৪ অক্টোবর, ১৯৭১
বেনাপোলে পাকবাহিনীর সহযোগী ২ জন মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম.এ.জি. ওসমানী মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তাঁরা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বেশ কিছু সফল অভিযানের জন্য মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের অভিনন্দন জানান।
৮নং সেক্টরের হাকিমপুর সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনী এক প্লাটুন পাকসেনার একটি দলকে কাকডাঙ্গার কাছে এ্যামবুশ করে। উভয়পক্ষের মধ্যে প্রচন্ড গোলাবিনিময়ে ৬ জন পাকসেনা নিহত ও ৫ জন আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা অক্ষত অবস্থায় নিরাপদে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
৮নং সেক্টরের হাকিমপুর সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনী একটি এ্যামবুশ দল পাকসেনাদের একটি দলকে সোনাবাড়িয়া-মান্দরা এলাকায় এ্যামবুশ করে। এই এ্যামবুশে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়।
কুমিল্লা জেলার কসবার কাছে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল তৃতীয় পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একটি লঞ্চের ওপর আক্রমণ চালায়। এই সংঘর্ষে পাকসেনাদের লঞ্চটি পানিতে ডুবে যায় এবং অনেক পাকসৈন্য নিহত হয়।
ঢাকায় বনানীস্থ নৌ-বাহিনীর সদর দফতরের কাছে গলফ্ স্কোয়ারে মুক্তিবাহিনীর গেরিলাযোদ্ধারা পাকবাহিনীর সহযোগঅ রাজাকারদের একটি দলকে অতর্কিতে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ৪ জন রাজাকার নিহত হয়।
গোপালগঞ্জ মহকুমার কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়ায় পাকিস্তানি সৈন্যদের অবস্থানের ওপর মুক্তিবাহিনী ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। এতে পাকবাহিনীর ৩০ জন সৈন্য ও ২০ জন রাজাকার নিহত হয়। এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তানিরা হেলিক্পটারের সাহায্যে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পুনরায় আক্রমণ চালায়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
যশোরের বেনাপোলে পাকবাহিনীর সহযোগী ২ জন রাজাকার মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
গভর্নর ডাঃ এ.এম. মালিকের সভাপতিত্বে তথাকথিত পুনর্বাসন বোর্ডের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন এবং অর্থনৈতিক পুনগঠনের জন্যে একটি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
পিডিপি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আগামী উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করে।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত নিয়মিত বাংলা কথিকা ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ ঃ
পূর্ব বাংলা পূর্ব পাকিস্তান-বাংলাদেশ। এ রূপান্তর ২৫ মার্চের সেই কালো রাতে বাংলার নিরীহ নিরস্ত্র গণতন্ত্রকামী মানুষের উপর ইয়াহিয়ার ঘাতক দলের উন্মুক্ত আক্রমণের ফলে চ’ড়ান্ত রূপ নিলেও বিগত ২৫ বছরের অনেক বঞ্চনা আর রক্তঝরার ইতিহাস জমাট বেধে ছিল এর পিছনে। বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে ফল্লুধরার সেই বাঁধটি খুলে গেছে, যা প্রতিনিয়ত পিষে মারছিলো বাঙালির সঞ্জীবনী শক্তিকে। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশকে পঙ্গু করে রাখার জন্য, সামাজিকভাবে কোণঠাসা করার জন্য একের পর এক চক্রান্তের জাল বুনেছে পশ্চিম পাকিস্তানের সামন্ত সামরিক চক্র। বাংলাভাষা, বাংলার সংষ্কৃতি ও ঐতিহ্যেকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আঘাত এসেছে একের পর এক। এসবের প্রতিবিধান দাবি করে বাঙালি পেয়েছে শুধু বুলেটরু
..............পাকিস্তানের বিগত ২৩ বছরের ইতিহাসে এইভাবে বার বার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তার সামগ্রিক বিকাশের প্রচেষ্টাকে হিংস্র পন্থায় দমন করতে চাওয়া হয়েছে। ৪৮,৫২,৬২,৬৬, ৬৯, ৭০ সালগুলো বাংলার মানুষের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের এক-একটি উজ্জ্বল স্বাক্ষর। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পাল্টা হামলা চালিয়েছে নব নব কৌশলে । তাই ’৭১ এর ২৫ মার্চের পর পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে বাঙালির জাতিসত্তা বিকাশের পথ চিরতরে রুদ্ধ হয়ে গেছে। এবার শুরু হয়েছে স্বাধীন জাতি হিসেবে দুনিয়ার বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবার পালা।
তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
(ওএস/এএস/অক্টোবর ০৪, ২০২৪)