সেচ খাল ‘বেহাল’
পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই, বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি
শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : টানা ভারি বর্ষণে বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে মৌসুমি ফসল। কৃষকের শত শত বিঘা জমির মাসকলাই, শাকসবজি ও পাকা ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে। অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন ও সেচ খাল সংস্কার না করায় বন্ধ হয়েছে পানি প্রবাহের পথ। ফলে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে মাঠের পর মাঠ ফসল পানিতে ডুবে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ঝিনাইদহের কয়েক হাজার চাষি।
সদর উপজেলার সাধুহাটি ইউনিয়নের বংকিরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় ডুবে আছে মাঠের পর মাঠ। পাকা ধান, মরিচ খেত, বেগুন, সেচ পাম্পসহ হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল পানির নিচে। পাতা কপি, ফুল কপি, মরিচ গাছগুলো মরে নেতিয়ে পড়েছে। কলাগাছ ভেঙে পড়ে আছে।
গ্রামবাসিরা বলছেন, জীবনা গ্রাম থেকে রাঙ্গীয়ারপোতা পর্যন্ত দৈর্ঘ্য সেচ খালটি সংস্কার করা হলে দ্রুত পানি নিস্কাষন হতো। মধুহাটি, সাগান্না ও হলিধানী ইউনিয়নের মাঠেও এমন জলাবদ্ধতা দেখা মিলেছে। সদর উপজেলার ডাকবাংলা, রাঙ্গীয়ারপোতা, নাথকুন্ডু, ডহরপুকুর, বাথপুকুর, বেজিমারা, মামুনশিয়া, চোরকোল, বেড়াশুলা, সাধুহাটীর সাইভাঙ্গার বিল ও পোতাহাটীর কুড়ির মাঠ পানিতে ডুবে আছে।
বংকিরা গ্রামের কৃষক ইছানুল হক বিশ্বাস জানান, ‘চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবনা গ্রামের কিছু লোক বাঁধ দেওয়ার কারণে তার গ্রামের এক হাজার বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে।
তিনি বংকিরা গ্রামে বিএডিসি কর্তৃক খননকৃত কাজল খালটি সংস্কারের দাবী জানিয়ে বলেন, খালটি খনন না করা হলে শীত মৌসুমেও ধান চাষাবাদ করতে পারবেন না।’
এদিকে সেচ খালের পানি নিষ্কাশনের স্লুইচ গেটের মুখ সরু হওয়ায় পানি বের হতে না পেরে শৈলকুপা উপজেলার প্রায় ২০ টি গ্রামের মাঠের ফসলি জমি পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। দুধসর, নিত্যানন্দপুর ও উমেদপুর ইউনিয়নের দুধসর, মলমলি, পুকুরপাড়, ত্রিপুরাকান্দি, টংবিলা, বোয়ালিয়া, আগবোয়ালিয়া, কচুয়া, ভিক্ষাকর, ফলিয়া, খড়িবাড়িয়া, খালফলিয়া, বরইচারা, দক্ষিণ মনোহরপুর, সাবাশপুর, আশুরহাট, শেখরা, গোপালপুর সহ ২০ গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে জিকে সেচ খাল।
এলাকায় এটি ‘বড় খাল’ নামে পরিচিত। এসব গ্রামের ফসলি জমির পানি জিকে সেচ খালের শেখড়া গ্রামের স্লুইসগেট দিয়ে বের হয়ে চলে যায় নবগঙ্গা নদীতে। তবে এ স্থানটির স্লুইচ গেটটি সংকুচিত হওয়ায় বৃষ্টিতে এলাকার ফসলি জমি ডুবে গেছে। এমনকি দুধসর ইউনিয়নের টংবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে পানি ঢুকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় স্কুল।
খালফলিয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক স্বপন কুমার অধিকারী বলেন, ‘শেখড়া গ্রামের স্লুইচ গেটটি সংকুচিত হয়ে গেছে ও দীর্ঘদিন ধরে সেচ খাল সংস্কার না হওয়ায় ফসলি জমি ডুবে গিয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
টংবিলা গ্রামের কৃষক অনিল রায় বলেন, ‘আমার ৮ বিঘা জমিতে ধান ও পেঁয়াজ ছিল। এবারের বৃষ্টিতে সব ডুবে গেছে। শেখড়া এলাকার স্লুইচ গেটটি সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ দুঃখ যাবে না।’
ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ‘টানা বর্ষনে জেলায় ৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর ফসলী জমি আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতি হওয়া ফসলের মধ্যে রোপা আমন ৯১৩ হেক্টর, সবজি ৬৬৫ হ্ক্টের, মাসকলাই ১১০৬ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ৯৮ হেক্টর, মরিচ ২০০ হেক্টর, কলা ১৭০ হেক্টর, রোপা আউশ ১০ হেক্টর, তুলা ২১ হেক্টর, পান ২ হেক্টর ও মুগ ডাল ৮০ হেক্টর রয়েছে। আক্রান্ত ফসলের মধ্যে ১১৭৫ হেক্টর জমির ফসল সম্পুর্ন নষ্ট হয়ে গেছে। বেশি ক্ষতি আশঙ্কা হয়েছে মহেশপুর, কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলায়। ’
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, ‘গত ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একবার ভারি বর্ষণে খেতের ফসল নষ্ট হয়েছিল, আবার নতুন করে বর্ষন শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, আগে তো জেলায় ৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর ফসলী জমি আক্রান্ত হয়েছিল। ক্ষতি হয়েছিল ১১৭৫ হেক্টর জমির ফসল। নতুন করে তালিকা করে কৃষি বিভাগ আক্রান্ত ও ক্ষতির পরিমান নিরুপন করবে।’
জলাবদ্ধতা নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের ঝিনাইদহ জোনের সহকারী প্রকৌশলী সৌরভ কুমার বিশ্বাস জানান, ‘তিনি সদর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন মাঠ পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে দেখা গেছে বহু ক্ষেতের ফসল বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে কি ব্যবস্থা গ্রহন করা যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
(এসআই/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪)