গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরুর প্রাক্কালে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পঞ্চমীতে দশভূজা দেবী দুর্গার বোধন হবে। দেবী দুর্গা বরণে জেলার ৫ উপজেলায় ১ হাজার ২৯৪টি পূজা মন্ডপ প্রস্তুত হয়েছে।



পুরাণ অনুসারে দক্ষিণায়নে নিদ্রিত দেবীর নিদ্রা ভাঙার জন্য এই বোধেনের মাধ্যমে বন্ধনা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুসারে আজ জেলার সব মন্ডপে পঞ্চমীতে সায়ংকাল তথা সন্ধ্যায় বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

বোধন শব্দের অর্থ জাগরণ বা চৈতন্যপ্রাপ্ত। শরৎকালের দুর্গাপূজায় এই বোধন করার বিধান রয়েছে। বিভিন্ন পুরাণ অনুসারে ভগবান রামচন্দ্র শরৎকালে রাক্ষসরাজ রাবণকে বধের উদ্দেশ্যে দুর্গাপূজা করেন। তিনি অকালে এই বোধন করেন বলেই এটি অকালবোধন নামে খ্যাত। তবে বসন্তকালে চৈত্র মাসে যে দুর্গাপূজা বা বাসন্তীপূজা অনুষ্ঠিত হয়, তাতে বোধনের প্রয়োজন হয় না।

আজ বোধন শেষে আগামী কাল বুধবার মহাষষ্ঠীতে ষষ্ঠীবিহিত পূজা, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে । ৫ দিনের এই উৎসব শেষ হবে আগামী ১৩ অক্টোবর রোববার বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে।

গোপালগঞ্জ শহরের বাজার কালি মন্দিরের পুরোহিত দীপংকর চক্রবর্তী এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে দেবী দুর্গা বরণে জেলার ৫ উপজেলায় ১ হাজার ২৯৪টি পূজা মন্ডপ প্রস্তুত হয়েছে। সম্প্রীতির জেলা গোপালগঞ্জ। এ জেলায় বহু বছর ধরে বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যের মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সে ধারবাহিকতায় এ বছরও তার ব্যত্যয় ঘটবে না। এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন স্থানীয়রা। এছাড়া প্রশাসন ও আইন শৃংখলারক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

গোপালগঞ্জ পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নুরুল আমিন শেখ বিপ্লব বলেন, আমরা বহু বছর এখানে শান্তিপূর্ন সহ অবস্থান করে আসছি। শহরের বাজার যুব সংঘ ও সাহাপাড়ার পূজা মন্ডপ আমাদের ওয়ার্ডের মধ্যে। এখানে উৎসব মুখর পরিবেশে শান্তিপূর্নভাবে পূজা উদযাপনে আমরা সবধরণের সহযোগিতা করে আসছি। এবছরও সেটি অব্যাহত থাকবে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় কুমার সিকদার বলেন, প্রশাসন ও আইন শৃংখলারক্ষা বাহিনীর সাথে আমরা পৃথকভাবে অসংখ্যবার মিটিং করেছি।সবার সহযোগিতায় এবারে দুর্গোৎসব নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্নভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর সাথে আলাদা মিটিং করে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে । সম্প্রীতি বজায় রাখতে মসজিদেও মিটিং করা হয়েছে। পূজা উৎসবমুখর করতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।

পূজার আইন শৃংখলা নিয়ে গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিটি পুজা মণ্ডপে ৫ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে । সাধারণ পুলিশসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও ভিডিপি সদস্যরাও নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। মাঠে র‌্যাব, সেনাবাহিনী, ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল টিম, এছাড়া স্ট্রইকিং ফোর্স কাজ করবে। পূজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনী কাজ শুরু করেছে।

গোপালগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ আশ্রাফুল আলম বলেন, পূজা উদযাপনের জন্য সরকারি ভাবে জেলার প্রতিটি মন্ডপে ৫০০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এ জেলায় সরকার ১২৯৪ মন্ডপে ৬৪৭ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে।

(এমএস/এএস/অক্টোবর ০৮, ২০২৪)