উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী লুধিয়ানায় এক সমাবেশে বলেন, যেসব বিদেশী সরকার বাংলাদেশ সমস্যাকে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে অভিহিত করেছেন, তারা পক্ষান্তরে পাকিস্তান সরকারের অগণতান্ত্রিক কার্যক্রম ও গণহত্যার নীতিকে সমর্থন করছেন। তিনি বলেন, ভারত সরকার চান তার দেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশের শরণার্থীরা মুক্ত স্বদেশে ফিরতে আগ্রহী।

১নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী সুবেদার রহমান আলীর নেতৃত্বে পাকবাহিনীর চম্পকনগর বিওপি আক্রমণ করে। কিছুক্ষণের এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর ৩ জন সৈন্য হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা কোনোরূপ ক্ষতি ছাড়াই নিজেদের অবস্থানে ফিরে আসে।

মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল চট্টগ্রাম-কুমিল্লা সড়কে জগন্নাথদীঘির কাছে বাজানকারা সেতুটি উড়িয়ে দিয়ে সেতুর উত্তরে ১০ জন গেরিলা ও একটি নিয়মিত বাহিনী পাকসেনাদের অপেক্ষায় এ্যামবুশ পাতে। বাজানকারা সেতু ধ্বংসের সংবাদ পেয়ে ফেনী থেকে পাকবাহিনীর একটি শক্তিশালী দল সেতুর দিকে অগ্রসর হয়। পাকসেনারা এ্যামবুশের আওতায় এলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর প্রচন্ড আক্রমণ চালায়। এতে পাকবাহিনীর একজন অফিসারসহ ২৫ জন সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পাকসেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে ফেনীর দিকে পালিয়ে যায়।

২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী সুবেদার আলী আকবর পাটোয়ারীর নেতৃত্বে পাকসেনা ও রাজাকারদের রামগঞ্জ অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ১৪ জন পাকসেনা নিহত ও ১৭ জন আহত হয়।

‘দাবানল’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় : মালিকনগর এলাকায় প্রায় দুই কোম্পানী পাকসৈন্যের সাথে মুক্তিবাহিনীর গোলাবিনিময়ে ২ জন পাকসৈন্য নিহত হয়।

‘মুক্তিযুদ্ধ’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় : রংপুর জেলার ডিমলা থানার অন্তর্গত সুটিবাড়ি হাটের পশ্চিমে জোড়জিগা গ্রামে মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে ৯ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং কয়েকজন কোন প্রকারে অস্ত্রশস্ত্র ফেলে প্রাণ বাঁচায়। ঐ থানার বালাপাড়া গ্রামে মুক্তিবাহিনীর পেতে রাখা মাইনে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। পরে বর্বর পাকসৈন্যরা বালাপাড়া গ্রাম সম্পূর্ণভাবে জ্বালিয়ে দেয়।

পূর্ব পাকিস্তানের শ্রম, সমাজকল্যাণ ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী এ.এস.এম সোলায়মান ঢাকায় বলেন, পাকিস্তানের বীর সেনাবাহিনী শত্রুকে (মুক্তিযোদ্ধা) নির্মূল করে দিয়েছে। শত্রুরা প্রিয় মাতৃভ’মি পাকিস্তান ভাঙ্গতে চেয়েছিল। কোন শক্তিই পাকিস্তান ভাঙ্গতে পারবে না।

সৈয়দ আজিজুল হকের বাসায় পিডিপি-র বিশিষ্ট নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপানর্বাচন পিছিয়ে দেবার ব্যাপারে নূরুল আমিনের দেয়া বিবৃতিকে অনুমোদন করা হয়। একই দাবী জানান কাইয়ুম মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক খান এ. সবুর।

‘মুক্ত বাংলা’ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয় নিবন্ধ ‘অভ্যুদয়’ :
মুক্তবাংলার প্রথম সম্পাদকীয় নিবন্ধটা লিখতে বসে সহসাই মনে পড়ে গেল একদা একটি কিশোর বালকের জিজ্ঞাসা : বাঙ্গালী জাতির কি কোন ইতিহাস নেই? এই যেমন গ্রীকদের রয়েছে, মিশরীয়দের রয়েছে, ফরাসীদের, এমন কি ইংরেজদেরও।
..............
সময়টা ছিল নির্বাচন প্রস্তুতি কাল। জনৈক রাজনৈতিক বন্ধুর বৈঠকখানায় বসেছিলাম। আমাদের আলোচ্য বিষয়ের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো-বাঙ্গালী জাতি। কিন্তু তবুও কিশোরটির জিজ্ঞাসকে সঠিক মীমাংসায় নিষ্পত্তি করতে পারিনি কেউ। কারণ বাংলার ইতিহাস ও বাঙ্গালী জাতি খুব স্পষ্ট ছিলো না তখনো।
অথচ ভাবতেও পারিনি বাঙ্গালী জাতির সত্যিকার ইতিহাস রচনার মালমসলা তৈরী হতে যাচ্ছে-শীঘ্রই তার সূচনা হবে। ইয়াহিয়া খান তার পাঞ্জাবী দস্যু বাহিনীর দ্বারা বাংলার বুকে নজিরবিহীন গণহত্যা ও পৈশাচিক বর্বরতা চালিয়ে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইবে বাংলাদেশের সত্তাকে। কিন্তু রক্ত স্নাত হয়ে জেগে উঠবে বাংলাদেশের জনগণ। দেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষায় সগৌরবে হবে উত্তীর্ণ। অভ্যুদয় ঘটবে এক নতুন জাতির-যার একমাত্র পরিচয় : বাঙ্গালী।
আজ সেই বাঙ্গালী জাতির জন্ম হয়েছে। ঐক্য, সাহস ও সংগ্রামী মনেবলে তাঁরা অপরাজেয়। তাঁরা রচনা করে
চলেছেন নিজেদের সত্যিকারের ইতিহাস।

তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
(ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪)