ইউএনও তুমপার বিরুদ্ধে নিজ কর্মস্থলে সাম্রাজ্য গড়ে তোলার অভিযোগ
মোঃ শাজনুস শরীফ, বরগুনা : বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত আনোয়ার তুমপার বিরুদ্ধে নিজ কর্মস্থলে স্বামীর নামে জমি কিনে পরিকল্পনা করে রিসোর্ট তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে ওই জমির চারপাশে সীমানা দিয়ে বালু ভরাট করে রিসোর্ট করার উপযোগী করেছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের সম্ভাবনাময়ী পর্যটন কেন্দ্র শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতের প্রবেশ মুখে এক খন্ড জমিতে স্থানীয় গ্রাম পুলিশের তদারকিতে কাজ চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ছয় মাস আগে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বামী মোঃ সিফাতুল হকের নামে শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন সাবেক ৩২ নাম্বার খতিয়ানের ২৫৫০, ২৫৫১,২৫৫২, ২৫৫৪, ২৫৫৫, ২৫৮৫, ২৫৯৬, ২৫৯৮, ২৫৯৯ দাগ নাম্বারে ৯ কাঠা জমি ক্রয় করেন। এখানে বিলাসবহুল রিসেট করার পরিকল্পনা করছেন তিনি।
জমির মালিক নলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা লতিফ ফকিরের ছেলে মোঃ ইসমাইল ফকিরের কাছে জমি বিক্রির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওখানের জমি আমি বিক্রি করেছি তালতলী উপজেলার ইউএনও স্যারের এক আত্মীয়র কাছে, জমি বিক্রির সময় ইউএনও স্যার ছিলেন।তবে ইউএনওর আত্মীয়র নাম জানতে চাইলে বলে তার নাম আমার মনে নেই।
এদিকে ইউএনও তার বদলী ঠেকাতে আবারও জোড়ালো তদবির চালাচ্ছেন। অন্তর্বতীকালিন সরকার প্রশাসনের সর্বত্র বদলী শুরু করলেও বার বার বদলী ঠেকিয়ে একই জায়গায়ই বহাল থাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন ইউএনও সিফাত আনোয়ার তুম্পা। গত ৮ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই বহুল আলোচিত ইউএনও’র বদলী আদেশ দেয়া হয়। ইউএনও’র অনুগত স্থানীয় আওয়ামী ও তার দালালচক্রের যোগসাজশে ৯ সেপ্টেম্বর তালতলী সদর রোডে বদলী আদেশ প্রত্যাহারের দাবীতে গুটি কয়েক লোক নিয়ে মানববন্ধন করেন। ওই মানববন্ধনে স্থানীয় বিএনপির সভাপতি সাধারন সম্পাদক সহ গুরুত্বপূর্ন কাউকে দেখা যায়নি। অপরদিকে মানববন্ধনের বিপক্ষে ইউএনও’র বদলীর দাবীতে কলেজ শাখার সমন্বয়ক বশির উদ্দিনের নেতৃত্বে বেশকিছু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা মিছিল শুরু করলে ইউএনও’র নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার অমিত দত্ত পুলিশ প্রশাসন নিয়ে মিছিলটি বন্ধ করে দেন।
এ সময় মিছিলকারী ছাত্র জনতা বলেন, এই ইউএনও আওয়ামীলীগের পূনর্বাসন করতে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানী করছেন। আওয়ামী দালালদের মাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করিয়ে বাড়ীঘর ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন। মানববন্ধনের প্রমান নিয়ে উপর মহলে তদবির করে এদিনই বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের প্রজ্ঞাপন জারি করেন ওই মন্ত্রনালয়। যাহা সম্পূর্ন চাকরী বিধি বিরোধী। বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি গোচর হলে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় ১১ সেপ্টেম্বর আবার বদলীর আদেশ দিয়ে পূনঃরায় প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এ আদেশের পর ইউএনও ফের বদলীর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
ইউএনও সিফাত আনোয়ার তুম্পা’র জন্মস্থান পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায়। তিনি বর্তমানে পটুয়াখালী সদরের আদালত পাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি ৩৪ তম প্রশাসন ক্যাডার। বদলী ঠেকাতে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের সাথে ফটো সেশন করেন। যাহা সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে ভইরাল হয়। তুম্পার বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের খবরে ওইসকল নেতাদের এনে মিষ্টি খাওয়ার উৎসব করেন। এর দাপটে তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সাথে আতাত করে বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছেন।
তুম্পার যত অপকর্মঃ তুম্পা তার নিজ জেলা পার্শ্ববর্তী পটুয়াখালী হওয়ায় যোগদানের পর থেকেই উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি উল কবির জোমাদ্দার ও সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান তনু তার বড় ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মিন্টুর সাথে আত্মীয়তার পরিচয় দিয়ে তৎকালীন সরকারের আওয়ামী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি নিজের টোলা ভারী করার চেষ্টা চালিয়েছেন। বিভিন্ন প্রকারের লোভ লালসা, ত্রান, টিআর ও জিআর দিয়ে কিছু সাংবাদিককে পক্ষে রেখেছেন তিনি। অন্যদিকে তুম্পার অনৈতিক কর্মকান্ড ও অনিয়মের কোন কোন তথ্য কোন সাংবাদিক সংগ্রহ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হেনস্থা করা হুমকি ও বিভিন্ন ধরনের হয়রানি করার ষড়যন্ত্র করতেন। তিনি তার অন্য দপ্তরের কর্মকর্তা ও তার অনুগত লোকদের বাদী করে কিছু সাংবাদিকদের নামে মামলা করিয়ে নিজের কাছে তদন্ত এনে তুম্পা ওই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একতরফা রিপোর্ট দেয়ার পায়তারা করেন।
সিফাত আনোয়ার তুম্পা ১৪ ফেব্রয়ারী ২৩ তারিখে প্রথম ইউএনও হিসাবে যোগদান করেন তালতলীতে। যোগদানের পর সরকারের মুজিব বর্ষের ঘর আশ্রায়ন প্রকল্প নির্মানের দায়িত্ব নিজে নিয়ে তার স্বামী ঠিকাদার আনোয়ার সিফাত এর মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করেন। নিজের তত্ত্বাবধানে কাজ করার জন্য কেহ কোন তদারকি করেননি। কোন সাংবাদিকও যাননি হেনস্থার হওয়ার কারনে। ঐ সকল আশ্রায়ন প্রকল্পের কাজ নিম্ন মানের হওয়ায় যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশ হলে সুবিধাভোগীদের ঘর নাদেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে পক্ষে নিয়ে নামমাত্র তদন্ত করেন। আশ্রায়নের কাজ শেষের পর বছর যেতে না যেতেই পলেস্তারা খসে পরে। এরমধ্যেই তিনি নামে বে-নামে জমি ক্রয় করেছেন শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে। সেখানে রিসোর্ট তৈরীর উপযোগী করে ভরাটও করেছেন সে জমি। এসকল কারনে তিনি এখান থেকে বদলী হতে চাচ্ছেনা।
এ বিষয়য়ে বরগুনা জেলা বিএনপি'র সাবেক সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, বিএনপি'র প্রয়াত মহাসচিব, এডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের এপিএস ওমর আবদুল্লাহ্ শাহীন বলেন, তিনি সিফাত আনোয়ার তুমপা আওয়ামী রেজিম বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। তার যত যুদ্ধ বিএনপি'র নেতা - কর্মি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মিদের বিরুদ্ধে, সে বলেছে বিএনপি নেতা - কর্মিদের বাড়িঘর নাকি নিলাম করে দিবেন এবং নেতা - কর্মিদের রাজনীতি করতে দিবেনা আমাদেরকে চৌদ্দ শিকের মধ্যে ঢুকাবেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের মাধ্যমে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে আমতলী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে তার তদন্ত আবার তার উপর এনে এবং তিনি তদন্তে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে বিএনপি'র নেতা - কর্মি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মিদের এলাকা ছাড়া করছেন। আর আওয়ামী রেজিমদের তালতলীতে পুনর্বাসন করছেন।
একাধিক স্থানীয়রা বলেন, এই শুভ সন্ধা সৈকতের পাশের জমি ৬ মাস আগে তালতলী উপজেলার ইউএনও কিনেছেন আমাদের এলাকার মনিরের কাছ থেকে ৫ কাঠা এবং ইসমাইল ফকিরের থেকে ৯ কাঠা মোট ৪০ শতাংশ জমি কিনেন। এক মাস হয়েছে এই জমিতে কাজ শুরু করেছেন ইউএনও বেকু দিয়ে মাটি কাটেন পরে বালু দিয়ে ভারাট করে রাখে। জমির চার দিকে পিলার বসিয়েছে এখানে ইউএনও রিসোর্ট করবে বলে শুনেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয়রা বলেন, প্রায় সময় দেখা যায় ইউএনও ও তার স্বামীকে নিয়ে কাজ দেখতে আসেন। ইউএনওর এই কাজ দেখাশোনা করেন স্থানীয় দুজন চৌকিদার রাসেল ও শাহআলম।
স্থানীয় চৌকিদার রাসেল ও শাহআলম বলেন, শুভ সন্ধা সৈকতের এখানে ইউএনও স্যারের কাজ তাই মাঝে মধ্যে আমরা দেখাশোনা করি। তবে স্থানীয় চৌকিদারের কাছে ইউএনওর কাজের আরো কিছু তথ্য জানতে চাইলে মুঠো ফোন কেটে দেয়।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুম্পা এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা অস্বীকার করে তিনি জানান, শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত এলাকায় তার স্বামী সহ কয়েকজন বন্ধুরা মিলে ৯ কাঠা রেকর্ডীয় জমি ক্রয় করেছেন। তিনি বলেন আমাদের পরিবার থেকে এরকমের জমি কেনার সমর্থ্য আমাদের আছে। আমার চাকরির সুবাদে আমার স্বামী সহ কয়েকজন বন্ধুরা মিলে এখানে এসে এই জমিটা দেখে তারা পছন্দ করে কিনেছে।
(এসএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪)