট ব্যান্ডদল ১৫ থেকে ২০ এবং ৭/৮ জনের বড় দল ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছেন।

কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান জানান, আমি নিজে মঙ্গলবার এই হাটে গিয়েছিলাম। হাটের সার্বিক ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করে হাটে আসা লোকজনের নিরাপত্তা ও থাকা খাওয়ার সহযোগিতা করে যাচ্ছি। ঢাকের হাট ঘিরে কটিয়াদী বাজার এলাকায় শত শত মানুষের সমাগম ঘটে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকের হাটটি কটিয়াদী উপজেলার ঐতিহ্য।

কটিয়াদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকের হাটসহ তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পূজারীরা নির্বিঘেœ যাতে পূজা পালন করতে পারে আমরা সেই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

(এসএস/এএস/অক্টোবর ০৮, ২০২৪)