গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : আর মাত্র ১ দিন পর সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হবে। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে জেলার মন্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। মন্ডপগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিমা শিল্পী, সাজসজ্জার কাজে নিয়োজিত কর্মী ও আয়োজকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। রং তুলির আঁচড়ে দেবীমূর্তিকে ফুটিয়ে তুলছেন প্রতিমা শিল্পীরা । 

অধিকাংশ মন্ডপের প্রতিমায় রং এর কাজ শেষ হয়েছে। রাত- দিন সমানভাবে আলোক সজ্জা ও সাজসজ্জার কাজ চলছে। মন্ডপগুলোকে আকর্ষনীয় ও নবরূপে সাজানো হচ্ছে। দর্শনার্থী টানতে এখানে আনা হয়েছে নতুনত্ব ও বৈচিত্র। আয়োজকরা এসব কাজ তদারকি করছেন। সেই সাথে মূল পূজার সার্বিক কাজকর্ম তারা নিজেদের কাধে রেখে কাজ করে যাচ্ছে। আজ সোমবার ও আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যেই পূজা মন্ডপের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

এখন ঢাকে কাঠি, ধূপ-ধূনচি ও পূজা-অর্চনার জন্য অধীর আগ্রহে প্রতিক্ষা করছেন পূজারীরা।উৎসবমুখর পরিবেশে গোপালগঞ্জে শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন হবে বলে প্রত্যাশা আয়োজকদের।

প্রতিমা শিল্পী রাজিব সেন বলেন, গত বছর ১০টি প্রতিমা করেছিলাম। সেখানে এবছর ৬টি প্রতিমা করছি। গত বছরের তুলনায় এছর কাজ ও পরিশ্রমিক কম বলে তিনি জানান। তিনি ৫টি মন্ডপের প্রতিমার কাজ সম্পন্ন করেছেন। বাকীটির কাজ সোমবার ও মঙ্গলবারের মধ্যে সম্পন্ন করেবন বালে জানান। পূজার আগেই সব কাজ শেষ করবেন জানিয়ে বলেন, রং, তুলির কাজ নিয়ে এখন আমাদের দম ফেলার ফুসরত নেই।

সাজসজ্জা কর্মী ফরিদপুরের ফকির আতিক বলেন, গোপালগঞ্জ শহরের বাজার যুব সংঘের গেট, প্যান্ডেল নির্মাণ সহ মন্ডপ ডেকরেশন ও আশপাশ এলাকা সাজসজ্জার কাজ আমরা করছি। এখানে দৃষ্টিনন্দন কাজ করা হয়েছে। আজ সোমবারের মধ্যেই সব কাজ শেষ হবে। আশাকরি এটি দর্শনার্থীদেরে নজর কারবে।

শহরের বাজার যুব সংঘের পূজার আয়োজক দিলীপ কুমার সাহা দিপু বলেন, বৃষ্টির কারণে আয়োজন ও প্রস্তুতিতে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। তারপরও আমরা সব প্রস্তুতি পূজার আগেই সম্পন্ন করব। ৯ অক্টোবর ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে পূজার মূল অনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ১৩ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এ উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।জেলা প্রশাসন ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সহযোহিতায় আমরা শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা করতে পারব বলে প্রত্যাশা করছি।

পূজারী সৌরভ সাহা বলেন, মায়ের কৃপা লাভের আশায় এখন পূজার জন্য অপেক্ষা করছি।পূজার দিনগুলোতে দেশ ও জাতির সুখ, সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করব।

গোপালগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় কুমার সিকদার জানিয়েছেন এ বছর জেলার ৫ উপজেলায় ১ হাজার ২৯৪টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে গোপালগঞ্জ সদর সদর উপজেলায় ৩৫১টি মন্ডপ, কোটালীপাড়া উপজেলায় ৩২২ টি মন্ডপ, মুকসুদপুর উপজেলায় ২৯৩টি মন্ডপ, কাশিয়ানী উপজেলায় ২৩৬টি মন্ডপ ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৯২টি মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। আমরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা প্রশাসন ও মন্ডপ কমিটির সাথে পৃথক বৈঠক করেছি। পূজার দিনগুলোতে আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনীর পাশাপাশি আমরা মন্ডপগুলো পরিদর্শন করব। এছাড়া মন্ডপ কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন। মন্ডপগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আশা করছি এবারের পূজা সুশৃংখল পরিবেশে সম্পন্ন হবে।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে অনেক আগেই গোপালগঞ্জে জেলা পর্যায়ে, উপজেলা পর্যায়ে সভা ও কমিটি করা হয়েছে। জেলার ১ হাজার ২৯৪ টি মন্ডপে সিসি টিভি ক্যামেরা, পর্যাপ্ত আলো, ইন, আউট ও ট্রাফিকিং এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর সাথে আলাদা মিটিং করে সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। সম্প্রীতি বজায় রাখতে মসজিদেও মিটিং করা হয়েছে। পূজা নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্প্ন্ন হয়েছে।

(এমএস/এএস/অক্টোবর ০৭, ২০২৪)