অবশেষে হাজী জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে সাময়িক অব্যাহতি
সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : ভৈরবে হাজী জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে ভৈরব উপজেলা প্রশাসন। তার অবর্তমানে সহকারী প্রধান শিক্ষক শাফায়াত হোসেনকে (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক ও আজিজুল হককে (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে সাময়িক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. রিদওয়ান আহমেদ রাফি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর এলাকায় অবস্থিত হাজী জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়টি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে থেকেই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ এনে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। সরকার পতনের পর থেকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অহিদুর রহমানের দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে কয়েকদিন যাবত স্কুলের ছাত্ররা মানববন্ধন, মিছিল, সমাবেশ করে যাচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ডুবতে বসেছে। দুর্নীতিতে জড়িত ছিল ১২ বছর যাবত দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদ সভাপতি লোকমান হোসেন।
এদিকে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের দাবি গত ১২ বছরে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে নিয়ে কয়েক কোটি টাকা দুর্নীতি করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ ঘটনায় ১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করেন। এছাড়াও শিক্ষকদের বিদ্যালয়টি পরিচালনায় অনীহা থাকায় প্রধান শিক্ষককে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছেন।
অপরদিকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার মনিরুজ্জামানকে আহŸায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহŸায়ক উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার মনিরুজ্জামান তরফদার বলেন, তদন্তের জন্য আমরা বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। কৃষি অফিসার ও শিক্ষা অফিসারসহ সার্বিক তদারকি চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউএনও স্যারের কাছে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. রিদওয়ান আহমেদ রাফি জানান, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি করে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনাস্থায় ও ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক অহিদুর রহমানকে প্রাথমিকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অফিসিয়ালি কার্যক্রম চালুর রাখার জন্য সহকারী প্রধান শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক অহিদুর রহমান জানান, সম্পূর্ণ ঘটনায় উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং সাজানো। মূলত স্কুল থেকে আমাকে বের করে দেয়াই উদ্দেশ্য। আমি দীর্ঘদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে সুনামের সহিত স্কুলটি হাইস্কুল থেকে কলেজে রূপান্তরিত করেছি। এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মানুষ এ উন্নতি দেখে ঈশ্বান্বিত হয়ে মূলত আমার পিছনে আমার প্রিয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেলিয়ে দিয়েছে। দোষ যদি আমার হয় তাহলে এই স্কুলটির প্রত্যেক শিক্ষকই এবং ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্যেই দায়ী হবে। কিন্তু তা না করে শুধুমাত্র আমাকেই দায়ী করা হচ্ছে।
(এসএস/এএস/সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪)