‘৭২ এর সংবিধানে দেশের মানুষের অধিকার সমুন্নত রাখা হয়নি’
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল : বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগ অন্য দেশের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ৭২ এ সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল। সে সংবিধানে দেশের মানুষের অধিকার সমুন্নত রাখা হয়নি। সেই সংবিধান প্রণয়ন করে আওয়ামীলীগ ৫০ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের অধিকার হরণ করেছে।
অন্য দেশের প্রেসক্রিপশনে প্রণীত সংবিধানে আমাদের দেশ চলতে পারেনা। দেশের হাজার বছরের ইতিহাসকে সামনে রেখে বাংলাদেশের সংবিধান তৈরি হওয়া উচিত।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে জেলা খেলাফত মজলিস আয়োজিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সকল শহীদ ও আহতদের
স্মরণে দোয়া এবং নৈরাজ্যবাদ বিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের এতো এতো শক্তি ছিল- শেখ হাসিনার পালিত শক্তি। সেই শক্তিবান লীগেরা রাতের অন্ধকারে সংখ্যালঘুদের উপর কালনাগিনী হয়ে ছোবল মারতো আবার দিনের আলোতে তারাই ওযা হয়ে ঝাড়তে আসতো। এই নাটক করেছে আওয়ামী লীগ। এই নাটকের কলা-কুশীলররা এখন বাংলাদেশের দৃশ্যপটে নাই। এর জন্য এখন নাটকও নাই। এখন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা ভালো আছেন। তাদের মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় আর হামলা হয় না। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি-ঘরে কেউ হামলা চালায় না। কারণ আক্রমণকারী আওয়ামীলীগাররা এখন পালিয়ে রয়েছে। ওরা যদি আবার ঢুকতে পারে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা দিয়ে অরাজকতা শুরু করবে। সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘর জ্বালাবে, হিন্দুদের মূর্তি ভাঙবে- এগুলো করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করবে। তাই সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে।
মামুনুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ একটি মোনাফেক শক্তির নাম। আওয়ামীলীগকে বাংলাদেশে রাজনীতিতে আর পূনর্বাসিত হতে দেওয়া হবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে নজির বাংলাদেশে রয়েছে- এটাকে অব্যাহত রাখতে হবে। শেখ হাসিনার রাজনীতি ছিল বিভাজনের রাজনীতি। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তার বিভাজনের রাজনীতি পরাজিত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। এই ঐক্য বাংলাদেশে আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে এদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। আপনারা পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারীর চাতাকল থেকে মুক্ত হয়েছেন। আমাদের সংগ্রাম আরও বাকি রয়েছে। ফ্যাসিবাদের অবশিষ্ট শক্তিকে বাংলাদেশ থেকে উৎখাত না করা পর্যন্ত এদেশের আমাদের কেউ নিরাপদ নয়। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
এই ঐক্য আমাদের ধরে রাখতে হবে। ঐক্য ধরে রাখতে না পারলে বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত ইসলাম আমরা কেউ নিরাপদে থাকতে পারবো না। সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে তিনি বলেন- দেশের ৯০ ভাগ মুসলিমদের চেতনা, তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে যদি সম্মান জানাতে না পারেন। তাহলে এদেশে কোনো দিনও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবস্থান ভালো রাখা যাবে না।
সম্প্রীতির সকল জায়গাগুলো আমরা সম্মিলিতভাবে সংরক্ষণ করবো। আগামির বাংলাদেশ হবে সম্প্রীতির বাংলাদেশ, ইনসাফের বাংলাদেশ, বৈষম্যহীন এক বাংলাদেশ। অনলবর্ষী ইসলামী এ বক্তা বলেন, ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে মুসুলমানদের রক্তের সঙ্গে উপহাস করা হয়েছিল। তখন হেফাজতে ইসলাম প্রতিবাদ করায় আওয়ামীলীগ সরকার হেফাজতের ২০-৩০ জন নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। বাংলাদেশ থেকে আল্লাহ পাক শেখ হাসিনাকে অপসারণ করে আমাদের প্রাণের বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। কিন্তু দেশে পরাজিত শক্তি বসে নেই। কথিত স্বৈরাচার আবার বাংলাদেশের মানুষের বুকের উপর ছোবল মারার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে। ৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে আমরা আবার সোনার বাংলাদেশ পেয়েছি।
এদিন মামুনুল হক গোপালগঞ্জের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।
জেলা ক্বওমী ওলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা আব্দুল আজিজের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয়
সুরা সদস্য মুফতি আশরাফুজ্জামান, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমাদ ও মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, পৌর বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান আলীম, খেলাফত মজলিসের জেলা শাখার সভাপতি হাফেজ এনামুল হাসান প্রমুখ।
(এসএএম/এএস/সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪)