বঙ্গবন্ধু কন্যা হাসিনা বাংলাদেশে অবশ্যই ফিরবেন
ফজলুল বারী
শেখ হাসিনার লাল পাসপোর্ট, ভারতে ভিসা স্ট্যাটাস এসব নিয়ে একেকজনের ঘুম নেই! ভারত কেনো তাকে আশ্রয় দিলো, পয়তাল্লিশ দিন পেরিয়ে গেলে তিনি কী করে ভারত থাকবেন, এ চিন্তায় একেকজন প্রায় কেঁদেই ফেলছেন! আমি তাদের লেখা পড়ি আর কথাবার্তা শুনে মনে মনে হাসি আর বলি, শেখ হাসিনার শাসনামলে এরা দেশে কী দারুণ অভিনয় করে কাটিয়েছেন! এখন লেজ বেরিয়ে পড়েছে! এই লেজ আগামীতে কাটাও পড়বে।
শেখ হাসিনাকে চক্রান্ত করে গণভবন থেকে অপসারন করা হয়েছে। এরপর তাকে বাধ্য করা হয়েছে দেশত্যাগে। ইনারা এটিকে বড় সোহাগে উচ্চারন করেন পালিয়ে গেছেন! আপনি কোথাও পালালে নিজের গাড়ি বা কোন যানবাহন ব্যবহার করেন! আর শেখ হাসিনাকে ভারতে পাঠানো হয়েছে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে। ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে দিল্লি যাওয়া সম্ভব নয়। এরজন্য পিছু পিছু গেছে বিমান বাহিনীর একটি হারকিউলিস বিমান। সংগে গেছেন সেনা ও বিমান বাহিনীর সাত কর্মকর্তা। একজন পালিয়ে গেলে তার সংগে এমন হেলিকপ্টার, বিমান সহ সাত কর্মকর্তা যান, তাইনা? সেই হেলিকপ্টার, বিমান, কর্মকর্তারা আবার নিরাপদে দেশে ফিরে আসে। এত সরল বুদ্ধি নিয়েও আপনাদের যে রাতে ঘুম হয় এটিতো চমৎকার ব্যাপার!
বিদেশে থাকায় এরা শেখ হাসিনাকে পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্ট মারতে পারেনি। মারতে চেয়েও আল্লাহর দয়ায় ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় প্রানে বেঁচে গেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। এবার সেনাবাহিনী দেখলো শেখ হাসিনা দেশে থাকলে তাকে মেরে ফেলা হতে পারে। এরজন্য তারা তাঁকে নিরাপদে ভারতে পৌঁছার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সামরিক বাহিনী কেনো তাঁর জীবন রক্ষা করলো এটি বলতে, লিখতে কিংবা প্রশ্ন করতে কী আপনাদের বুক কাঁপে?
অত:পর জানা গেলো শেখ হাসিনার সংগে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার, বিমান, সাত সামরিক কর্মকর্তা কেনো গিয়েছেন! কারন তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি। প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে ভারত যাওয়ায় হেলিকপ্টার, হারকিউলিস বিমান, সাত কর্মকর্তা যাওয়া অশুদ্ধ হয়নি। এমন তাড়াহুড়ায় তাকে গণভবন থেকে বের করা হয়েছে যে পদত্যাগ করানোর কথা সবাই ভুলেই গেছেন! অথবা কৌশলে পদত্যাগের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। পদত্যাগ পত্র থাকলে দেশি মুন্সিরা কবে তা প্রকাশ করতেন! রাষ্ট্রপতির ভাষনে আছে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি তা গ্রহন করেছেন! রাষ্ট্রপতিকে যা লিখে দেয়া হয়েছে তা তিনি পড়েছেন! কেউ কিছু লিখে দিলে রাষ্ট্রপতিকে তা পড়তে হয়। আর এখানে তো পিছনে তাঁর তাক করা বন্দুক ছিল। বিশাল একটি পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষরের ছবি ব্যবহার করে বলা হয়েছে এটিই নাকি পদত্যাগ! মানে বাংলাদেশের যখন যে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন সবাই এই বিশাল বইতে তা লিখেছেন! আসলেই আপনাদের মস্তিষ্ক কী দারুণ উর্বর!
সেই মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে ভারতের সংগে আওয়ামী লীগের সখ্য কোন লুকোচাপার বিষয় নয়। তাই এবারও ভারতের সর্বদলীয় বৈঠকে সেই বিশেষ পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে দেশটির নিরাপদ আতিথেয়তা দেয়া হয়েছে। যেমন পাকিস্তান গেলে আপনাদেরও এমন আতিথেয়তা দেয়া হবে। যদি যেতে পারেন। পাকিস্তান তাদের জন্য জানপ্রান দেয়া বিহারীদের একজনকেও নেয়নি। আপনাদের দেশটা এমনই নিষ্ঠুর!
ভারতকে শেখ হাসিনার বিষয়ে নতুন কোন সিদ্ধান্ত নিতে গেলে আবার সর্বদলীয় বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভারত একটি বহু রাজ্য ভিত্তিক যুক্তফ্রন্টীয় দেশ। এরজন্য এক রাজ্য পশ্চিমবংগের আপত্তির কারনে তারা বাংলাদেশকে তিস্তার পানিও দিতে পারেনি। এটা আপনাদের জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্ল্যাক বলের মতো। কোন একজন সদস্য নতুন কোন সদস্য আবেদন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্ল্যাক বল প্রয়োগ করলে সে আর প্রেসক্লাবের সদস্য হতে পারে না। অতএব শেখ হাসিনার ব্যাপারে সর্বদলীয় সর্বসম্মতভাবে ভারত কী সিদ্ধান্ত নেবে না নেবে তা নিয়ে আপনাদের কান্না না করলেও চলবে।
এখন লাল পাসপোর্টের পয়তাল্লিশ দিনের ভিসা প্রসংগে আসি। শেখ হাসিনা কী বাংলাদেশ ভারতের কোন স্থল বা বিমান বন্দর দিয়ে ভারতে গেছেন? কেউ কোন স্থল বা বিমান বন্দর দিয়ে গেলেই তার পাসপোর্টে এক্সিট এবং এট্রি সিলছাপ্পর পড়ে। বিশেষ পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার প্রান বাঁচাতে যেভাবে হেলিকপটারে ভারত পাঠানো হয়েছে সেখানে প্রথম আগরতলা বা পরে দিল্লির কোন ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট দিয়েতো সে দেশে যাননি। কাজেই তাঁর তখন পাসপোর্ট কী রঙের ছিল, ভিসার মেয়াদ কতদিনের এসব প্রসংগতো এখানকার কাঁদো কাঁদো লোকজনের উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা।
আর বাংলাদেশের মোটা বুদ্ধির ইউনুস সরকারের লোকজন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ভারতে নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন! পাসপোর্ট বাতিলের পর তাকে রাষ্ট্রবিহীন করে দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রবিহীন লোকজনকে শরণার্থী মর্যাদায় আশ্রয় দেয়া হয়। যেটা বিলাতে তারেক রহমানকে দেয়া হয়েছে। তারেক রহমানকে কী আওয়ামী লীগ সরকার বিলাত থেকে আনতে পেরেছে? কোন শরণার্থীকে তার দেশে ফেরত পাঠালে জীবন বিপন্ন হতে পারে এমন আশংকা থাকলে তাকে কেউ জোর করে পাঠাতে পারে না। এটি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক আইনের পরিপন্থী। ভারত সরকার তার সর্বদলীয় অতিথিকে কখনোই পাঠাবেন না। বা পাঠাতে চাইলেও পারবে না। সে দেশে এ নিয়ে মামলা হয়ে যাবে। তারেক রহমানকে যে বিলাত রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে এটা কী তারা ঘোষনা দিয়ে বলেছে? এটা কোথাও ঘোষনা দিয়ে বলা হয় না। ভারতও দেবে না। এটাই সাধারন রীতি।
যদিও শেখ হাসিনাকে আনা বিচারের সম্মুখীন করা, ফাঁসি দেয়া এদের খুব দরকার! কারন শেখ হাসিনা ফিরলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে কার কী সমস্যা হবে এটি মোহাম্মদ ইউনুসসহ অনেকে ভালো জানেন। ইউনুস সাহেবকে আমেরিকা আশ্রয় দেবে। অন্যদের আশ্রয় হতে পারে বনে বাদাড়ে। শেখ হাসিনার নামে ঢালাও হত্যা মামলা দিয়ে এরমাঝে তাদের নিয়তকে খেলো করা হয়েছে!
শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কাকে কিভাবে হত্যা করে ইস্যু বানানো হয়েছে সে তদন্ত তো আগে হবে। দেশের মুক্তিযুদ্ধকে নির্বাসনে পাঠিয়ে আবু সাঈদের কবরে বীর শ্রেষ্ঠ সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন! তার ড্রাগ টেস্ট কী করা হয়েছে? ড্রাগ টেস্ট যেকোন সময় হাড়গোড় পরীক্ষা করে এখন নিশ্চিত করা যায়। একদিন এসব টেস্ট হবে। অস্ট্রেলিয়ায় যে কোন অস্বাভাবিক মৃত্যুর ড্রাগ টেস্ট হয়। এভাবে পুলিশ মেরে পুলিশকে বেপরোয়া করার বিচার। পুলিশের বিরুদ্ধে এগ্রেসিভ বিহেভিয়ার কোন সভ্য দেশ অনুমোদন করে না।
পুলিশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আক্রমন করে এই বাহিনীর মনোবল ভেংগে দেয়া হয়েছে। আর সবকিছুতে দোষ দেয়া হচ্ছে শেখ হাসিনাকে! আগে তো তেল মারতে এমন করতেন যে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও লজ্জা পেতেন। এখন ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে নওমুসলিম সাজতেও আপনাদের লজ্জা করে না!
বলি শেষ কথা! বঙ্গবন্ধু কন্যা হাসিনা বাংলাদেশে অবশ্যই ফিরবেন। আপনারাই তখন পালাবার পথ পাবেন না। এ নিয়ে এখনই আহাজারি শোনা যায়। মনে রাখবেন, আওয়ামী লীগ একদিনে সৃষ্টি হয়নি। আওয়ামীলীগের বিনাশ যারা চিন্তা করেন, তাদের বসবাস মূলত মূর্খের স্বর্গে।
লেখক : অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক।