‘না পালানোর কথা বলে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা’
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলার মানুষ পাকিস্তান আমল থেকে মুক্তির সংগ্রাম করে আসছে। আমরা ভেবেছিলাম ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর আমাদের মুক্তির সংগ্রাম শেষ হয়েছে।
কিন্তু কষ্ট নিয়ে আজ বলতে হয় আমাদের এখনো সংগ্রাম করতে হয় গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য, ইসলামী ঐতিহ্য রক্ষার জন্য। স্বাধীনতার সময় আমাদের যে লক্ষ্য ছিল তা আজও পূরণ হয়নি। যেমন স্বাধীনতার আগে ২২ পরিবারের হাতে সম্পদ কুক্ষিগত ছিল তেমনি আজও আওয়ামী লীগের মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে রয়েছে দেশের সম্পদের অধিকাংশ। এক হিসাব বলছে, বর্তমানে এক শতাংশ ধনীর হাতে জাতীয় আয়ের ১৬ শতাংশ কেন্দ্রীভূত। দেশে আজ প্রায় ৩ থেকে ৪ কোটি লোক দরিদ্র। অন্যদিকে বাড়ছে বেকারত্বের হার।
মাসুদ সাঈদী বলেন, গত ১৭ বছর শেখ হাসিনা বিনা ভোটে ক্ষমতায় থেকে নিজেকে এদেশের রাজা মনে করেছিলেন। দেশের মানুষকে হাসিনা প্রজা মনে করতেন। শেখ হাসিনা দেশ শাসন নয় শোষন করতে এসেছিলেন। তারা ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। তারা পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে। ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সবকিছুকে তারা ব্যবহার করেছে। সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠানকে তারা ধ্বংস করেছে। শেখ হাসিনা আর তার দলের নেতারা দুর্নীতির নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনা ধরে নিয়েছিল তিনি সারা জীবন ক্ষমতায় থাকবেন। তারা চেয়েছিল মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করবেন এবং সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলবেন।
পিরোজপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নূরানী তালিমুল কুরআন মাদরাসা ময়দানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক আয়োজিত স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় সভার বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পিরোজপুর-১ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মাসুদ সাঈদী এসব কথা বলেন।
মাসুদ সাঈদী আরও বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিল, আমি শেখ মুজিবের মেয়ে, আমি পালাতে জানি না। সেই তিনি ছাত্র আন্দোলনের মুখে হেলিকপ্টার দিয়ে গণভবন থেকে পালিয়েছেন। গেল ১৭ বছরে জামায়াত-বিএনপির প্রায় এক হাজার লোককে গুম করে হত্যা করা হয়েছে। ৭০ লাখ মানুষের ওপর মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার জুলুম নির্যাতনে কোনো রাজনৈতিক নেতাকর্মী নিজ বাসা বাড়িতে ঘুমাতে পারতেন না।
এখনো আওয়ামী লীগ আর তাদের দোসররা বিভিন্ন রকমের ষড়যন্ত্র করছে। সামনে দুর্গাপূজা আসছে। এ দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে হাসিনার সন্ত্রাসীরা দেশে নৈরাজ্য ও অশান্তি তৈরি করতে পারে। সেদিকে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
কোরআনের পাখি আল্লামা সাঈদীকে শেখ হাসিনা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন। শুধু আল্লামা সাঈদী-ই নন এদেশের সব মত ও পথের অসংখ্য আলেমকে গ্রেপ্তার করে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন তিনি তার পিতার মতোই আলেম বিদ্বেষী, ইসলাম বিদ্বেষী। আজকের এ সভা থেকে আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ধরে এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচার করে বাংলাদেশের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি ইকবাল হোসেনের সভাপতিত্বে ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড সেক্রেটারি হাসান মাতুব্বরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর জেলা শাখার আমীর বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ তাফাজ্জল হোসেন ফরিদ। আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রব, জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ জহিরুল হক, পৌর আমীর মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকসহ স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতারা।
(ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪)