রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় আব্বাস আলী সরকার, লালচাঁন, আব্দুর রশিদ উদয়সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ অমান্য করে ১৮২ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করার অভিযোগ উঠেছে। 

এক হিন্দু পরিবারসহ আরও এক পরিবারের জমি জোরপূর্বক দখল করেছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী দীলিপ দেবনাথ, ধন রঞ্জন দেবনাথ ও আব্দুর রহমান লাল সরকার।

জমি দখল নিয়ে ওই উপজেলায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা, উত্তেজনা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। ওই প্রভাবশালীদের হাত থেকে জমি উদ্ধার করতে ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর আব্দুল করিমের ওয়ারিশরা আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওই ১৮২ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করেছে। সেখানে তারা প্রথমেই একটি এক চালা টিনের ঘর তৈরি করেন। পরে সেখানে আরও পাঁচটি দুই চালা টিনের ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন।

ভুক্তভোগী আব্দুর রহমান লাল সরকার জানায়, মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের পাঠানপাড়া মৌজার ৩৩৫ শতাংশ জমি সিএস ৭ ও ৮ নম্বর খতিয়ানে বলরাম পালের নামে রেকর্ড হয়। বলরাম পাল মারা যাওয়ার পর তার ছেলে মহেন্দ্র চন্দ্র পাল দুইটি দলিল মুলে নিত্য গোপাল দেবনাথ, মনেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ ও রাধা গোবিন্দ নাথের কাছে ১৮২ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। পরবর্তীতে নিত্য গোপাল দেবনাথের কাছ থেকে তাঁর স্ত্রী তরুলতা ৯১ শতাংশ জমি সাব কবলা দলিলমুলে পায়। পরে ১৮২ শতাংশ জমি নিত্য গোপাল দেবনাথ, মনেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ ও রাধা গোবিন্দ নাথ তাদের নিজেদের নামে এসএ জরীপে রেকর্ড করেন। সেই ১৮২ শতাংশ জমি ১৯৮০ সনে আব্দুল করিমরা জোরপূর্বক দখল করে ঘর তৈরি করে বিআরএস জরিপে ওই স্বার্থহীন ব্যক্তিদের নামে রেকর্ড করেন।

সেই জমি উদ্ধারের জন্য নিত্য গোপাল দেবনাথ, মনিন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ ও রাধা গোবিন্দ দেবনাথ ১৯৮০ সনে বিজ্ঞ জামালপুর দ্বিতীয় মুন্সেফী আদালতে ১৫৪ নম্বর মামলা দায়ের করেন। একই বছর একই আদালতে আব্দুল করিমরা একটি ঘোষনা মুলক মামলা দায়ের করেন। পরে বিজ্ঞ আদালত সেই মামলা দুটি একত্রে পরিচালনার নির্দেশ দেন। মামলায় বিজ্ঞ আদালত ১৫৪ নম্বর মামলার বিবাদী আব্দুল করিমদের বিরুদ্ধে ডিগ্রী প্রদান করেন। পরে আব্দুল করিমরা ওই ডিগ্রীর বিরুদ্ধে ১৯৮১ সনে জেলা জজ আদালতে ১৭০ ও ১৭১ নম্বর দুইটি আপিল মামলা দায়ের করেন।

বিজ্ঞ আদালত সেই আপীল মামলা দুটি একত্রে শুনানীর পরে মামলা দুটি না মঞ্জুর করে নি¤œ বিজ্ঞ আদালতের রায় ও ডিগ্রী বলবৎ রাখেন। এসএ রেকর্ডীয় মালিক নিত্য গোপাল দেবনাথ, রাধা গোবিন্দ দেবনাথ ও মনিন্দ্র চন্দ্র দেবনাথের ওয়ারিশ দীগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথদের ১৯৮০ সনের ১৫৪ নম্বর মামলার রায় ও ডিগ্রীর প্রেক্ষিতে ১৯৮৪ সনের ২১ নম্বর ডিগ্রীজারি মামলায় নিত্য গোপাল দেবনাথ, রাধা গোবিন্দ দেবনাথ ও দীগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ বিজ্ঞ মেলান্দহ মুন্সেফী আদালত নালিশী ভুমিতে দখল পায়। ডিগ্রীর পরে মামলার বিবাদীরা তাদের সেই ঘর অপসারন করে দখল ছেড়ে দেন।

পরে নিত্য গোপালের স্ত্রী তরুলতার নিকট থেকে এওয়াজ নামা দলিলমুলে আবদুর রহমান লাল সরকার ৯১ শতাংশ ও রাধা গোবিন্দ দেবনাথের কাছ থেকে সুধা রাণী ও তাঁর ছেলে মন্তোষ দেবনাথ সাড়ে ৪৫ শতাংশ জমি কিনে নেন। দীগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ সাড়ে ৪৫ শতাংশ জমি প্রাপ্ত হয়। পরে আবদুর রহমান লাল সরকার ও সুধা রাণী ও তাঁর ছেলে মন্তোষ দেবনাথ তাদের জমি দখলে থাকাবস্থায় ২০০৩ সনে মনির উদ্দিন ও আব্দুল করিমের ওয়ারিশসহ বেশ কয়েকজন দখলবাজ লোকজন ওই জমি পুনরায় দাবি করেন। দীগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, আবদুর রহমান লাল সরকার ও সুধা রাণী ও তাঁর ছেলে মন্তোষ দেবনাথ ২০০৩ সনে ৮৪ নম্বর স্বত্ব ঘোষনার মামলা দায়ের করেন। পরে মনির উদ্দিন ও আবদুল করিমের ওয়ারিশরাসহ সকলে মিলে ২০০৪ সনে আদালতে সোলেনামা দাখিল করেন। ওই বছরই বিজ্ঞ আদালত সোলেনামা মুলে ডিগ্রীর আদেশ প্রদান করেন।

পরে মন্তোষ চন্দ্র দেবনাথ মারা গেলে তার জমি ছেলে মনো রঞ্জন দেবনাথ ও ধন রঞ্জন দেবনাথ ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত হয় এবং সুধা রাণী তাঁর হিস্যার জমি দ মনো রঞ্জন দেবনাথ ও ধন রঞ্জন দেবনাথকে দলিল মুলে হস্তান্তর করেন। পওে তারা ৬৯০ নম্বর নামজারি করেন। দিগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ মারা গেলে তাঁর সম্পত্তি দুই দীলিপ চন্দ্র দেবনাথ ও দিজেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত হওয়ার পর ৬৯১ নম্বর নামজারি করেন।

পরে আব্দুর রহমান লাল সরকার তার জমি ভুমি অফিসে নামজারি করতে গেলে জানতে পারেন আব্দুর রশিদ উদয়, গেন্দি বেওয়া, অছিমুদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, কমলা বেগম ও বুচি ওরফে জয়গুনদের নামে ৯১ শতাংশ জমি নামজারি করেন। পরে ভুক্তভোগী আব্দুর রহমান লাল সরকার ওই অবৈধ খারিজ বাতিলের জন্য মেলান্দহ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) কাছে আবেদন করেন।

এ নিয়ে আব্দুর রশিদ উদয় ও লালচান হয়রানী করার জন্য ভুক্তভোগী আব্দুর রহমান লাল সরকারদের বিরুদ্ধে হত্যা মামরাসহ একাধিক মামলা দায়ের করে। ভুক্তভোগী আব্দুর রহমান লাল সরকার ওই সকল মামলার বোঝা নিয়ে বিচারের আশায় আদালতের দ্বাওে দ্বারে ঘুরছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত লালচাঁন বলেন, ‘আমার জমিতে আমি ঢুকছি। আমার কাগজপত্র আছে। আদালত কি দিছে না দিছে এসব আমি বুঝি না। আমি আদালতে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেছি।’

এ প্রসঙ্গে মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘আমি দুইপক্ষকে ডেকে ছিলাম। একটিপক্ষ আসেনি। পরে পুলিশী নিয়মানুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহন করা হয়েছে।’

(আরআর/এসপি/অক্টোবর ০৭, ২০২৪)