ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : গত ১৫ দিনে পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীতে পানি দুই দফা বেড়েছে। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের আবাদি জমির ফসল পানির নীচে তলিয়ে গেছে। পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের দাদাপুর, বিলকেদার, ডিগ্রীচরের শত শত হেক্টর জমিতে পানি উঠে গেছে। চরের কলা ফসলসহ অন্যান্য ফসল ভেসে গেছে। সবজির আবাদও পানিতে ডুবেছে। সাঁড়া ইউনিয়নের চরাঞ্চল পুরোপুরি নদীতে একাকার। চরের শত শত হেক্টর আবাদী জমি এখন পানির নিচে। ফলে চরাঞ্চলে চাষাবাদ করা কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ৩৮ মিটার। যা চলতি বছরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে সর্বোচ্চ উচ্চতা। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কমতে থাকে পানি। ৩ অক্টোবর পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ১৬ মিটার। তবে দুইদিন পর ৫ অক্টোবর পুনরায় বাড়তে শুরু করে পানি। এদিন পানির উচ্চতা হয় ১২ দশমিক ২৫ মিটার। রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে পানির উচ্চতা ১ সেন্টিমিটার কমে ১২ দশমিক ২৪ মিটার হয়। সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) আরেক দফা কমে পানির উচ্চতা হয় ১২ দশমিক ১৪ মিটার। মঙ্গলবার কমে ১১ দশমিক ৯৯ মিটার দাঁড়িয়েছে।

পানি আপাতত: কমলেও ফের বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের রিডার হারিসুন নাঈম ইবনে সালাম।

এদিকে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে দেশে বন্যা দেখা দিয়েছে। পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা ও নদী ভাঙনের আশংকায় নদী তীরবর্তী এলাকায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। সাঁড়াঘাটের দোকানী স্বপন হোসেন বলেন, সপ্তাহখানেক আগে নদীর পানি কমে গিয়েছিল। তিনদিন হলো আবারো বাড়তে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। আগে কখনও অক্টোবর মাসে নদীতে পানি বাড়তে দেখিনি। এবার অসময়ে কেন পানি বাড়ছে তা বুঝতে পারছি না।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকার জেলে অসিত হালদার বলেন, গত তিন ধরে পদ্মায় আবারো পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীতে স্রোতও বেড়েছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫টি গার্ডারের মধ্যে ১৩টি গার্ডার এখন পানির নিচে। আরেকটি গার্ডারের কাছাকাছি পানি। যেকোনো সময় এ গার্ডার পর্যন্ত পানি চলে যাবে। পানি বাড়ায় এলাকার মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।

লক্ষীকুন্ডা চরের কৃষক মাজেদ প্রামাণিক বলেন, অসময়ে পদ্মার পানি বৃদ্ধি ও দফায় দফায় প্রবল বর্ষণে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হলো। অধিকাংশ সবজির ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। কৃষকদের যে কী পরিমাণ ক্ষতি হলো, যারা কৃষক শুধু তারাই উপলদ্ধি করতে পারছে।

সাঁড়া ইউনিয়নের চরবামনির কৃষক আনিসুল বলেন, দুই মাসে পদ্মার পানির এমন বৃদ্ধি আগে কখনো দেখিনি। অন্যান্য বছর এসময়ে ডুবে যাওয়া এসব জমিতে আমরা শীতকালীন সবজি আবাদের প্রস্তুতি শুরু করি। এবারে সব জমি পানির নিচে।

মোল্লারচরের সাত্তার হোসেন ৩০ বিঘা জমিতে আখের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, আখের জমিতে পানি উঠেছে। পুরো চর ডুবে যাবে। এবারে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহাকরি পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, উজানের ঢল ও প্রবল বর্ষণে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১৩ দশমিক ৮০ মিটার। বর্তমানে পানির উচ্চতা ১১ দশমিক ৯৯ মিটার। পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা নেই।

(এসকেকে/এসপি/অক্টোবর ০৮, ২০২৪)