শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম। প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরোননি,অথচ হয়েছেন বিদ্যালয়ের সভাপতি। সেই স্কুলে নিয়োগ বাণিজ্যও করেছেন। হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এলাকার নিরিহ মানুষকে পুলিশ দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েও আদায় করেছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। এই নেতার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই হতে হতো ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের চোরকোল গ্রামের মৃত আব্দুল বারেকের ছেলে তিনি। তিনি মধুহাটি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য।

আশরাফুল ইসলাম জীবিকার তাগিদে কয়েক বছর মালয়েশিয়া ছিলেন। ২০১৫ সালে দেশে ফিরে আসেন। এসেই স্থানীয় এমপির ব্যক্তিগত সহকারীর সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে ২০১৬ সালে মধুহাটি ইউনিয়নের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। স্কুলে মোটা অংকের বিনিময়ে নিয়োগ, সাধারণ মানুষকে পুলিশের ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়, মাদক কারবারসহ ঝিনাইদহের পশ্চিমাঞ্চলে একহাতে নিয়ন্ত্রণ করেছে।

আশরাফুল ইসলাম এলাকায় ‘চাঁদাবাজ-ঘুষখোর’ মেম্বার নামে পরিচিত। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন গ্রামের ইটভাটা, ব্যবসায়ী কেউই তার নির্যাতন ও চাঁদাবাজীর হাত থেকে রক্ষা পায়নি। ইউপি সদস্য থাকাকালিন জোর করে গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির পদে বাগিয়ে নেন। এরপর নিজের নেশাগ্রস্ত ভাইয়ের চাকরি দেন ওই স্কুলে। তবে সে সময় ভয়ে কেউ মুখ না খুললেও আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর সবাই মুখ খুলতে শুরু করেছে।

এলাকাবাসী জানায়, আশরাফুল ইউপি সদস্য হয়েই চড়ে বেড়াতেন ৫ লাখ টাকার মোটরসাইকেলে, আরও ছিলো দামি প্রাইভেটকার। নিজ দলের বাইরের লোকদের বিভিন্ন নাশকতা মামলা দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিতের তিনি।

চোরকোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন বলেন, ‘লেখাপড়া না জানলেও আশরাফুল ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্কুলের সভাপতি হন। এরপর নেতাগ্রস্থ একজনকে নৈশপ্রহরী পদে চাকরী দেন।’

গরু ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আশরাফুল বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতো। রাতের অন্ধকারে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েও টাকা ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি। আশরাফুলের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ট।’

সালেহা বেগম নামে এক নারী বলেন, ‘আশরাফুল ও তার পালিত ক্যাডারদের সহযোগিতায় আমার স্বামীকে মেরে গরু কেড়ে নিয়েছিল।’

আশরাফুলের দেওয়া মিথ্যা মামলার শিকার আকিমুল নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করিয়েছে মেম্বর আশরাফুল। পুলিশ দিয়ে নানাসময় নানাভাবে হয়রানি করিয়েছে। পুলিশকে টাকা দিয়ে লোকজনের উপর অতাচারই ছিল তার একমাত্র কাজ।’

কবীর নামে একজন বলেন, ‘যখন সে মেম্বর হন তখন তার কিছুই ছিল না। পরে সে চাঁদাবাজী,মাদক ব্যবসা করে টাকার মালিক হয়েছে। অবৈধভাবে টাকা ইনকাম করে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।’

দোকানদার আসিফ বলেন, ‘আমরা সবাই তার কাছে জিম্মি। এখনও ভয়ে কেউ তার বিষয়ে মুখ খুলতে পারে না।’

গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন মেম্বর আশরাফুল। বক্তব্য নিতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

(এসআই/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪)