উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডাঃ এ.এম. মালিক ১০ সদস্যের প্রাদেশিক মন্ত্রীসভার নাম ঘোষণা করেন। মন্ত্রীরা হলেনঃ রংপুরের আবুল কাশেম, বগুড়ার আব্বাস আলী খান, বরিশালের আখতার উদ্দিন খান, ঢাকার এ.এস.এম. সোলায়মান, খুলনার মওলানা এ.কে.এম.ইউসুফ, পাবনার মওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, কুষ্টিয়ার নওয়াজেশ আহমদ, নোয়াখালীর ওবায়েদুল্লাহ মজুমদার, চট্টগ্রামের অধ্যাপক শামসুল হক ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আউংশু প্রু চৌধুরী। আউংশু প্রু চৌধুরী ব্যাতিত বাকী ৯ জন মন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেন।

শিবালয় থানায় পাকহানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর গেরিলা ঘাঁটিতে ব্যাপক হামলা চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে কয়েক ঘন্টা যুদ্ধ হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের চাপের মুখে পাকসেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এই সংঘর্ষে ১০ জন পাকসেনা ও ১১ জন রাজাকার নিহত হয়।

২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের একটি শক্তিশালী দলকে মেহারী গ্রামে এ্যামবুশ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের আকস্মিক আক্রমণে পাকসেনারা দিকবিদিক হারিয়ে ফেলে এবং ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। এই এ্যামবুশে ২১ জন পাকসেনা নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়।

২নং সেক্টরে একদল মুক্তিযোদ্ধা সায়েদাবাদের কাছে পাকসেনাদের একটি ঘাঁটিতে অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ২টি জীপ ও ১টি ৩টন গাড়ী ধ্বংস করে।

৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকহানাদারদের মসলিয়া ঘাঁটি আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়।

৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের পরাগপুর অবস্থানের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা কোন ক্ষতি ছাড়াই নিরাপদে ঘাঁটিতে ফিরে আসে।

মুক্তিবাহিনী মৌলভীবাজারের লুবাচরা এলাকায় পাকসেনাদের বিরুদ্ধে এক দুঃসাহসিক অভিযান চালায়। এতে ২০ জন পাকসেনা নিহত ও ৩০ জন আহত হয়। অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর ৩ জন বীর যোদ্ধা আহত হয়।

৮নং সেক্টরের গোজাডাঙ্গা সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর রাজাপুর বিওপি-র একদল সেনাকে গঙ্গাদেশ পুর এলাকায় এ্যামবুশ করে। এই এ্যামবুশে ২ জন পাকসেনা নিহত ও ৩ জন আহত হয়।

জয়বাংলা পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়:
মুক্তিযুদ্ধকে সফল সমাপ্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে উপদেশ দানের জন্য বাংলাদেশের চারটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটিতে যারা রয়েছেন, তাদের রাজনৈতিক মত ও পথে পার্থক্য থাকলেও সকলেই পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক। কমিটিতে ভাসানী ন্যাপের প্রতিনিধিত্ব করছেন মওলানা ভাসানী, বাংলাদেশ কম্যুনিষ্ট পার্টির প্রতিনিধিত্ব করছেন শ্রীমণি সিং, বাংলাদেশ জাতীয় কংগ্রেসের শ্রীমনোরঞ্জন ধর এবং মোজাফফর ন্যাপের অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। এছাড়া এই কমিটিতে আওয়ামী লীগের দু’জন সদস্যকে অন্তভর্’ক্ত করা হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই কমিটিতে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কমিটির বৈঠক আহ্বান ও পরিচালনা করবেন।

জয়বাংলা পত্রিকায় ‘জল্লাদরা ত্রাণ সামগ্রী যুদ্ধের কাজে লাগাচ্ছে’-শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় : পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক শাসক গোষ্ঠী ইউনিসেফ এবং জাতিসংঘের অপরাপর ত্রাণ-প্রতিষ্ঠান সমূহের যাবতীয় গাড়ী ও যানবাহন যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার লন্ডনস্থ মিশনের মাধ্যমে জাতিসংঘকে একথা জানিয়ে দিয়েছে।

জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থার ইউনিসেফ-এর একটি জীপে টিক্কা খানকে দেখা গেছে।
১৯৭০ সালের ভয়াবহ বন্যা ও ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সাহায্যের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র বিপন্ন মানবতার সেবায় যেসব ত্রান-সামগ্রী পাঠিয়েছিল, সেগুলোও সামরিক শাসকেরা যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করছে। দ্রুত রিলিপ প্রেরণের জন্য যাতায়াতের সুবিধার্থে নরওয়ে এবং স্কান্ডিনেভিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্র যে সব রবারের নৌকা, দ্রুতগামী লঞ্চ পাঠিয়েছিল, সেগুলোও ঐ একই কার্যে ব্যবহ্্রত হচ্ছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেনারেল নিয়াজী ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা সফর করেন। পরে তিনি কিশোরগঞ্জে তারাইলের রাজাকার আলবদদের সঙ্গে মিলিত হন।

পিডিপি প্রধান নূরুল আমিন ঢাকায় বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের অসামরিক সরকার গঠন করা হলেও আমরা এখনো বিপদমুক্ত হইনি। দুশমনের দল এখনো আমাদের চারপাশে চলাফেরা করছে।

বাংলাদেশ ফের্স হেডকোয়ার্টার মুজিবনগর গণসংযোগ বিভাগের ‘যুদ্ধ বিষয়ক বুলেটিন’-এ বলা হয় : মহেন্দ্রনগরে মুক্তিবাহিনী ও পাকসৈন্যদের মধ্যে যুদ্ধে ১ জন পাকসৈন্য নিহত হয়।
রংপুরের বনতারা এলাকায় মুক্তিবাহিনী পাকসৈন্যদের ওপর গুলি চালায়। এতে ৫ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। এর অব্যবহিত পরই পাকসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এক তীব্র যুদ্ধে ৮ জন পাকসেনা নিহত হয়।

গোলাম আজম মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল এডুকেশন সেন্টারে ট্রেনিংরত রাজাকারদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘একমাত্র মুসলিম জাতীয়তায় পূর্ণবিশ্বাসী ব্যাক্তিরাই পাকিস্তানের হেফাজতের জন্যে জীবন দান করতে পারে এবং সত্যিকার মুসলমানরাই যে পাকিস্তানের প্রকৃত সম্পদ, এই সার্টিফিকেট পাকিস্তানের দুশমনরাই তাদের কার্যকলাপের দ্বারা এবার প্রদান করেছে।

তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

(ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪)